বৃষ্টির জলে ধুয়ে গেল বাজির দূষণ, স্বস্তি ফিরল প্রশাসনের

পর্ষদকর্তার ওই স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়া থেকেই বোঝা গেল, দিন রাত বৃষ্টি কালীপুজোয় উৎসবের মেজাজ পণ্ড করলেও, পর্ষদ স্বস্তিতে। বৃহস্পতিবার যথেচ্ছ বাজি পুড়ে ধোঁয়া হলেও সেই ধোঁয়াজনিত বাতাসের বিষ ধুয়ে মুছে দিয়েছে বৃষ্টি ও হাওয়া।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৫৩
Share:

—ফাইল চিত্র।

হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো বার্তাটা এলো শুক্রবার সাতসকালে। প্রেরক পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক কর্তা। ‘নবধারা জলে এসো করি স্নান। ধুয়ে যাক সব দূষণ।’ শেষে স্মাইলি।

Advertisement

পর্ষদকর্তার ওই স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়া থেকেই বোঝা গেল, দিন রাত বৃষ্টি কালীপুজোয় উৎসবের মেজাজ পণ্ড করলেও, পর্ষদ স্বস্তিতে। বৃহস্পতিবার যথেচ্ছ বাজি পুড়ে ধোঁয়া হলেও সেই ধোঁয়াজনিত বাতাসের বিষ ধুয়ে মুছে দিয়েছে বৃষ্টি ও হাওয়া। শুক্রবারও সকাল থেকে টানা বৃষ্টি। ফলে কাল, রবিবার যুবভারতীতে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের খেলার সময়ে শহরের বাতাসে দূষণ থাকবে না বলে পর্ষদ ধরেই নিচ্ছে।

কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নথি বলছে, শুক্রবার দুপুর ২টো নাগাদ কলকাতার ‘নির্মল বাতাসের সূচক’ ছিল ৮৬। যা কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের মাপকাঠিতে ‘সন্তোষজনক’। ওই সূচক ০ থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকলে ভাল, ৫১ থেকে ১০০-র মধ্যে থাকলে সন্তোষজনক।

Advertisement

আবার পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র জানাচ্ছেন, শুক্রবার বিকেল ৩টে নাগাদ বাতাসে ভাসমান সূক্ষ্মকণা বা পিএম ১০-এর পরিমাণ প্রতি ঘন মিটারে ২০ মাইক্রোগ্রামের নীচে নেমে গিয়েছিল। যেখানে ১০০ মাইক্রোগ্রাম এর সহনশীল মাত্রা। গত বছর কালীপুজোর পর দিন কলকাতায় পিএম ১০ ছিল ২৩৯ মাইক্রোগ্রাম, ২০১৫-তে ৩২০ মাইক্রোগ্রাম। কল্যাণবাবুর কথায়, ‘‘শনি ও রবিবার বৃষ্টি না হলেও রবিবার খেলার দিন শহরের বাতাস দূষিত হবে না।’’

বৃষ্টিতে অবস্থা ভাল হল কেন?

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, জলের সংস্পর্শে এসে বাতাসে ভাসতে থাকা কণা এমনিতেই ভারী হয়ে যায়। ভেজা কণায় কণায় ঠোকাঠুকি লেগে জুড়ে গিয়ে তা আরও ভারী হয়ে মাটিতে নেমে আসে। আবার গাড়ি ও মানুষের চলাচলের ফলে মাটিতে থাকা ভিজে যাওয়া কণাও উড়তে পারছে না।

বৃহস্পতিবার বৃষ্টি শুরুর আগে পর্ষদ কিন্তু এক রকম ‘কাঁটা’ হয়ে ছিল। বিশ্বকাপের খেলা আছে, এমন সব শহরের বাতাস যাতে নির্মল থাকে, তা নিশ্চিত করতে সেই রাজ্যগুলির পর্ষদকে নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। কারণ, ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা, ফিফা, ভারতের বায়ুদূষণ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল। কাজেই, বিষয়টি ছিল রাজ্য তথা দেশের ভাবমূর্তির প্রশ্ন। সে জন্য সল্টলেক স্টেডিয়াম ও তার পাঁচ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে সব রকম বাজি ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে দুর্গাপুজোর আগে স্কুলে স্কুলে প্রচার শুরু করে পর্ষদ। পরিবেশমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ও জানান, স্টেডিয়ামের আশপাশে এ বার কালীপুজোয় বাজি পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

সেই নিয়ন্ত্রণ অবশ্য থাকেনি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত স্টেডিয়ামের আশপাশে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বাজি পুড়েছে, ফেটেছে অবিরত। কিন্তু অবিরাম বৃষ্টি বাজির বিষ ধুয়ে দিয়েছে বাতাস থেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন