— প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
কসবার কলেজে ধর্ষণকাণ্ডে মুল অভিযুক্ত ‘এম’। শাসকদলের প্রভাবশালী এই ছাত্রনেতার নামে এর আগেও ভূরি ভূরি অভিযোগ রয়েছে। সে সব প্রকাশ্যে এসেছে ইতিমধ্যেই। এ বার ‘এম’-এর আরও নানা কাণ্ডকারখানা প্রকাশ্যে নিয়ে এলেন তাঁরই এককালের ‘বন্ধু’, তথা সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের আর এক প্রাক্তনী তিতাস মান্না।
২০১২ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ কলকাতার এই কলেজেই আইনের ছাত্র ছিলেন তিতাস। ২০১২ সালে তিনি এবং ‘এম’ একসঙ্গেই কলেজে ভর্তি হন। তিতাসের কথায়, ‘‘কলেজে ঢোকার এক বছরের মধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছিল ওর দাদাগিরি!’’ তিতাস জানাচ্ছেন, ২০১৩ সালে চেতলা ব্রিজের উপর কেটারিংয়ের কর্মীদের আঙুল কেটে দেওয়া এবং মারধরের জন্য ‘এম’-এর নামে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। ওই ঘটনার পর থেকে প্রায় দুই থেকে তিন বছর গা-ঢাকা দিয়েছিলেন ‘এম’। ২০১৬ সালে ফের কলকাতায় আসেন তিনি। আবার সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করেন। সে সময় তিতাস-সহ অন্যেরা তাঁকে ওই কলেজে প্রবেশে বাধাও দেন। কিন্তু অভিযোগ, ২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর বহিরাগত গুন্ডাবাহিনী নিয়ে এসে কলেজে ভাঙচুর চালান ‘এম’। বেশ কয়েক মাস এ নিয়ে থানাপুলিশ চলে। গড়িয়াহাট থানা এফআইআর করে তদন্তে নামলেও তাঁকে গ্রেফতার করা হয়নি বলে অভিযোগ। শেষমেশ নানা কসরত করে ২০১৭ সালে পুনরায় ওই কলেজেরই প্রথম বর্ষে ভর্তি হন ‘এম’।
তিতাসের কথায়, যে হেতু ‘এম’ অতীতে এক বার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন, তাই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্যের কাছ থেকে বিশেষ অনুমতি নিয়ে ফের ওই কলেজে ভর্তি হতে তাঁকে বেশি বেগ পেতে হয়নি। তার পর শুরু হয় ‘এম’-এর দৌরাত্ম্য! সহপাঠীর দাবি, ২০১৭ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ধর্ষণ, র্যাগিং, তোলাবাজি, গুন্ডামি থেকে শুরু করে নানা কীর্তিকলাপ রয়েছে তাঁর। কখনও তা প্রকাশ্যে এসেছে, কখনও আবার ধামাচাপা পড়ে গিয়েছে। ২০১৮ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ফের তাঁকে এক বছরের জন্য কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়। তা সত্ত্বেও কলেজের বাইরের নানা ঘটনার সঙ্গে ‘এম’-এর নাম জড়িয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার মতো ঘটনাও। ২০১৯ এবং ২০২২ সালে এই ‘এম’-এরই নামে শ্লীলতাহানির মামলাও হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই বাগে আনা যায়নি ‘এম’কে। বরং ধরাছোঁয়ার বাইরেই ছিলেন তিনি!
২০২৩ সাল থেকে ফের কলেজে দাপট বাড়ে ‘এম’-এর। নিজেই নিজেকে সংগঠনের ইউনিট প্রেসিডেন্ট দাবি করে কলেজে দাদাগিরি শুরু করে দেন তিনি। তিতাস বলছেন, ‘‘দাপটের সঙ্গে সব সময় গুন্ডাবাহিনী সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেড়াত ও। ওর নামে অন্তত ১০-১২টি মামলা রয়েছে। দল ওকে কোনও দিন এই কলেজে কোনও পদ দেয়নি। পরবর্তী কালে অশোক দেবকে ধরে এই চাকরি পেয়েছে ও।’’ দক্ষিণ কলকাতার কলেজের এ হেন প্রাক্তন পড়ুয়া তথা বর্তমানে ওই কলেজের অস্থায়ী কর্মীকে বৃহস্পতিবার রাতেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সঙ্গে ধরা পড়েছেন আরও তিন জন।
প্রসঙ্গত, সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজে ধর্ষণের ঘটনায় তিন অভিযুক্তই তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। নির্যাতিতা নিজেও টিএমসিপির সদস্য ছিলেন। অভিযোগ, গত ২৫ জুন, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ১০টা ৫০ মিনিটের মধ্যে কলেজ ক্যাম্পাসের মধ্যে তাঁকে ধর্ষণ করেন ‘এম’। নির্যাতিতা জানিয়েছেন, প্রথমে ইউনিয়ন রুমের ভিতর তাঁর সঙ্গে ধস্তাধস্তি করা হয়। পরে রক্ষীর ঘরে নিয়ে গিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করেন ‘এম’। বাইরে পাহারায় ছিলেন বাকি দু’জন, ‘জে’ এবং ‘পি’। কলেজের মেন গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ছাত্রীকে বেরোতে দেওয়া হয়নি। রক্ষীর কাছে সাহায্য চেয়েও কোনও লাভ হয়নি। এর পরেই পুলিশের দ্বারস্থ হন নির্যাতিতা। ওই ছাত্রী জানিয়েছেন, শাসকদলের ছাত্র পরিষদের নেতা হওয়ায় অভিযুক্তদের দাপট ছিল কলেজে। সেই কারণেই রক্ষীও ছিলেন ‘অসহায়’। অভিযোগ, ধর্ষণের কথা পুলিশকে জানালে তাঁর প্রেমিককে খুন করিয়ে দেওয়ার এবং বাবা-মাকে গ্রেফতার করিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল।
(ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানির ঘটনায় যত ক্ষণ না অভিযুক্তকে আদালতে দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে, তত ক্ষণ তাঁর নাম-পরিচয় প্রকাশে আইনি বাধা থাকে। সেই কারণে আনন্দবাজার ডট কম কসবার ধর্ষণকাণ্ডে তিন অভিযুক্তের নাম এবং ছবি প্রকাশে বিরত থাকছে)