অগ্নিকাণ্ডের পরে। (ডান দিকে) মল বন্ধের নোটিস। রবিবার। — নিজস্ব চিত্র
ছুটির সকালে স্ত্রীকে নিয়ে সাউথ সিটি মলে গিয়েছিলেন আজাদগড়ের বাসিন্দা, ইঞ্জিনিয়ার প্রভাত বাগচী। মাল্টিপ্লেক্সে রবিবার সকাল ৯টার শো। সিনেমা সবে শুরু হয়েছে। আচমকা স্ক্রিন অন্ধকার। সঙ্গে ঘোষণা— ‘আপৎকালীন পথ দিয়ে সকলে বেরিয়ে যান, আগুন লেগেছে!’ মাল্টিপ্লেক্সে তখন জনা সত্তর দর্শক।
প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের ওই মলে প্রথমে চারতলায় ফুড কোর্টের সাফাইকর্মীরাই দেখেন, পিৎজার বিপণির কাছে সিলিং থেকে কালো ধোঁয়া বেরোচ্ছে। ওই জায়গাতেই সার সার চেয়ার-টেবিল। তবে অত সকালে ফুড কোর্ট খোলেনি। ফলে ফাঁকাই ছিল সব। ফায়ার অ্যালার্ম বেজে উঠতেই শুরু হয়ে যায় কর্মী ও নিরাপত্তারক্ষীদের ছোটাছুটি। তখন সকাল সওয়া ৯টা। তবে ঘটনায় কেউ হতাহত হননি।
প্রথমে কর্মীরাই মলের অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনতলা-চারতলা ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়। তখন আর সাউথ সিটির কর্মীরা ঝুঁকি নেননি। এর পরে দমকলের ২১টি ইঞ্জিন প্রায় দেড় ঘণ্টায় আগুন নেভায়। আগুন টের পাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই সকলকে বাইরে আনা সম্ভব হয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডের পরে এ দিন থেকেই ওই মল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দমকল ও সিইএসসি-র অনুমতি পেলে তবেই তাঁরা মল খুলবেন বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। সাউথ সিটি মলের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার দীপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘রবিবার-সহ মল বন্ধ থাকার দিনগুলোয় যাঁরা মাল্টিপ্লেক্সে ছবির টিকিট যাঁরা কেটেছিলেন, তাঁরা সাত দিনের মধ্যে টাকা ফেরত পাবেন।’’
মলের চারতলা জুড়ে খাবারের দোকান, বেস কিচেন। এবং পুরোটাতেই ফল্স সিলিং। দমকলকর্মীরা সিলিংয়ের চার জায়গায় আগুন দেখতে পান। দমকলের কর্তা গৌরপ্রসাদ ঘোষ বলেন, ‘‘মলটি কাচে ঘেরা, ফলে ধোঁয়া ভিতরেই পাক খেতে থাকে।’’ পরে কাচের দেওয়াল ভেঙে ধোঁয়া বার করা হয়।
বিকেল ৪টে নাগাদ ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থলে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করেন। তবে পুলিশ সূত্রের খবর, তাঁরা আগুনের উৎস নিয়ে কিছু বললেনি। পুলিশ ও দমকলকর্মীদের একাংশ প্রাথমিক ভাবে মনে করছেন, শর্ট সার্কিট থেকেই আগুন লেগেছিল।
এ দিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে দমকলমন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কী কারণে আগুন লাগল, তা অনুসন্ধান করে দেখা হবে। সাউথ সিটির নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও কাজ করেছে বলে মনে হয়।’’ তবে তাঁর বক্তব্য, এই ধরনের অগ্নিকাণ্ড সব সময়েই সাবধানতার দিকটাকে নতুন করে খতিয়ে দেখার অবকাশ তৈরি করে। এ ক্ষেত্রেও সাউথ সিটি নিয়ে দু’-এক দিনের মধ্যেই দমকল, পুলিশ, পুরসভা ও মল-কর্তৃপক্ষ বৈঠকে বসবে। তাতেই সাউথ সিটি খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
অগ্নিকাণ্ডের জেরে ঘণ্টা দুয়েক যাদবপুর থানা থেকে টালিগঞ্জ ফাঁড়ির দিকে যাওয়ার জন্য প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের এক দিক বন্ধ রাখা হয়।