মোটরবাইকের লক খুলে মানুষের চোখ এড়িয়ে তা নিয়ে পালিয়েছিল দুষ্কৃতী। কিন্তু ফাঁকি দিতে পারেনি যন্ত্র চোখের নজরদারি। আর সেই সূত্র ধরেই পুলিশের জালে ধরা পড়ে গেল মোটরবাইক চুরি চক্রের এক সদস্য।
পুলিশ সূত্রের খবর, টালা থানার পুলিশের হাতে ধরা পড়া ওই দুষ্কৃতীর নাম মহম্মদ উকিল। মঙ্গলবার তাকে গ্রেফতার করেন তদন্তকারীরা। তার কাছ থেকে চুরি যাওয়া একটি মোটরবাইক উদ্ধার করেছে পুলিশ। ধৃতকে আদালতে পেশ করা হলে বিচারক ১৮ মার্চ পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
লালবাজার সূত্রের খবর, গত কয়েক মাসে আরজি কর হাসপাতাল থেকে একের পর এক মোটরবাইক চুরি হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ আসছিল। হাসপাতাল চত্বর থেকে শেষ মোটরবাইকটি চুরি হয়েছিল চলতি মাসের ১১ তারিখে। জরুরি বিভাগের সামনে নিজের মোটরবাইক রেখে হাসপাতালে ভর্তি এক আত্মীয়কে দেখতে গিয়েছিলেন লেকটাউনের বাসিন্দা সুকান্ত কোলে। পুলিশের কাছে তাঁর অভিযোগ, কিছু ক্ষণ পরে তিনি সেখানে এসে দেখেন মোটরবাইকটি নেই।
তদন্তকারীরা জানান, হাসপাতালের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তাঁরা এক সন্দেহভাজনের ছবি পান। দেখা যায়, হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে মোটরবাইক নিয়ে ওই দুষ্কৃতী বেলগাছিয়ার দিকে গিয়েছে। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, ছবি দেখে দুষ্কৃতীকে শনাক্ত করা যাচ্ছিল না। তাই ঘটনার কয়েক দিনের মধ্যে ওই দুষ্কৃতীর ছবির প্রিন্ট বার করে পুলিশের বিভিন্ন সোর্সের কাছে তা বিলিয়ে দেওয়া হয়। আর তাতেই কাজ হয়। নারকেলডাঙার এক যুবক জানায়, ছবির ওই দুষ্কৃতীর নাম মহম্মদ উকিল। আদতে নারকেলডাঙার বাসিন্দা হলেও সে বর্তমানে বেলগাছিয়ায় থাকে।
তদন্তকারীরা জানান, সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ধরা পড়া দুষ্কৃতীকে শনাক্ত করার পরে তার সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হয়। দেখা যায়, ঘটনার দিন অভিযুক্ত আরজি করে ছিল। এর পরেই টালার থানার ওসি এবং অতিরিক্ত ওসির নেতৃত্বে বিশেষ দল তৈরি করে মঙ্গলবার রাতে হানা দেওয়া হয় নারকেলডাঙার একটি বস্তিতে। সেখান থেকেই গ্রেফতার করা হয় উকিলকে। পরে তাকে জেরা করে লেকটাউনের একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে চুরি যাওয়া মোটরবাইকটি।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানায়, মোটরবাইকটি চুরির পরে তা বাংলাদেশে পাচারের ছক কষছিল ওই চক্রের সদস্যেরা। সে জন্য লেকটাউনে মোটরবাইকটি রাখা হয়েছিল। কিন্তু ক্রেতার সঙ্গে দরাদরির মাঝেই পুলিশের জালে ধরা পড়ে যায় উকিল। তদন্তকারীরা জানান, শুধু উকিল নয়। আরও কয়েক জন রয়েছে ওই চুরি চক্রে। আরজি কর হাসপাতাল-সহ বিভিন্ন এলাকায় বাইক চুরির সঙ্গে জড়িত চক্রটি। ‘মাষ্টার-কি’ দিয়ে মোটরবাইকের লক খুলে চম্পট দিত অভিযুক্তেরা। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, ধৃতের কাছ থেকেও মোটরবাইক চুরির মাস্টার-কি পাওয়া গিয়েছে৷ সেটি ব্যবহার করেই যে কোনও মোটরবাইকের চাবি খুলে দিতে পারত সে৷ বয়সে কম হলেও উকিল পেশাদার চোরদের মতোই চুরি করত৷ ধৃতকে জেরা করে আরও কয়েকটি চুরির কিনারা করা সম্ভব হতে পারে বলে মত তদন্তকারীদের। উকিলকে জেরা করে চক্রের বাকি সদস্যদের খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগও ধৃতকে জেরা করবে৷
লালবাজার সূত্রের খবর, দক্ষিণ শহরতলিতে চুরি আটকাতে পুলিশই মোটরবাইকে জিপিএস বসিয়ে ফেলে রাখছে। যাতে দুষ্কৃতীরা ওই বাইক চুরি করলে তা সহজেই ধরা যাবে। তাতেও সাফল্য পেয়েছিল পুলিশ। নেতাজিনগর থানা মোটরবাইক চুরির সঙ্গে জড়িত দুষ্কৃতীকে সেই ফাঁদে ফেলেই গ্রেফতার করেছিল।