হাসপাতালের পাশেই জঞ্জালে ডেঙ্গি-আতঙ্ক

বাঘা যতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতালের রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা জানাচ্ছেন, হাসপাতাল লাগোয়া দেওয়ালের পাশে জমে থাকা ওই জঞ্জাল ঘিরে নতুন করে ডেঙ্গি-আতঙ্ক তৈরি হয়েছে সেখানে।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৮ ০৩:০৮
Share:

বাঘা যতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতাল লাগোয়া এলাকায় এ ভাবেই জমে রয়েছে জল-জঞ্জাল। নিজস্ব চিত্র

জানলা খুলে রাখলে হাওয়া আসে। ভ্যাপসা গরমের হাত থেকে কিছুটা রেহাই পান রোগীরা। কিন্তু সেই জানলা খুলে রাখার উপায় নেই। তা হলেই ঘরের ভিতরে ঢুকে পড়বে মশার ঝাঁক। কারণ, হাসপাতালের ওই জানলা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বেই রয়েছে মশার আঁতুড়ঘর। যেখানে জমে থাকে স্তূপীকৃত জঞ্জাল আর জল।

Advertisement

বাঘা যতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতালের রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা জানাচ্ছেন, হাসপাতাল লাগোয়া দেওয়ালের পাশে জমে থাকা ওই জঞ্জাল ঘিরে নতুন করে ডেঙ্গি-আতঙ্ক তৈরি হয়েছে সেখানে। হাসপাতালের কর্মীদের বক্তব্য, গত বছর অগস্টের শেষ থেকেই ওই এলাকায় ডেঙ্গি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল। সেই সময়ে কয়েক দিন নিয়মিত সাফাইকাজ চলেছিল ওই এলাকায়। কিন্তু তার পরে সেই উদ্যোগ থিতিয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তাঁরা ভেবেছিলেন, গত বছরের থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বছর বর্ষার শুরুতেই ডেঙ্গি রুখতে ঝাঁপিয়ে পড়বে পুরসভা। হাসপাতাল লাগোয়া ওই জমা জল ও জঞ্জাল সাফ করে ফেলা হবে। কিন্তু অভিযোগ, পরিস্থিতি আবার আগের অবস্থাতেই ফিরে গিয়েছে। ওই জঞ্জাল ও জমা জল দেখে গত বছরের স্মৃতিই ফিরে আসছে এলাকার বাসিন্দা ও হাসপাতালের কর্মীদের মনে। ফিরে আসছে ডেঙ্গি-আতঙ্কও।

বাঘা যতীন স্টেট জেনারেলের সুপার গৌরব রায় বললেন, ‘‘হাসপাতাল লাগোয়া ওই জায়গাটা মাছের পাইকারি বাজার। শুধু জল বা শুকনো জঞ্জালই নয়, মাছের আঁশ, বর্জ্য ও পরিত্যক্ত থার্মোকলের বাক্সও পড়ে থাকে সেখানে। সেই সমস্ত বাক্সে জল জমে থাকে। তাতে মশার লার্ভাও পাওয়া গিয়েছে।’’ হাসপাতালের এক চিকিৎসকের প্রশ্ন, ‘‘হাসপাতালের পাশেই যদি মশার আঁতুড়ঘর থাকে, তা হলে কী ভরসায় মানুষ এখানে চিকিৎসা করাতে আসবেন?’’

Advertisement

কর্মীরা জানাচ্ছেন, তাঁরা নিজেরাই অনেক সময়ে হাসপাতালের সাফাইকর্মীদের দিয়ে জায়গাটা পরিষ্কার করিয়েছেন। কিন্তু পুরসভা বা পাইকারি বাজার কর্তৃপক্ষ সচেতন না হওয়ায় নিয়মিত ভাবে সাফাই হচ্ছে না। অভিযোগ, ওই জমা জঞ্জালে গত বছর ডেঙ্গির মরসুমেও শুধু ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়ে দায় সেরেছিল পুরসভা। এ বছরেও সচেতনতা বলতে অগস্টের প্রথম থেকে জমা জঞ্জালে শুধু ব্লিচিংই ছড়িয়েছে পুরসভা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিদিন মাঝরাত থেকে জেগে ওঠে বাঘা যতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতাল লাগোয়া ওই পাইকারি মাছের বাজার। অন্ধ্রপ্রদেশ ছাড়াও ক্যানিং ও গড়িয়া-সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মাছ বোঝাই ট্রাক আসতে থাকে। মাছ নামানোর পরে সেই জঞ্জাল সেখানেই পড়ে থাকে। সকালে মাছের গাড়ি চলে যাওয়ার পরে ওই বিস্তীর্ণ এলাকাই কার্যত খোলা ভ্যাটে পরিণত হয়। বাঘা যতীন বাজার সমিতির সেক্রেটারি সুব্রত দাস জানান, জমা জঞ্জাল সাত-আট দিনের আগে সাফ করা হয় না। তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমরা পুরসভার জঞ্জাল নিয়ে যাওয়ার গাড়িকে ফোন করে করে হয়রান হয়ে গিয়েছি। কিন্তু ওরা নিয়মিত আসে না। ফলে জঞ্জাল ও জমে থাকা জল সাত আট দিনের আগে পরিষ্কার হয় না।’’

যদিও মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল সাফাই) দেবব্রত মজুমদারের দাবি, ‘‘ওই পাইকারি মাছের বাজারে এখন জঞ্জাল ফেলার আলাদা ভ্যাট তৈরি হয়ে গিয়েছে। তাই যত্রতত্র জঞ্জাল ফেলা হয় না। জমা জলও থাকে না। পরিস্থিতি আর আগের বারের মতো নেই।’’ যদিও ওই এলাকা ঘুরে দেখে মেয়র পারিষদের বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবের মিল পাওয়া যায়নি। পাইকারি মাছ বাজারে একটি ভ্যাট আছে ঠিকই, কিন্তু সেটিও পুরোপুরি তৈরি হয়নি। এখনও সেই ভ্যাটের ছাউনি দেওয়া বাকি। বাজারের এক ব্যবসায়ী বললেন, ‘‘মাছ-বাজারে ওই ভ্যাট গত বছর থেকেই অর্ধেক তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে। এ বছরের অগস্টের মধ্যেও তা পুরোপুরি তৈরি হল না। ভ্যাট তৈরি হয়ে গিয়ে নিয়মিত জঞ্জাল পরিষ্কার করা হলে এ বছর ফের ডেঙ্গি নিয়ে এতটা আতঙ্ক তৈরি হত না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন