কম্পিউটারে হ্যাকারের হানা নিয়ে ইতিমধ্যেই সতর্কবার্তা দিয়েছেন গোয়েন্দারা। এ বার তাঁদের মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে স্মার্টফোনও! কারণ এখন সরাসরি স্মার্টফোনেই বাসা বাঁধছে হ্যাকারেরা। কখনও আবার আঘাত হানছে সেটির তথ্য-ভাণ্ডারে! যার ফলে সাইবার দুনিয়ায় নতুন সিঁদুরে মেঘ দেখছে লালবাজার।
কলকাতার উইমেন্স ক্রিশ্চান কলেজের সমাজতত্ত্ব বিভাগে শুক্রবার সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে একটি আলোচনাসভায় কলকাতা পুলিশের সাইবার থানার ওসি সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে ই-মেলে হানা দিচ্ছে হ্যাকারেরা। সম্প্রতি তা হচ্ছে স্মার্টফোনেও। এটি সাইবার অপরাধের নতুন ট্রেন্ড।”
কলকাতার মতো মহানগরগুলির ক্ষেত্রেই এই প্রবণতা বেশি বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। কলকাতায় ‘অ্যাপ্লিকেশন’ হ্যাক করার ঘটনা নিয়ে এখনও খাতায়-কলমে কোনও অভিযোগ পায়নি লালবাজার। তবে গোয়েন্দাদের ধারণা, এ ধরনের অপরাধ ইতিমধ্যেই বাসা বেঁধেছে শহরে।
সাইবার বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার যত বাড়ছে, ততই বাড়ছে সাইবার অপরাধের হারও। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর রিপোর্টেও সাইবার অপরাধ বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু স্মার্টফোনকেই কেন নিশানা করছে দুষ্কৃতীরা? কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা অফিসারেরা জানান, ইদানীং স্মার্টফোনেই ইন্টারনেট, ই-মেল ব্যবহার করেন মানুষ। এসএমএস-এর বদলে বাড়ছে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে মেসেজ পাঠানোর রীতি। তাই সহজে ব্যাঙ্ক ও ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিতে স্মার্টফোনকেই নিশানা করছে দুষ্কৃতীরা। ই-মেল হ্যাকের ক্ষেত্রে যেমন ‘ফিশিং’ মেল পাঠানো হয়, তেমনই এখানেও অ্যাপ্স ব্যবহার করে ‘ফিশিং’ মেসেজ পাঠায় হ্যাকারেরা। সেই মেসেজে থাকে নানা লোভনীয় ‘লিঙ্ক’। ভুল করে তাতে ক্লিক করলেই হ্যাকারদের মুঠোয় চলে যেতে পারে গ্রাহকের মোবাইল। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, “বেশির ভাগ অ্যাপ্সের অফিস এ দেশে নেই। ফলে এ ধরনের অপরাধে তথ্য জোগাড় করতে কালঘাম ছুটে যায়।”
সাইবার আইন ও ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায় অবশ্য এই আশঙ্কাকে আরও এক ধাপ বাড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি জানান, মোবাইলের অ্যাপ্সে ব্যবহার করা তথ্য জমা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সংস্থার সার্ভারে (প্রযুক্তির ভাষায়, ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবস্থা)। অনেকেই নিজের ব্যক্তিগত ছবি বা তথ্য অ্যাপ্সের মাধ্যমে সংস্থার সার্ভারে গচ্ছিত রাখেন। তাতে হ্যাকার হানা হলে কিন্তু বড় বিপদ ঘটতে পারে। তা হলে বাঁচার উপায় কী? পুলিশকর্তারা জানাচ্ছেন, স্মার্টফোন ও অ্যাপ্স ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে সচেতন থাকতে হবে। ছাত্রীদের কলেজের প্রধান হিসেবে একই মত অজন্তা পালেরও। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশের কী কিছুই করার নেই?
এক গোয়েন্দা-কর্তার কথায়, “সম্প্রতি অ্যাপলের সার্ভার হ্যাক হয়েছিল। ফলে বহু তারকার ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই তদন্তে নেমেও এর বিশেষ সুরাহা করতে পারেনি।”