জিডি বিড়লা তদন্তে তলব হলফনামা

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:২১
Share:

স্বাভাবিক হয়েছে স্কুল। —ফাইল চিত্র।

জি ডি বিড়লা স্কুলে শিশুকে যৌন নির্যাতনের যে অভিযোগ উঠেছে, রাজ্যকে তার তদন্ত-রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দিল আদালত। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক নির্দেশ দিয়েছেন, ১৬ জানুয়ারির মধ্যে তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট হলফনামার আকারে পেশ করতে হবে।

Advertisement

গত বুধবার হাইকোর্টে পুলিশের বিরুদ্ধে একই সঙ্গে নিষ্ক্রিয়তা ও অতি সক্রিয়তার অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করেন নিগৃহীতা ছাত্রীর বাবা। মামলার আবেদনে ওই স্কুলের প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধেও অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে সিবিআই-এর হাতে ঘটনার তদন্তভার তুলে দেওয়ার দাবিও করেছেন।

এ দিন সেই মামলারই শুনানিতে রাজ্যের অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল অভ্রতোষ মজুমদার এবং সরকারি কৌঁসুলি তালে মাসুদ সিদ্দিকি তাঁদের সওয়ালে দাবি করেন, লালবাজারের গোয়েন্দা দফতর পদ্ধতি মেনেই তদন্ত করছে। তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। একই সঙ্গে সরকারি কৌঁসুলিরা জানান, ওই স্কুল চালানোর জন্য কেন্দ্রীয় বোর্ডের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদনই নেননি স্কুলের প্রিন্সিপাল। সেই কারণে প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে প্রতারণার একটি মামলা দায়ের হয়েছে।

Advertisement

স্কুলের অনুমোদন না থাকার অভিযোগ শুনে বিচারপতি বসাক মন্তব্য করেন, ‘‘তা হলে কী ভাবে চলছে ওই স্কুল!’’ সরকারি কৌঁসুলিরা জানান, তার তদন্তও হচ্ছে। কৌঁসুলিরা আরও জানান, ৩০ নভেম্বর ঘটনার পরে এসএসকেএম হাসপাতালে শিশুটির শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়। তদন্তকারীরা স্কুলের প্রিন্সিপাল, প্রধান শিক্ষিকা, ক্লাস টিচার, আয়াদের বয়ান নথিভুক্ত করেন। ওই শিশুটি হাসপাতালের মধ্যেই কয়েক জন অভিযুক্তকে চিহ্নিত করেছিল। তদন্তকারী এক অফিসার সেই চিহ্নিতকরণের ভিডিও ফুটেজ মোবাইল ক্যামেরায় বন্দি করেছিলেন। সেই ফুটেজ-ও ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

শিশুটির বাবার আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেবাল এ দিন আদালতে অভিযোগ করেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ সমস্ত অভিভাবকের কাছে নির্যাতিতা শিশুর নাম উল্লেখ করে ঘটনার বিবরণ জানিয়েছেন। স্কুল কর্তৃপক্ষের ওই কাজ ‘প্রোটেকশন অব চিল্ড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস’ বা ‘পক্সো’ আইনের ধারায় শাস্তিযোগ্য। অথচ, পুলিশ ওই কাজের জন্য কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। তিনি আরও অভিযোগ করেন, তদন্তকারীরা তাঁর মক্কেলকে লালবাজারে ডেকে পাঠিয়ে সাদা কাগজে সই করিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। তাঁর মক্কেল তা করেননি। যে চিকিৎসক শিশুর শারীরিক পরীক্ষা করেন এবং পরীক্ষার রিপোর্টে লিখে দেন, শিশুটির উপরে যৌন নির্যাতন হয়েছে, সেই চিকিৎসকের রিপোর্টও পুলিশ সংগ্রহ করেনি। তিনি শিশুটির পরিবারের আইনজীবী জেনেও তদন্তকারীরা তাঁর বয়ান নথিভুক্ত করাতে চান। এমনকী, ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ওই আইনজীবীকে নিয়ে গিয়ে গোপন জবানবন্দিও দেওয়াতে চান। আইনমাফিক তা করা যায় না।

সরকারি কৌঁসুলিরা অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, পুলিশ যাঁদের বয়ান নথিভুক্ত করেছে, তাঁরা ছাড়া ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আরও বেশ কয়েক জনের গোপন জবানবন্দি নথিভুক্ত করানোর আবেদন জানানো হবে। শিশুটির জামাকাপড়ের ফরেন্সিক পরীক্ষা করানো হচ্ছে। যে চিকিৎসক তাকে প্রথম পরীক্ষা করেন, তাঁর রিপোর্টও সংগ্রহ করা হয়েছে।

এ দিনই ওই স্কুলের প্রিন্সিপাল শর্মিলা নাথ এবং ওই শিশুর পারিবারিক চিকিৎসকের গোপন জবানবন্দি গ্রহণ করার জন্য আলিপুরের বিশেষ আদালতে আর্জি জানিয়েছে পুলিশ। বিশেষ আদালতের বিচারক অরুণকিরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এজলাসে ওই দু’জন-সহ মোট সাত জনের গোপন জবানবন্দি গ্রহণ করার আর্জি জানানো হয়। যৌন নির্যাতনের অভিযোগে ধৃত অভিষেক রায় ও মহম্মদ মফিজুরের আইনজীবী তীর্থঙ্কর রায় ও সুজিষ্ণু বসু বিশেষ আদালতে জানান, পুলিশ ওই শিশুর হিস্টোপ্যাথলজি পরীক্ষা করিয়েছে। সে ক্ষেত্রে ওই রিপোর্ট আদালতে পেশ করা হোক। ওই পরীক্ষার মাধ্যমে শিশুটির কোনও সংক্রমণ হয়েছিল কি না, তার ইঙ্গিত মিলতে পারে।

আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন ওই মামলার শুনানিতে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। নির্দেশ অনুযায়ী পুলিশ ওই শিশুর দু’টি মেডিক্যাল রিপোর্ট বিচারকের কাছে পেশ করতে পারেনি। সেই কারণে আগামী ৫ জানুয়ারি এই মামলায় শুনানির দিন ঘোষণা করেছেন বিচারক।

উল্লেখ্য, জি ডি বিড়লা কাণ্ডে স্কুলের প্রিন্সিপাল শর্মিলা নাথকে দু’দফায় জেরা করেছিল পুলিশ। শিশু নির্যাতনের ঘটনায় দুই শিক্ষক জড়িত নয় বলেই বয়ান দিয়েছিলেন শর্মিলা। অন্য দিকে, স্কুল থেকে ফিরে অসুস্থ বোধ করায় ফুলবাগান এলাকার একটি নার্সিংহোমের চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন ওই শিশুর বাবা ও মা। তদন্তকারীদের কথায়, ওই চিকিৎসকই প্রথম ওই শিশুকে পরীক্ষা করেছিলেন। তদন্তকারীদের কথায়, ওই ঘটনার অন্যতম সাক্ষী ওই চিকিৎসক। সেই কারণেই ওই চিকিৎসকের গোপন জবানবন্দি গ্রহণ করার প্রয়োজন রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন