ব্যস্ত প্ল্যাটফর্মেই আলপনা, পুজোয় মাতল ওরা

কাপড় দিয়ে আড়াল হয়েছে বিজ্ঞাপন। যেখানে-সেখানে পড়ে থাকা গুটখার প্যাকেট, মুড়ি মাখার ঠোঙার দেখা নেই।

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৩৩
Share:

আরাধনা: চলছে সরস্বতী পুজোর প্রস্তুতি। তদারকিতে কান্তাদেবী। শনিবার, দমদম জংশনে। ছবি: শৌভিক দে

পরিবেশটা যেন বদলে গিয়েছে!

Advertisement

কাপড় দিয়ে আড়াল হয়েছে বিজ্ঞাপন। যেখানে-সেখানে পড়ে থাকা গুটখার প্যাকেট, মুড়ি মাখার ঠোঙার দেখা নেই। পানের পিক সাফ করে চালের গুঁড়ো দিয়ে আঁকা হয়েছে আলপনা। শৌচাগারের কটু গন্ধ চাপা পড়েছে ধূপ-ধুনোয়।

শনিবার, চারপাশ সাফ করে দমদম স্টেশনে এ ভাবেই সরস্বতীর আরাধনায় মেতে ওঠে প্ল‌্যাটফর্মের মেয়েরা।

Advertisement

প্ল্যাটফর্মই তাদের ঘর। কারও কারও জন্ম হয়েছে এখানেই, কেউ বা এসে পড়েছে কোনও ভাবে। কারও বাবা-মা নেই, কারও থেকেও না থাকার মতোই। এই প্ল্যাটফর্মেই বেড়ে উঠছে সকলে মিলে। আগে স্টেশনে ভিক্ষে করেই দিন চলে যেত অধিকাংশের। পড়াশোনার সঙ্গে যোগাযোগই ছিল না। জীবনটা বদলে গিয়েছে কয়েক বছরে। দমদম স্টেশনের চাতালে, খোলা আকাশের নীচে পড়াশোনা শিখে সেই মেয়েদের কেউই আর ‘আনপড়’ নয়। সবাই স্কুলে যায়। সবচেয়ে ছোট ময়না এখন দ্বিতীয় শ্রেণি আর সবচেয়ে বড় প্রীতি, উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে এখন কলেজে।

এই মেয়েরাই বিদ্যাদেবীর আরাধনার আয়োজন করেছে তাদের ‘ঘর’ তথা ‘স্কুল’ প্ল্যাটফর্মে। নিজেদের হাতে পুজোর জোগাড় করেছে গুড়িয়া, দোয়েল, প্রিয়া, শবনমেরা। এ দিন সকলেই উপোস। কাকভোরে উঠে কাঁচা হলুদ গায়ে মেখে প্ল্যাটফর্মের কলে স্নান। নতুন জামাকাপড় পরে, সেজেগুজে তার পরে শুরু পুজোর জায়গা সাজানো।

আলপনা, ফুল দিয়ে সাজানোর পাশাপাশি সেখানে রয়েছে মেয়েদের হাতের কাজের প্রদর্শনীও। মেয়েরা তো শুধু পড়শোনা করে না, আরও অনেক কিছুতেই দক্ষ ওরা, বলছিলেন দিদিমণিরাই। আন্তর্জাতিক স্তরে মেলা, ক্যারাটে, সাঁতারের মতো বিভিন্ন ‘ইভেন্ট’-এ পাওয়া সোনা, রুপোর পদক তাই প্রদর্শনীতে সাজিয়ে দিয়েছেন দিদিমণিরাই।

মেয়েদের উৎসাহ দেখে পুজোয় এগিয়ে এসেছেন প্ল্যাটফর্মের হকারকাকু থেকে শুরু করে অনেকেই। মণ্ডপ সাজাতে মেয়েদের সাহায্যে এগিয়ে এসেচে লাল, ভোলাদা। মেয়েরা পরবে বলে হলুদ কাপড় কিনে আনা হয়েছে। রাত জেগে তা দিয়ে সালোয়ার-কামিজ বানিয়ে দিয়েছেন হাসানদা।

মেয়েদের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে ফল বাজার করেছেন মিতা (দত্ত) দিদিমণি। রাত জেগে খিচুড়ি, ভাজা, লাবড়া, চাটনি, পায়েস করেছেন কান্তা (চক্রবর্তী) দিদিমণি। কান্তাদেবী

বলেন, ‘‘বছর দশেক আগে ওদের প্রথম পুজোর সরস্বতী প্রতিমা ছিল ছোট্ট।’’ দশম শ্রেণির প্রিয়া, রিনারা জানাল, সরস্বতী মূর্তি এ বার তাদের মাথায়-মাথায়। কান্তাদিদিমণিদের ছায়ায় দমদমের প্ল্যাটফর্মে এ ভাবেই বেড়ে উঠছে শবনম, গুড়িয়ারাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন