অগ্নিদগ্ধ: সেই রেস্তোরাঁর রান্নাঘর। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
ক্ষণিকের ভুল। তাতেই মৃত্যু হল এক জনের। জখম তিন জনের মধ্যে এক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাকিদের আঘাত গুরুতর।
সোমবার বিরাটি মোড়ের কাছে জাতীয় সড়কের পাশে একটি রেস্তোরাঁয় গ্যাসের সিলিন্ডার থেকে আগুন লেগে এই ঘটনা ঘটে। মৃতের নাম রবীন রাউত (৫৫)। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রেস্তোরাঁর প্রধান শেফ দীপঙ্কর নাথ (৩৫)।
পুলিশ জানায়, এ দিন বেলা সওয়া ১১টা নাগাদ রেস্তোরাঁয় দোতলার রান্নাঘরে রান্না করছিলেন দীপঙ্করবাবু। গ্যাস শেষ হয়ে যাওয়ায় তিনি রবীনকে সিলিন্ডার বদলে দিতে বলেন। রবীন যখন সিলিন্ডার বদল করতে যান, তখন অন্য চুল্লিতে রান্না চলছিল। নতুন সিলিন্ডার লাগানোর সময়েই গ্যাস বেরিয়ে হঠাৎ আগুন ধরে যায়। সঙ্গে সঙ্গেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘটে বিস্ফোরণও। অগ্নিদগ্ধ হন রবীন ও দীপঙ্কর।
রেস্তোরাঁর বাকি কর্মীরা অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা অনেক পুরনো হওয়ায় বিশেষ লাভ হয়নি। বিস্ফোরণের ফলে গোটা রেস্তোরাঁর তাপমাত্রা বেড়ে যায়। বারোটার কিছু আগে কামারহাটি ও মধ্যমগ্রাম দমকলের দু’টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে যায়। দোকানের কাচ ভেঙে ধোঁয়া বাইরে বার করা হয়। আধ ঘণ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে দমকল।
আগুন লাগার পরে রেস্তোরাঁয় থাকা ক্রেতারা দ্রুত বাইরে বেরিয়ে যেতে সমর্থ হন। রান্নাঘরের কর্মীদের কোনওমতে বার করা হয়। বারাসত হাসপাতালে রবীনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। দীপঙ্কর আর জি করে ভর্তি। হাসপাতাল সূত্রে খবর, দীপঙ্করের শরীরের অধিকাংশই পুড়ে গিয়েছে। রবীনের বাড়ি বসিরহাটে। নিউ ব্যারাকপুরে একটি বাড়িতে ভাড়ায় থাকতেন তিনি।
আরও পড়ুন: বৃষ্টিভাগ্য ফেরাতে ভরসা নিম্নচাপই
ঘটনাস্থলে গিয়ে কামারহাটি দমকলের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক সমীর সাহা রেস্তোরাঁর মালিক নির্মল মণ্ডলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পরে জানান, রেস্তোরাঁয় আগুন নেভানোর যে সব যন্ত্র ছিল, সেগুলি মেয়াদ-উত্তীর্ণ ছিল। রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা সংক্রান্ত শংসাপত্র দেখাতে পারেননি বলে অভিযোগ।
এই ঘটনায় দমকলের পক্ষ থেকে ওই রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় গাফিলতির অভিযোগ করা হয়েছে। তার ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
একটি গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থার এক আধিকারিকের অভিযোগ, বিরাটি, দমদমের রেস্তোরাঁগুলির বেশির ভাগই সিলিন্ডার ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিয়ম মানে না। অনেক ক্ষেত্রে বাড়িতে ব্যবহৃত রান্নার সিলিন্ডারই বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে আবার দেখা যাচ্ছে সিলিন্ডার শুইয়ে রাখা হয়। ফলে গ্যাস থেকে যায়। সিলিন্ডার পরিবর্তনের সময়ে সেই গ্যাস এসে বিপত্তি ঘটাতে পারে। গ্যাস সিলিন্ডার পাল্টানোর সময়ে বাধ্যতামূলক ভাবে গ্যাসের সংযোগ বন্ধ রাখতে হয়। বন্ধ রাখতে হয় অন্য চুল্লি, আশপাশের আগুনও। এই ঘটনার ক্ষেত্রেও নিয়ম ভেঙেই গ্যাস পরিবর্তন করা হয়েছে। যার জেরেই বিপত্তি বলে দাবি দমকলের।