পাঁচ দিন কার্নিসে আটকে কুকুর, ত্রাতা দমকল

পাঁচ দিন আগে এলাকার বাসিন্দারা রাস্তা থেকে এই দৃশ্য দেখলেও দোতলা বাড়ির কার্নিসে বিপজ্জনক ভাবে ছোটাছুটি করা কুকুরটিকে উদ্ধারের কথা ভাবেননি কেউ। একমুঠো খেতেও দেননি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৩৫
Share:

উদ্ধার: সরু কার্নিসে আটকে কুকুরটি।

কখনও চিৎকার করছে। কখনও দোতলা বাড়ির কার্নিস ধরে ছোটাছুটি করেছে ছাদের দেওয়াল (প্যারাপেট ওয়াল) টপকে বেরিয়ে আসার জন্য। কিন্তু পারছে না। শেষে গিয়ে বসে পড়ছে দেড় ফুট কার্নিসের উপরেই।

Advertisement

পাঁচ দিন আগে এলাকার বাসিন্দারা রাস্তা থেকে এই দৃশ্য দেখলেও দোতলা বাড়ির কার্নিসে বিপজ্জনক ভাবে ছোটাছুটি করা কুকুরটিকে উদ্ধারের কথা ভাবেননি কেউ। একমুঠো খেতেও দেননি। ফলে শীতের রাতে এ ভাবে পাঁচ দিন ধরে অভুক্ত অবস্থায় পড়ে থেকে ক্রমাগত নিস্তেজ হয়ে পড়েছিল প্রাণীটি। গুটিসুটি মেরে আশ্রয় নিয়েছিল কার্নিসে রাখা টবের পাশে। শেষ দু’দিন আর তাকে নড়াচড়া করতেও দেখেননি কেউ। এমনকী দমকল বাহিনীর কর্মীরা যখন তাকে উদ্ধার করতে আসেন তখন কুকুরটি চিৎকার করার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছিল।

দমকল সূত্রে খবর, দিন পাঁচেক আগে হাওড়ার শিবপুর বাজার লাগোয়া জি টি রোডের একটি দোতলা বাড়িতে কোনও ভাবে সিঁড়ি দিয়ে রাস্তার এক দল সারমেয় উঠে পড়েছিল। বাকিরা নেমে গেলেও বাদামী রঙের কুকুরটি নামতে পারেনি। তার আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ছাদের দরজা। দমকলের কর্মীদের অনুমান, নামার চেষ্টা করতে করতেই কুকুরটি কোনও ভাবে পৌঁছে গিয়েছিল ওই বাড়ির কার্নিসে। নামার জন্য মরিয়া চেষ্টা করতে গিয়ে পাশের বাড়ির কার্নিসে লাফ দিয়ে চলে গিয়েছিল সে। আর সেখানে গিয়ে কার্যত ‘বন্দি’ দশা হয়েছিল তার। কারণ এক দিকে মাত্র দেড় ফুট চওড়া কার্নিস, অন্য দিকে নীচে জিটি রোড। তাই মাত্র আড়াই ফুটের প্যারাপেট ওয়াল টপকে আর ছাদে উঠে পড়ার সাহস দেখাতে পারেনি প্রাণীটি।

Advertisement

তাকে নামিয়ে আনছেন দমকলকর্মীরা। মঙ্গলবার, শিবপুরে।

এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, প্রথম দু’দিন ‘ঘেউ ঘেউ’ চিৎকারে ছাদের কার্নিস ধরে কিছুটা ছোটাছুটি করার পরে আর নীচ থেকে দেখা যায়নি কুকুরটিকে। তাঁরা ভেবেছিলেন হয়তো নেমে গিয়েছে। তাই কেউ আর আগ্রহ দেখাননি। কিন্তু মঙ্গলবার ছাদে উঠে কুকুরটিকে প্রথম দেখতে পায় ওই বাড়ির এক কিশোরী। সেই উদ্যোগী হয়ে দমকলে খবর দেয়। মঙ্গলবার দুপুরে দমকল বাহিনী এসে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে কুকুরটিকে উদ্ধার করে কিছুটা শুশ্রূষা করার পরে সে সুস্থ হয়ে ওঠে। ফিরে যায় রাস্তায়।

ওই দোতলা বাড়িরই বাসিন্দা তপন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মেয়েটির উপস্থিত বুদ্ধির জন্যই কুকুরটি বেঁচে গেল। আমরা তো ভেবেছিলাম কুকুর আগেই নেমে পালিয়ে গিয়েছে।’’

ঘটনাস্থলে উপস্থিত দমকল আধিকারিক প্রদীপ পাত্র বলেন, ‘‘কুকুরটি যে অবস্থাতেই থাক না কেন আমাদের এক কর্মী সাহস করে খালি হাতেই তাকে উদ্ধার করেছেন। এটা খুব ভাল কাজ। প্রাথমিক ভয়ের রেশ কাটিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই স্বাভাবিক হয়ে যায় কুকুরটিও।’’

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন