ভিআইপি রোডের ধারে পানশালাগুলিতে আইন ভেঙে শুধু গানের সঙ্গে নাচই নয়, মেয়ে পাচারের ঘটনাও ঘটত কি না, তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।
মাস কয়েক আগে ভিআইপি রোডের ধারে কৈখালি এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে কয়েক জন তরুণীকে উদ্ধার করে পুলিশ। তরুণীরা অভিযোগ করেন, জোর করে আটকে রেখে তাঁদের দিয়ে নাচ-গান করানো হচ্ছিল। এমনকী তাঁদের অন্য পানশালায় পাচার করার চেষ্টাও করছিলেন ওই পানশালা কর্তৃপক্ষ। ওই ঘটনায় কয়েক জনকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। পুলিশ জানাচ্ছে, ওই ঘটনার পরে ফের এমন কিছু ঘটেছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রবিবার রাতে নিয়ম ভেঙে পানশালা চালানো ও পরে থানায় গিয়ে পানশালা-কর্মীদের হামলায় ঘটনায় যে ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়, তাদের মধ্যে জগজিৎ সিংহ নামে এক অভিযুক্ত রয়েছেন। পুলিশ জেনেছে, জগজিতের নামে ভিআইপি রোডের বাগুইআটি থানা এলাকায় চারটি পানশালার লাইসেন্স রয়েছে। বিধাননগর কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘ভিআইপি রোডে জগজিৎ সিংহের নামে লাইসেন্সধারী সবক’টি পানশালাই নিয়ম না মেনে চলছিল বলে বারবার অভিযোগ উঠছিল। ওই পানশালাগুলিতে শুধু নাচগানই চলত, নাকি অন্য কোনও সমাজবিরোধী কাযর্কলাপও হতো, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’ পুলিশ সূত্রে খবর, জগজিতের ওই পানশালাগুলি থেকে নানা সময়ে বিভিন্ন দুষ্কৃতী ধরা পড়েছে। একটি পানশালায় এক নর্তকীকে নিয়ে গোলমালে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়। আর একটি পানশালায় বাউন্সারের সঙ্গে ঝামেলায় আর এক ব্যক্তির মৃত্যুর অভিযোগও ওঠে।
প্রশ্ন উঠেছে, এই পানশালাগুলোর বিরুদ্ধে যেখানে বহু দিন ধরেই অভিযোগ উঠছিল, সেখানে এত দিন পরে পুলিশের ঘুম ভাঙল কেন? বিধাননগরের গোয়েন্দাপ্রধান কঙ্করপ্রসাদ বারুই বলেন, ‘‘আচমকা কোনও অভিযান হয়নি। বারবার সতর্ক করার পরেও পানশালাগুলি নিয়ম না মানায় এই অভিযান শুরু হয়েছে।’’ বিধাননগর কমিশনারেটের এক কর্তার মতে, কলকাতা পুলিশ বারবার অভিযান করায় কলকাতার পানশালাগুলি অনেক নিয়ন্ত্রণে এসেছে। শহরতলি, বিশেষত বিধাননগর কমিশনারেট এলাকার পানশালাগুলিকেও নিয়ম মেনে চালানোর জন্য কী কী পদক্ষেপ করা হবে, সে ব্যাপারে বৈঠকে বসেন কমিশনারেটের কর্তারা। তার পরেই শুরু হয় অভিযান।
এক পুলিশকর্তার মতে ভিআইপি রোডের ওই পানশালাগুলির ক্ষেত্রে অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন জগজিৎ সিংহ। তাঁকে গ্রেফতার করার পরে এ বার ওই পানশালাগুলিকে অনেকটাই নিয়মের মধ্যে আনা যাবে বলে মনে করছেন বিধাননগরের পুলিশকর্তারা।
পানশালাগুলিতে বারবার হানা দেওয়া ও গ্রেফতারের ঘটনার পরে খুশি এলাকার বাসিন্দারাও। তেঘরিয়া, কৈখালি, নিউটাউন, বাগুইআটির বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, ওই পানশালাগুলির গণ্ডগোল অনেক সময়েই রাস্তায় নেমে আসত। ফলে যে সব বাসিন্দা রাতে বাড়ি ফিরতেন, তাঁরা বহু সময়ে গণ্ডগোলের মাঝে পড়ে যেতেন। এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘বিশেষত মহিলারা ভিআইপি রোডের মতো রাস্তাতেও নিরাপদ বোধ করতেন না। সব সময়ে পুলিশেরও দেখা মিলত না।’’ কৈখালির একটি আবাসনের এক বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘আবাসনের নীচেই গভীর রাত পর্যন্ত নাচগান ও হইহুল্লোড় চলায় রাতে ভাল করে ঘুম হতো না। এই নিয়ে স্থানীয় থানায় অভিযোগও করা হয়েছে।’’ এলাকাবাসীর আশা, এ বার পরিস্থিতি খানিকটা ভাল হবে।