গ্যাসের পাইপ ফেটে ঘরে আগুন, পুড়ে মৃত এক

স্থানীয় সূত্রের খবর, অর্জুনদের ফুচকা বিক্রির ব্যবসা। এ দিন গ্যাস জ্বালিয়ে ফুচকার আলু সেদ্ধ করছিলেন অর্জুন, লীলা ও তাঁদের এক কারিগর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:০১
Share:

এই ঘর থেকেই আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল। সোমবার, মসজিদপাড়া বস্তিতে। নিজস্ব চিত্র

বাড়ির একতলা জ্বলছে দাউদাউ করে। দোতলার জানলায় দাঁড়িয়ে দুই ভাইয়ের চিৎকার ‘বাঁচাও, বাঁচাও’। কিন্তু লেলিহান শিখা ঠেলে ঢুকবেন কে? সব দেখেও তাই ওই দুই যুবকের মা, বাবা-সহ প্রতিবেশীরা দাঁড়িয়ে আছেন অসহায়ের মতো। শেষ পর্যন্ত দোতলা থেকে দুই ভাই নামতে পারলেও বাড়ি থেকে বেরোতে গিয়ে মারাত্মক ভাবে অগ্নিদগ্ধ হতে হল দু’জনকে। হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রাতে এক ভাইয়ের মৃত্যু হয়।

Advertisement

সোমবার সকাল ৮টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে টালিগঞ্জ থানার সতীশ মুখার্জি রোডের সাহেববাগান এলাকার মসজিদপাড়া বস্তিতে। পুলিশ জানায়, ওই দুই ভাইয়ের নাম সুধীর সাউ (১৬) ও সঞ্জিত কুমার সাউ। তাঁদের বাঁচাতে গিয়ে সামান্য জখম হন বাবা অর্জুন সাউ এবং মা লীলা দেবী। আশঙ্কাজনক অবস্থায় সুধীরকে এম আর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রাতে মারা যায় সে। সঞ্জিত এসএসকেএমে ভর্তি। তাঁর অবস্থাও সঙ্কটজনক।

মসজিদপাড়া বস্তিতে ইটের গাঁথনি দেওয়া টিনের ছাউনির এক কামরার দোতলা বাড়ি অর্জুনদের। একতলা ও দোতলা মিলিয়ে একটিই ঘর। একতলার ঘরে থাকা কাঠের সিঁড়ি দিয়ে যাওয়া যায় দোতলায়। স্থানীয় সূত্রের খবর, অর্জুনদের ফুচকা বিক্রির ব্যবসা। এ দিন গ্যাস জ্বালিয়ে ফুচকার আলু সেদ্ধ করছিলেন অর্জুন, লীলা ও তাঁদের এক কারিগর। দোতলায় ঘুমোচ্ছিলেন সুধীর ও সঞ্জিত। স্থানীয় বাসিন্দা মিঠু ঘোষ জানান, হঠাৎই তাঁরা অর্জুনদের একতলার ঘরে আগুন দেখতে পান। ওই দম্পতি জানান, গ্যাস সিলিন্ডারের পাইপ ফেটে আগুন ধরে গিয়েছে। মিঠু বলেন, ‘‘সুধীর ও সঞ্জিতকে ডাকতে না ডাকতেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ওরা অসহায় ভাবে দোতলা থেকে চিৎকার করছিল।’’

Advertisement

এক প্রত্যক্ষদর্শী গীতা বিশ্বাস জানান, আগুনের তাপে ভেঙে পড়ে কাঠের সিঁড়ি। দুই ভাই নামতে গিয়ে পড়ে যান আগুনের মধ্যে। যখন দু’জনে বেরিয়ে আসে, তত ক্ষণে তাদের হাত-পা, পিঠ, চুলের অনেকটা অংশ পুড়ে গিয়েছে। গীতাদেবী বলেন, ‘‘একতলার ঘর থেকে বেরোতে গিয়ে অর্জুন ও লীলাও সামান্য অগ্নিদগ্ধ হন। তবে দুই ভাইয়ের অবস্থা ছিল মারাত্মক।’’

খবর পেয়ে দমকলের তিনটি ইঞ্জিন এলেও মসজিদপাড়ার ঘিঞ্জি বস্তিতে অর্জুনদের ঘর পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি। দূর থেকে হোসপাইপ দিয়ে জল ছুড়ে তারা আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। পরে আসেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটিকে আর্থিক সাহায্যের আশ্বাস দেন তিনি। ফিরহাদ বলেন, ‘‘কলকাতার এমন বহু বস্তি রয়েছে। যখন এগুলি তৈরি হয়, তখন লোকসংখ্যা ছিল কম। পরে অপরিকল্পিত ভাবে বেড়ে ওঠায় এমন হয়েছে যে, দমকল পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না। দমকল যাতে ঢুকতে পারে, সে জন্য নতুন পরিকল্পনা দরকার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন