পটুয়াপাড়ায় দুর্গা হচ্ছেন জগদ্ধাত্রী

ভেল্কি নয়! যে কোনও পটুয়াপাড়ায় বরাবর এটাই রীতি। যে প্রতিমা বিক্রি হয় না, তার ভোল পাল্টে অন্য প্রতিমায় রূপান্তরিত করা হয়। তাই বিশ্বকর্মা কখনও হয়ে যান কার্তিক। কালীকে হতে হয় মনসা।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৭ ০৫:০০
Share:

রূপ বদল। ফাইল চিত্র

এ যেন সেই ছিল রুমাল, হয়ে গেল বিড়ালের গপ্পো!

Advertisement

ক’দিন আগেই দশভুজা দুর্গা হয়ে যিনি অসুর দমনে উদ্যত ছিলেন, তিনিই হয়তো এখন চতুর্ভুজা জগদ্ধাত্রী হয়ে শোভা পাচ্ছেন। যে লক্ষ্মী বাহন পেঁচাকে নিয়ে পদ্মাসনে আসীন ছিলেন, তিনিই হয়তো এখন রাজহাঁস আর বীণা বাগিয়ে সরস্বতী হয়ে গিয়েছেন।

ভেল্কি নয়! যে কোনও পটুয়াপাড়ায় বরাবর এটাই রীতি। যে প্রতিমা বিক্রি হয় না, তার ভোল পাল্টে অন্য প্রতিমায় রূপান্তরিত করা হয়। তাই বিশ্বকর্মা কখনও হয়ে যান কার্তিক। কালীকে হতে হয় মনসা।

Advertisement

কিন্তু জিএসটি আর নোট বাতিলের জোড়া গেরোয় চলতি বছরে কুমোরটুলির ব্যবসা-ভাগ্যে ভাটার টান। প্রতি বছরই কিছু সংখ্যক প্রতিমা অবিক্রিত রয়ে যায়। কিন্তু এ বছর সেই সংখ্যাটা অন্য বছরের থেকে অনেকটাই বেশি। রেকর্ড সংখ্যক লক্ষ্মী প্রতিমাও স্টুডিওয় রয়ে গিয়েছে। তাই বাধ্য হয়েই এখন দুর্গা ও লক্ষ্মীকে জগদ্ধাত্রী ও সরস্বতীতে বদলে ফেলছেন মৃৎশিল্পীরা।

কুমোরটুলি সূত্রের খবর, এ বছর সেখানে প্রায় ২০টি দুর্গা প্রতিমা বিক্রি হয়নি। প্রবীণ শিল্পী নিমাই পাল প্রতি বছর যে ক’টি দুর্গা প্রতিমা তৈরি করেন, তার সবই বিক্রি হয়ে যায়। কিন্তু এ বার তা হয়নি। ২২টি প্রতিমা তৈরি করলেও তিনটি প্রতিমা এখনও নিমাইবাবুর স্টুডিওয় পড়ে রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও শিল্পীই ক্ষতি করে ব্যবসা চালাতে চান না। প্রতিমা বিক্রি না হওয়ায় আমার প্রায় দু’লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়েছে। তাই তিনটি দুর্গা প্রতিমাকে জগদ্ধাত্রী বানিয়ে বিক্রি করতে চাইছি।’’ এ বছর কুমোরটুলির প্রায় তিনশো লক্ষ্মী প্রতিমাও বিক্রি হয়নি। ওই সব লক্ষ্মীকে সরস্বতীর রূপ দিয়েই বিক্রি করতে চাইছেন শিল্পীরা। কুমোরটুলি মৃৎশিল্প সাংস্কৃতিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক বাবু পালের কথায়, ‘‘এ বছর রেকর্ড সংখ্যক দুর্গা ও লক্ষ্মী বিক্রি হয়নি। এই পরিস্থিতিতে সেগুলিকে জগদ্ধাত্রী ও সরস্বতীতে রূপান্তরিত না করলে শিল্পীরা প্রচুর লোকসানের মুখে পড়বেন।’’

শিল্পীরা জানাচ্ছেন, লক্ষ্মীকে সরস্বতীর রূপ দেওয়ার তুলনায় দুর্গাকে জগদ্ধাত্রীর রূপ দেওয়ার কাজে পরিশ্রম বেশি। লক্ষ্মী-সরস্বতীর মুখের আদল একই। কেবল বাহন পেঁচার জায়গায় হাঁস আর হাতে বীণা বসালেই সে হয়ে যাবে সরস্বতী।
অন্য দিকে, দুর্গাকে জগদ্ধাত্রীতে পরিণত করতে দশটি হাত কমিয়ে চারটি করতে হবে। অসুর ও মহিষ থেকে হাতি তৈরি করতে হবে। শিল্পী মিন্টু পালের কথায়, ‘‘দুর্গার মুখশ্রীর সঙ্গে জগদ্ধাত্রীর মুখের তফাত নেই। কেবল দুর্গার হাতের সংখ্যা কমিয়ে অসুর আর মোষ বাদ দিয়ে হাতি বানিয়ে ফেললেই হল। দুর্গা হয়ে যাবেন জগদ্ধাত্রী।’’

তবে কুমোরটুলির শিল্পীদের একাংশ জানাচ্ছেন, দুর্গা আর জগদ্ধাত্রী পুজোয় দিনের ফারাক বেশি নয় বলে ক্রেতাদের সম্মতি নিয়েই এই ভোলবদল হয়। কুমোরটুলি মৃৎশিল্প সাংস্কৃতিক সমিতির সম্পাদক রঞ্জিত সরকারের কথায়, ‘‘লক্ষ্মীকে সরস্বতী বা সরস্বতীকে লক্ষ্মী বানাতে কোনও সমস্যা নেই। তবে, দুর্গাকে জগদ্ধাত্রীতে পরিণত করার আগে ক্রেতার সম্মতি নিয়ে নেওয়া হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন