ফিরহাদ হাকিম
কাউকে বাজার দরের চেয়ে কম দামে জমি দেওয়া হয়েছে। কাউকে বা নামমাত্র খরচে হাসপাতাল গড়ার সুযোগ করে দিয়েছে কলকাতা পুর প্রশাসন। শর্ত একটাই, কলকাতা পুরসভার কর্মী এবং দরিদ্র, নিম্নবিত্ত নাগরিকেরা যেন সেই হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ পান। হাসপাতালে কোনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হলে কিছুটা আর্থিক সাশ্রয় মেলে। তা নিয়ে ওই সব হাসপাতালের সঙ্গে পুরসভার চুক্তিও হয়েছে। কিন্তু সেই চুক্তির প্রচার নিয়ে ‘ঢিলেমি’র কারণে অনেকেরই এই সুবিধের কথা অজানা। সেই কারণে পুরমহলে প্রশ্ন উঠছে, চুক্তি মতো যাঁদের সুবিধা পাওয়ার কথা, তাঁরা তা পাচ্ছেন কি? বিষয়টি নিয়ে পুরকর্মী থেকে অফিসার, কাউন্সিলরদের একাংশ সরব। কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের কানেও সে কথা ইতিমধ্যে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, ‘‘কোন হাসপাতালের সঙ্গে পুরসভার কী চুক্তি ছিল, তা মানা হচ্ছে কি না, তার ফাইল চেয়ে পাঠিয়েছি।’’ সেটা দেখার পরেই ওই সব হাসপাতালের মালিকপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করা হবে বলে জানান মেয়র। পুর প্রশাসনের এক আধিকারিকের বক্তব্য, মূলত বাম আমলেই বেশ কিছু হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানকে জমি দিয়ে চুক্তি করেছে কলকাতা পুরসভা। ওই সব হাসপাতালের মধ্যে কয়েকটির নামডাক, পসার এখন অনেকটাই বেড়েছে।
পুরসভা সূত্রের খবর, শহরের বেশ কয়েকটি হাসপাতাল বিভিন্ন সময়ে পুর প্রশাসনের সহায়তা পেয়ে কলকাতা পুরসভার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। এদের কেউ কম দামে, কেউ বা এক টাকায় জমি পেয়েছেন। কেউ আবার অন্য ভাবে পুর প্রশাসনের সাহায্য পেয়েছে। তাদের সঙ্গে কী চুক্তি হয়েছিল, তার একটি রূপরেখা মিলেছে সুব্রত মুখোপাধ্যায় মেয়র থাকাকালীন ২০০১-’০২ সালের ৫৪ নম্বর বিজ্ঞপ্তিতে। তাতে কোন হাসপাতালে কী সুবিধা পাওয়া যাবে, তার একটি তালিকা দেওয়া হয়েছিল। সেই তালিকায় যেমন লিপিবদ্ধ রয়েছে, একটি হাসপাতালে কলকাতা পুরসভার সকল কাউন্সিলর এবং কর্মীরা বিনা পয়সায় আউটডোরে চিকিৎসার সুযোগ পাবেন। আউটডোরের চিকিৎসার জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচেও ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পাওয়ার কথা তাঁদের। হার্টের অস্ত্রোপচারও করাতে পারবেন কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য স্কিমে নির্ধারিত দরে। তাঁদের সন্তানের বয়স ১২ বছরের নীচে হলে বিনা পয়সায় হার্টে অস্ত্রোপচারের সুযোগ মিলবে। পুরসভার তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরাও বিনা পয়সায় সেই অস্ত্রোপচার করানোর সুযোগ পাবেন। আর একটি হাসপাতালের ক্ষেত্রে বলা ছিল, নিম্নবিত্ত রোগীদের জন্য পুরসভাকে বছরে ২০ লক্ষ টাকা ছাড় দেওয়া হবে। যা সম্প্রতি ৫০ লক্ষ টাকা হয়েছে। কোনও রোগীর সেই ছাড় পেতে পুরসভার সচিব, স্বাস্থ্য দফতরের মুখ্য আধিকারিকের অনুমোদন লাগবে। এ ছাড়াও কাউন্সিলর এবং পুরকর্মীরা রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য স্কিমের মতো ছাড় পাবেন। চুক্তিবদ্ধ একটি হাসপাতালের অতিরিক্ত চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার জয়িতা বসু জানান, তাঁদের হাসপাতালে পুরসভার তরফে কেউ গেলে চুক্তি মতো ছাড় দেওয়া হয়। তবে রোগীকে পুরসভার সচিব, কমিশনার, স্বাস্থ্য দফতরের পদস্থ কর্তার অনুমোদন দেখাতে হয়। আর একটি হাসপাতালের সিনিয়র এগজিকিউটিভ শুভ পাল বলেন, ‘‘পুরসভার সঙ্গে চুক্তি মতো যে ছাড় দেওয়ার কথা, তা দিতে আমরা প্রস্তুত। তবে এখানে পুরসভার তরফে খুব কম রোগীই আসেন।’’
আসলে কলকাতা পুরসভার নথিতে ওই সব চুক্তির কথা থাকলেও বাস্তবে কোন হাসপাতালে কী সুবিধা পেতে পারেন, তা জানেন না অধিকাংশ পুরকর্মীই। জঞ্জাল অপসারণ দফতরের একাধিক কর্মীর বক্তব্য, এমন সুযোগ যে পাওয়া যায়, তা তাঁদের জানাই ছিল না। কোনও দিন কেউ বলেননি তাঁদের। সাধারণ নাগরিকেরা তো আরও অন্ধকারে। কিন্তু কেন?
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এ ব্যাপারে সুব্রতবাবু খোলাখুলি বলেন, ‘‘আমি চলে যাওয়ার পরে পাঁচ বছর বাম এবং তার পরে আরও আট বছর আমাদের দলের পুরবোর্ড আছে। এ বিষয়ে কেউ জানানোর চেষ্টা করেননি কেন, বুঝতে পারছি না। তবে বর্তমান মেয়র বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়াই আশা করি কাজ হবে।’’
কলকাতা পুরসভার অনেকেই যে বিষয়টি সম্পর্কে জানেন না, বর্তমান ক্ষমতাশালী ইউনিয়নের মুখ্য উপদেষ্টা তথা রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ও তা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘পুরসভার সব কর্মীকে এটা জানানো জরুরি। কেউ জানেন না এই সুবিধের কথা, তাই তাঁরা তা পানও না।’’ এটি পুর প্রশাসনের গাফিলতি বলেও মনে করেন তিনি। একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘পুরনো চুক্তির পরে অনেক বছর পেরিয়ে গিয়েছে। সুবিধে আরও বাড়ানো দরকার। কারণ, অনেক হাসপাতালের ব্যবসাও বেড়েছে।’’ মেয়রের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলবেন বলে জানান তিনি।