Coronavirus

করোনা-আতঙ্কে শেষ যাত্রার ভরসা বাপিরা-ই

বাবুদের অবশ্য রাতদিন মৃতদেহ ঘেঁটে ঘেঁটে সয়ে গিয়েছে।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২০ ০৫:২৮
Share:

শববাহী গাড়ি জীবাণুমুক্ত করার কাজ চলছে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

বাবু মালির পৌঁছনোর খবর পেয়ে তিনতলা থেকে নেমে এলেন ৯০ বছরের বৃদ্ধ। বাবু ও তাঁর সঙ্গী সুরজিৎ রায়কে উপরে ইশারায় ডেকে নিলেন তিনি।

Advertisement

তিনতলার ঘরে তখন শোয়ানো বৃদ্ধের বছর পঁচাশির সহধর্মিণীর নিথর দেহ। বাড়িতে থাকা আত্মীয়, এমনকি বৃদ্ধ দম্পতির সন্তানেরাও তখন করোনা ‘সচেতনতায়’ ছুঁতে রাজি নন বৃদ্ধাকে।

বাবুদের অবশ্য রাতদিন মৃতদেহ ঘেঁটে ঘেঁটে সয়ে গিয়েছে। রাত-বিরেতে ফোন পেলেই শববাহী গাড়ি নিয়ে তাঁরা ছুটে যাচ্ছেন বাড়ি, হাসপাতাল, মর্গে। একটি দেহ শ্মশানে পৌঁছে দেওয়ার আগেই চলে আসছে অন্য ফোন।

Advertisement

সে দিন বাবু ও সুরজিৎ মিলে বৃদ্ধার দেহ নামিয়ে আনেন নীচে। তার আগে বিশেষ পোশাক পরে নেন। তাঁদের সঙ্গে শ্মশান পর্যন্ত যান সদ্য স্ত্রী-হারা নবতিপর স্বামী, একা! শ্মশানের প্রাথমিক কাজও বাবুরাই করে দেন। বৃদ্ধের জন্য অটোর ব্যবস্থা করে দিয়ে ফের তাঁরা ছোটেন অন্য দেহ আনতে।

বাবুদের দলনেতার নাম দেবাশিস মহন্ত। লোকে অবশ্য তাঁকে চেনেন ‘বাপি’ নামে। শববাহী গাড়ি নিয়ে ছুটে চলা টুপি মাথায়, মিতভাষী বাপিকে চেনে না এমন হাসপাতাল, শ্মশানঘাট এ শহরে কমই আছে। নিমতলার একটি সর্বজনীন পুজো কমিটির ছোট ঘরে ২৪ মার্চ থেকে নিজেদের সংসার পেতেছেন বাপিরা। সংসার বলতে জনা বারো যুবক। সেখানেই চলছে রান্না। ফোন এলে সেখান থেকেই ছুটছেন শববাহী গাড়ি নিয়ে।

বাপির কথায়, “আমাদের প্রত্যেকের বাড়িতেই বয়স্ক বাবা-মা অথবা ছোট বাচ্চা রয়েছে। লকডাউন শুরু হতেই সিদ্ধান্ত নিই, আপাতত কেউ বাড়ি যাব না। সারাদিন তো মৃতদেহ নিয়েই ছুটছি। এম আর বাঙুর হাসপাতালে কোভিড সন্দেহে ভর্তি হওয়া রোগী, মৃত্যুর পরে যাঁর রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে, সেই দেহও তো তুলে নিয়ে গিয়েছি। আমাদের সংক্রমণ যখন তখন হতে পারে। তাই পরিবারকে বাঁচাতে এই সতর্কতা।”

করোনা রোগীদের মৃতদেহ বহন করছে শুধু পুরসভার গাড়ি। কিন্তু, বাকি দেহ বহনের দায়িত্ব পড়েছে বাপিদের উপরে। ১২টি শববাহী গাড়ি ছাড়াও তিনটি অ্যাম্বুল্যান্সও রয়েছে বাপিদের। বাপির কথায়, “নিজেদের জন্য যতটা সম্ভব সতর্ক থাকছি। ছেলেদের ৮০টি পিপিই কিনে দিয়েছি। গ্লাভস, মাস্ক তো রয়েইছে। প্রতিবার শ্মশান ঘুরে আসার পরে গোটা গাড়ি স্যানিটাইজ় করা হচ্ছে। এমনকি ক্লাবঘরও নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে।”

এখন মোবাইল ফ্রিজার বাক্স ভাড়া দিতে শুরু করেছেন বাপি। নিকটাত্মীয়ের বাইরে থেকে আসার অপেক্ষায় দিন কয়েক দেহ সংরক্ষণের জন্য যাতে বাড়িতেই রাখা যায়, তাই এই ব্যবস্থা। হায়দরাবাদ থেকে আনা হয়েছে ওই ফ্রিজ়ার। বাপির কথায়, টাকা সামান্য হলেও এই কাজে মনের শান্তি আছে। আসল হল মানুষের পাশে থাকা। তবে প্রাপ্য সম্মান না পেলে কষ্ট হয় অবশ্যই, জানালেন বাপি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন