ধোঁয়ার গ্রাসে সেই গুদাম। সোমবার, বেলেঘাটায়। — নিজস্ব চিত্র
গলি। তস্য গলি। দমকলের গাড়ি তো দূরস্থান, ছোট গাড়িও সেখানে ঢোকানো যায় না। ঘন জনবসতিপূর্ণ বেলেঘাটা মেন রোডে এমনই একটি কাগজের গুদামে সোমবার দুপুরে আগুন নেভাতে গিয়ে হিমশিম খেলেন দমকলকর্মীরা।
গলি ছোট থাকায় দমকল এসেও দ্রুত প্রবেশ করতে পারেনি। এমনকী, মূল রাস্তা থেকে কিছুটা দূরে গুদামটি হওয়ায় জল নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়েন দমকলকর্মীরা। শেষে গুদামের পিছনে একটি বহুতলের চত্বরে প্রবেশ করে সেখানকার জলাশয়ের জল ব্যবহার করে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। প্রায় ঘণ্টা দু’য়েকের চেষ্টায় দমকলের ১০টি ইঞ্জিন আগুন আয়ত্তে আনে। তবে ঘটনার সময়ে কারখানা এবং গুদামে কেউ না থাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। প্রাথমিক তদন্তে দমকল আধিকারিকেরা জানান, আগুন লাগার কারণ জানা যায়নি। শহরের মধ্যে এমন ঘন বসতিপূর্ণ এলাকায় দাহ্য পদার্থের গুদাম এবং কারখানা কী ভাবে চলতে পারে, এই ঘটনার পরে আবারও তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশ জানায়, সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত গুদামের মালিকের খোঁজ মেলেনি।
এ দিন ঠিক কী হয়েছিল? দমকল সূত্রের খবর, বেলেঘাটা মেন রোডে কাগজের বাক্স তৈরির কারখানার পাশেই টিনের চাল দেওয়া প্রায় ১৫০০ বর্গফুটের ঘরে পাঁচটি কাঠের পার্টিশন। ওই অংশগুলিতে স্তূপ করে রাখা পিসবোর্ড, কাগজ, আঠা-সহ নানা দাহ্য রাসায়নিক। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর দেড়টা নাগাদ হঠাৎই গুদামটি থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায়। মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। বাড়তে থাকে ধোঁয়াও। গুদামের ঠিক পিছনের বহুতলের বাসিন্দারা আতঙ্কে নেমে আসেন রাস্তায়। আগুন নেভাতে হাত লাগান পাড়ার অন্য বাসিন্দারাও। খবর যায় দমকলে। কিন্তু রাস্তা সরু হওয়ায় দমকল দ্রুত পৌঁছতে পারেনি।
বহুতলের এক বাসিন্দা দিলীপ মণ্ডল বলেন, ‘‘সরু রাস্তা দিয়ে দমকল পৌঁছতে পারছে না দেখেই আমরা বহুতলের গেট খুলে দিই। এখানে রাস্তাও চওড়া। অনেকগুলি দমকলের গাড়ি একসঙ্গে ঢুকে যাতে বহুতলের চত্বরের পুকুর থেকে জল নিতে পারে, সেই ব্যবস্থা করেছিলাম। এলাকার অন্য লোকজনও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন।’’ আগুন লাগার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর অলোকানন্দা দাস।
কিন্তু ঘন বসতিপূর্ণ অঞ্চলে কী ভাবে এই ধরনের দাহ্য পদার্থ মজুত রাখার গুদাম এবং কারখানা চলার অনুমতি দেয় প্রশাসন?
কলকাতা পুর-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট ভাবে এই ধরনের ঘন বসতিপূর্ণ জায়গায় গুদাম বা কারখানার অনুমতি দেওয়া হয় না। তা সত্ত্বেও অনেকেই পুর-আইন না মেনে ঘরগুলিকে গুদাম হিসেবে ব্যবহার করেন। ছোটখাটো জিনিস তৈরিও করেন। প্রতিটি বাড়ি ঘুরে দেখার মতো সেই পরিকাঠামো পুরসভার নেই। তবে, জানতে পারলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ দিন অলোকানন্দাদেবী বলেন, ‘‘এই কারখানা এবং গুদামটি বহু দিন ধরে চলছে। দিন কয়েক আগেই আমি মালিককে নোটিস দিয়ে জানাতে বলেছিলাম তাঁর ট্রেড লাইসেন্স আছে কি না। এখনও কোনও উত্তর পাইনি। স্বাভাবিক ভাবেই মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
এ দিনই গার্ডেনরিচের অ্যাসবেস্টস মোড়ে একটি কাগজের গুদামে আগুন লাগে।। দমকলের তিনটি ইঞ্জিন গিয়ে আগুন নেভায়। কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।