প্রতীকী ছবি।
অষ্টমীর ভোরে উত্তর কলকাতার একটি মোড়ে রাস্তায় ঝাড়ু দিচ্ছিলেন সাফাইকর্মীরা। সব জঞ্জাল জড়ো করার পরে কাগজ ও প্লাস্টিকের কাপ, নরম পানীয়ের বোতল, টেট্রাপ্যাক, আইসক্রিমের প্যাকেট যেন ছোটখাটো পাহাড়ের চেহারা নিল!
জঞ্জালের ভারে প্রায় নুইয়ে পড়া শহর, উৎসবের মরসুমে আরও দুরূহ হয়। পরিবেশকর্মীরা বলছেন, বাতিল জলের বোতল, প্যাকেট, কাপ ছাড়াও পুজোর সময় যে পরিমাণে ফ্লেক্স, ব্যানার ব্যবহার হয়, সে সবও আবর্জনার পরিমাণ বাড়ায়।
কলকাতা পুরসভা এখনও জৈব ও অজৈব বর্জ্য পৃথকীকরণের কাজ কার্যত শেষ করতে পারেনি। ফলে পুজোর অজৈব বর্জ্য অন্য বর্জ্যের সঙ্গে ধাপার মাঠেই যায়। অনেকেই বলছেন, পুজোর সময়ে অন্তত এই বর্জ্য সামাল দেওয়া বা পৃথকীকরণের দায়িত্ব পুজো কমিটিগুলিও নেবে না কেন?
পুজো কর্তারা অবশ্য বলছেন, তাঁরা নিজেদের সাফাইকর্মী রাখেন। কিন্তু সে সব জঞ্জাল তো ঝাঁট দিয়ে পুরসভার গাড়িতেই তুলে দেওয়া হয় অন্য সব বর্জ্যের সঙ্গেই।
পরিবেশকর্মীদের মতে, পুজো কমিটিগুলি পুজো মণ্ডপের চার পাশে জৈব ও অজৈব বর্জ্যের জন্য আলাদা ডাস্টবিন রাখতে পারে। জৈব বর্জ্য পুরসভাকে দিয়ে দেওয়া হবে। আর প্লাস্টিকের ঠোঙা, নরম পানীয়ের খালি বোতল এ সব অজৈব বর্জ্য কিনে নিতে পারেন আবর্জনার ব্যবসায়ীরা। তাঁরা সেগুলি পুনর্ব্যবহার করলে দূষণ অনেকটাই কমবে। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলছেন, ‘‘পুজোর সময় যে পরিমাণে প্লাস্টিক এবং অজৈব বর্জ্য তৈরি হয়, তা দূষণের ভার অনেকটাই বা়ড়ায়। অথচ জৈব এবং অজৈব বর্জ্য পৃথক করা হলে এই দূষণ কমানো সম্ভব।’’
পরিবেশকর্মীদের আশঙ্কা, বর্জ্যের ভার বাড়ার পাশাপাশি বাড়ছে নতুন ধরনের বর্জ্য। ফুচকাওয়ালারা এখন শালপাতার বাটি ছেড়ে প্লাস্টিকের বাটি ব্যবহার করছেন! এমনকী বিভিন্ন পুজো কমিটি দর্শকদের ছোট জলের বোতল দেয়, সেগুলি পরে এ দিক-সে দিক ফেলে দেন অনেকে। তেমনই ছোট, বড়, মাঝারি সব পুজোয় ফ্লেক্স, ব্যানার বাড়ছে। বাড়ছে বিজ্ঞাপনের বহরও।
ফ্লেক্স, ব্যানারের রীতিতে বদল আনা উচিত বলছেন কল্যাণবাবু। তিনি জানান, এই বদল আনতে এ বার ‘ঘর’ থেকেই অভিযান শুরু করছেন তাঁরা। এ বছর পুজোয় পরিবেশ সচেতনতার জন্য ফ্লেক্স, হোর্ডিং-এর পরিবর্তে কাপ়ড়ের ব্যানার দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন পর্ষদের চেয়ারম্যান।তাঁর মতে, কাপড়ের মতো পরিবেশবান্ধব উপাদান দিয়েই হোক পরিবেশ রক্ষার প্রচার।
কলকাতা-সংলগ্ন পুরসভাগুলির সমস্যা আরও। পর্ষদ সূত্রে বলা হচ্ছে, ওই পুরসভাগুলির বর্জ্য সামাল দেওয়ার পরিকাঠামো কার্যত নেই। ফলে ওই এলাকার ভাগাড় আরও দূষিত হচ্ছে। এমন আকালেও স্বপ্ন দেখেন পরিবেশকর্মীদের কেউ কেউ। তাঁদের আশা, এক দিন বাঙালির সেরা উৎসব জঞ্জালমুক্ত হবে। তবে তা সময়ের অপেক্ষা।