জয়ী: ফল ঘোষণার পরে কাকলি ঘোষদস্তিদার। নিজস্ব চিত্র
বারাসতে তৃণমূলের জয় এল ঠিকই। কিন্তু সেই জয়ে বিঁধে থাকল গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বড় কাঁটা। দুই মন্ত্রীর খাসতালুকেই বড় ব্যবধানে পিছিয়ে থাকল তৃণমূল।
লক্ষাধিক ভোটে জিতে এই নিয়ে পরপর তিন বার সাংসদ হলেন তৃণমূল প্রার্থী কাকলি ঘোষদস্তিদার। কিন্তু উত্তর ২৪ পরগনায় যাঁর গোষ্ঠীর সঙ্গে প্রকাশ্যে কাকলির দ্বন্দ্ব, সেই জেলা সভাপতি তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিধানসভা এলাকা হাবড়াতেই প্রায় ২০ হাজার ভোটে বিজেপির থেকে পিছিয়ে রইলেন তিনি। হাবড়ার গ্রামীণ এলাকা কিছুটা কাকলির সঙ্গ দিলেও হাবড়া পুরসভায় হার হল তৃণমূলের। একই ভাবে, জেলা সদর বারাসত পুরসভার ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৮টি ওয়ার্ডে এগিয়ে রইল বিজেপি। প্রসঙ্গত, হাবড়া ও বারাসত— দুই পুরসভাই রয়েছে তৃণমূলের দখলে।
ভোটের দিন কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্তের সঙ্গে মতানৈক্য দেখা গিয়েছিল কাকলির। তাঁদের দু’জনের সম্পর্ক নিয়েও রয়েছে নানা জটিলতা। কাকলির ভোটের প্রচারে তেমন ভাবে দেখা যায়নি সব্যসাচীকে। এ দিন ফল প্রকাশের পরে দেখা যায়, দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুর বিধানসভা এলাকা বিধাননগরেও বিজেপির থেকে প্রায় ১৯ হাজার ভোটে পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল।
জয় মোটামুটি নিশ্চিত হতেই এ দিন সন্ধ্যায় ভোট গণনা কেন্দ্রে আসেন কাকলি। হাবড়া ও বিধাননগরে পিছিয়ে পড়া এবং জ্যোতিপ্রিয় ও সব্যসাচী কোনও অন্তর্ঘাত করেছেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন করলে তাঁর অবশ্য সাফ জবাব, ‘‘ওঁরা কী করেছেন, ওঁদেরই জিজ্ঞাসা করুন।’’ তা হলে ওই দুই বিধানসভাতেই কেন এত ভোটে হার হল? কাকলি বলেন, ‘‘সবে তো ফল বেরিয়েছে। কেন এমন ফল হল, কারা কী কী করেছে, তা দলীয় স্তরে পর্যালোচনা করা হবে।’’
তবে বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের দেগঙ্গার মতো সংখ্যালঘু এলাকায় একচ্ছত্র ভোট পেয়েছেন কাকলি। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ওই বিধানসভা এলাকা প্রায় ৭৪ হাজার ভোটে ‘লিড’ দিয়েছে তাঁকে। একই ভাবে মধ্যমগ্রাম বিধানসভায় প্রায় ৩৮ হাজার এবং রাজারহাট-নিউ টাউন এলাকায় প্রায় ২৪ হাজার ভোটে জয়ী হয়েছে তৃণমূল। সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে অবশ্য সংখ্যালঘু প্রসঙ্গে এড়িয়ে গিয়েছেন বিদায়ী সাংসদ। তবে ওই এলাকার মানুষ ও নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন তিনি।
জিতলেও অবশ্য এ দিন তেমন উল্লাস দেখা যায়নি তৃণমূলের সমর্থকদের মধ্যে। গণনা কেন্দ্রের সামনে সকালে ভিড় জমলেও দুপুর গড়াতেই তা ফিকে হতে শুরু করে। সন্ধ্যার পরে কাকলি এলে তাঁকে ঘিরে সবুজ আবির ও স্লোগানে মেতে ওঠেন কয়েক জন সমর্থক। কিন্তু তাতেও ছিল না জৌলুস। মোটের উপরে সারা দিন থমথমে ছিল বারাসত।