দত্তাবাদে আগুন, বাসিন্দাদের সচেতনতা নিয়ে প্রশ্ন

পুলিশ জানায়, এ দিন সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ স্থানীয় বাসিন্দা তপন অধিকারীর বাড়িতে গ্যাস লিক করে আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের ১৯টি ঘরে। ১৪টি ঘর ভস্মীভূত হয়ে যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:২৬
Share:

ভাসমান: পুকুরে সিলিন্ডার ফেলে দিয়েছেন স্থানীয়েরা। রবিবার, দত্তাবাদে। ছবি: শৌভিক দে

পিছনে পুকুর, দু’পাশে ঘর। সামনের রাস্তা গিয়ে ধাক্কা মারছে একটি বাড়ির দেওয়ালে। ফাটছে গ্যাস সিলিন্ডার। আগুনের ভিতর থেকে বেরোনোর একটি মাত্র সঙ্কীর্ণ রাস্তা। সেখানেও দু’জন মানুষ পাশাপাশি হাঁটতে পারে না। আগুনের সামনে সল্টলেকের দত্তাবাদের পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ, রবিবার সকালে তা বোঝা গেল। দুর্ঘটনা রাতে ঘটলে ফল মারাত্মক হতে পারত বলেই মনে করছেন স্থানীয়েরা। বিধাননগর পুরসভার আধিকারিকদের একাংশের অভিযোগ, নিয়ম না মেনে বাড়ি ভাড়া দেওয়ায় এমন পরিস্থিতি। ঘুপচি ঘরে গ্যাসে রান্নার ব্যবস্থা প্রতি ঘরেই বিপদের সম্ভাবনা তৈরি করে রেখেছে। ফলে এর পরেও বাসিন্দাদের হুঁশ ফিরবে কি না, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়ে।

Advertisement

পুলিশ জানায়, এ দিন সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ স্থানীয় বাসিন্দা তপন অধিকারীর বাড়িতে গ্যাস লিক করে আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের ১৯টি ঘরে। ১৪টি ঘর ভস্মীভূত হয়ে যায়। ওই বাড়িটির মালিক তাপস সিংহ বলেন, ‘‘তপনের স্ত্রী সকালে যখন চা করছিলেন, তখন গ্যাস লিক করে পাইপে আগুন ধরে যায়। তপন অসুস্থ। সাহায্যের জন্য স্ত্রীকে লোক ডাকতে বলেন। কিন্তু ওঁর স্ত্রী কানে কম শোনেন। তাই তপনের কথা বুঝতে পারেননি।’’ তাঁদের উল্টো দিকের বাড়ির বাসিন্দা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী আরতি চৌধুরী জানান, তপনবাবুর চিৎকার শুনে তিনি বাইরে বেরিয়ে দেখেন দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। মুহূর্তের মধ্যে তপনের বাড়ি থেকে আগুন আরতিদের ঘরে ছ়ড়িয়ে পড়ে। তার পরে অন্যান্য ঘরেও। সাম্প্রতিক সময়ে দত্তাবাদে এত বড় আগুন লাগেনি। আরতির মা শিবসাগর চৌধুরী বলেন, ‘‘সামনের মাসে বড় মেয়ের আশীর্বাদ। ওর বিয়ের টাকা, গয়না আসবাব কিনেছিলাম। সব পুড়ে গিয়েছে।’’

আগুনের গ্রাস থেকে বাঁচতে একটি পুকুরপাড়ে এসে জড়ো হন প্রায় শ’দুয়েক মানুষ। কিন্তু সিলিন্ডার ফেটে আগুন সেখানে আসতে শুরু করলে তাঁরা বাধ্য হন সরে যেতে। স্থানীয় সূত্রের খবর, দুর্ঘটনাস্থলে একের পর এক সিলিন্ডার ফাটায় মহিলা, শিশুদের স্থানীয় থানের মাঠে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পাড়ার ছেলেরা পুকুর থেকে জল তুলে আগুন নেভানোর কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। আতঙ্কে ঘরে রাখা গ্যাসের সিলিন্ডার পুকুরে ফেলে দেন বাসিন্দারা। এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, দু’টি পুকুরে প্রায় ৩৬টি সিলিন্ডার ভাসছে। স্থানীয় বাসিন্দা রিনা যাদব বলেন, ‘‘সিলিন্ডার ফেটে আগুনের হলকা আসছে। আমাদের বাড়ির পিছনের দিকে যাওয়ার জায়গা নেই। সামনে আগুনের তাপ গা পুড়িয়ে দিচ্ছে। ওই তাপে দু’টি বাইক পুড়ে গিয়েছে।’’

Advertisement

দমকলের চারটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে গিয়ে সঙ্কীর্ণ রাস্তায় পাইপ ফেলে এবং পুকুরপাড়ে পাম্প বসিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে।

স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর নির্মল দত্ত জানান, ওয়ার্ড অফিসে ১৯টি পরিবারের ১০৪ জন সদস্যের থাকা-খাবারের ব্যবস্থা হয়েছে। বিধাননগরের বিধায়ক তথা দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু বলেন, ‘‘সচেতনতার প্রশ্ন নিশ্চয় রয়েছে। দত্তাবাদের জমি পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের। মানুষ জায়গা ছাড়লে তাঁদের জন্য বাংলার বাড়ি প্রকল্পে ঘর দেওয়া নিয়ে ভাবনাচিন্তা হচ্ছে। আপাতত আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত সব ঘর তৈরি করে দেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন