ডেঙ্গি-মৃত্যুতে কাজ হয়নি, শুধুই স্তুতি

সামনে পড়ে এলাকার মানুষ, অনেকেই তাতে সুর মেলালেও মৃতার স্বামী রাজেশ বর্মণ ফোনে বলেন, ‘‘ভোট চাইতে এখন এসেছেন। বহু দিন থেকে শুনছি নদর্মা মাটির নীচে চলে যাবে। কাজ হল কই? এ সব করলেও যিনি মারা গিয়েছেন, তাঁকে তো ফেরানো যাবে না!’’

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৯ ০৪:০৫
Share:

এমনই খোলা নর্দমা ঘিরে প্রশ্ন বাসিন্দাদের। নিজস্ব চিত্র

ডেঙ্গিতে মৃতার আত্মীয়কে ক্ষতিপূরণের কথা বলে রোষের মুখে পড়েছিলেন তিনি। শুনতে হয়েছিল, ‘‘কিডনি বিক্রি করে আমরা আপনাকে টাকা তুলে দিচ্ছি। আমাদের মেয়েকে ফিরিয়ে দিন!’’ ভোটের আগে এলাকার পরিস্থিতি দেখতে বেরিয়ে সেই বেঙ্গল ল্যাম্প বস্তিতে গিয়েই কলকাতা পুরসভার ৯৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা মেয়র পারিষদ (রাস্তা) রতন দে ঘোষণা করলেন, ‘‘সমস্যার সমাধান করে দিয়েছি। এখন জঞ্জাল প্রতিদিন সাফ হচ্ছে, নর্দমাও মাটির নীচে চলে যাবে কয়েক দিনে!’’

Advertisement

সামনে পড়ে এলাকার মানুষ, অনেকেই তাতে সুর মেলালেও মৃতার স্বামী রাজেশ বর্মণ ফোনে বলেন, ‘‘ভোট চাইতে এখন এসেছেন। বহু দিন থেকে শুনছি নদর্মা মাটির নীচে চলে যাবে। কাজ হল কই? এ সব করলেও যিনি মারা গিয়েছেন, তাঁকে তো ফেরানো যাবে না!’’ গত নভেম্বরের শুরুতে বেঙ্গল ল্যাম্প বস্তিতে মৃত্যু হয় রাজেশের স্ত্রী দিশা বর্মন (২৪) নামে এক বধূর। বস্তিতে সব মিলিয়ে ২০০ ঘর লোকের বাস। এত জনের জন্য মাত্র একটি শৌচালয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, তার নিকাশি ব্যবস্থারও দুর্বিষহ অবস্থা। সেখানে ময়লা জমে থাকে বছরভর। কাউন্সিলরকে এলাকায় দেখাই যায় না। বারবার ময়লা পরিষ্কারের অনুরোধ জানালেও কাজ হয় না। রয়েছে পানীয় জল এবং আলোর সমস্যা।

সম্প্রতি ওই বস্তিতে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, আগের থেকে এলাকা পরিষ্কার করায় তৎপরতা বেড়েছে। চলতি মাসের শুরু থেকে তা আরও ঊর্ধ্বমুখী। দেখা গেল, বস্তিতে আলো বসানোর যে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল তা এত দিনেও বাস্তবায়িত হয়নি। হয়নি বস্তির খোলা নর্দমা ঢেকে দেওয়ার কাজও।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

নিজের জন্মদিন উপলক্ষে স্বামী, আড়াই মাসের ছেলে এবং চার বছরের মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়ি বেড়াতে এসেছিলেন দিশা। রাজেশ দাবি করেন, ‘‘এলাকার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্যই তাঁর স্ত্রীয়ের ডেঙ্গি হয়েছিল। দু’টি হাসপাতাল ঘুরে ডেঙ্গিতেই মৃত্যু হয়েছে দিশার।’’ যদিও হাসপাতালের তরফে মৃতার ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখা হয়েছিল, ‘এন এস-১ পজিটিভ। ভাইরাল ফিভার উইথ শক সিন্ড্রোম’। দিশার মৃত্যুর কয়েক দিন আগে ওই বস্তিতেই মৃত্যু হয়েছিল বিনোদ চৌধুরী (৪৩) নামে আরও এক জনের। বিনোদের মৃত্যুর জন্যও ডেঙ্গিকে দায়ী করেন প্রতিবেশীরা।

এলাকায় মৃত বিনোদের দোকান চালাচ্ছেন তাঁর আত্মীয়। দিশার পরিবার অন্যত্র উঠে গিয়েছে। রতনবাবুর কাছে ওই বস্তির ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘‘বস্তিতে ঘুরলেই বোঝা যায় আগের থেকে এখন অবস্থা ভাল। নর্দমাও ঢেকে দেওয়া হবে। দরপত্র হয়ে গিয়েছে। ভোট ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া যায়নি।’’

পরপর দু’টি মৃত্যুর পরে এলাকার অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি নিয়ে সরব হয়েছিলেন স্থানীয়েরা। মেয়র পারিষদ তথা এলাকার কাউন্সিলর রতনবাবুকেই সরাসরি নিশানা করেন অনেকে। অভিযোগ ওঠে, বস্তির পাশে বন্ধ হয়ে যাওয়া বেঙ্গল ল্যাম্প ফ্যাক্টরি নিয়েও। এক স্থানীয়ের কথায়, ‘‘বন্ধ ওই সংস্থার লাগোয়া পুকুরে পাক জমে রয়েছে। সেখানেই মশার আঁতুড়ঘর।’’ সেই সময়ে চাপে পড়ে বেঙ্গল ল্যাম্প কর্তৃপক্ষকে নোটিস ধরায় পুর প্রশাসন।

বস্তিবাসীদের বড় অংশের প্রশ্ন, ভোট পর্যন্ত ‘কাজ হবে’ আশ্বাসে কেটে যাবে। তার পরে? আদৌ কাজ হবে কি?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন