বৃদ্ধার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার

এক বৃদ্ধার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল। রবিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে গরফা থানা এলাকার নস্করপাড়ায়। মৃতার নাম দীপ্তি মৈত্র (৬৫)। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:১১
Share:

দীপ্তি মৈত্র

এক বৃদ্ধার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল। রবিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে গরফা থানা এলাকার নস্করপাড়ায়। মৃতার নাম দীপ্তি মৈত্র (৬৫)।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, দীপ্তিদেবীর বাড়ির কোল্যাপসিব্‌ল গেটে গামছা জড়ানো অবস্থায় উদ্ধার হয় দেহটি। ঘটনাস্থল থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের ধারণা, একাকিত্বের জেরে অবসাদে ভুগে আত্মঘাতী হয়েছেন ওই বৃদ্ধা। তবে মৃত্যুর আসল কারণ জানতে দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে। সেই সঙ্গে ঘটনাটির তদন্তও শুরু করেছে পুলিশ।

মৃতার পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, নস্করপাড়ায় বহু বছর ধরেই থাকতেন দীপ্তিদেবী। নব্বইয়ের দশকে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়। তার পর থেকে কার্যত লড়াই করে দুই ছেলেকে বড় করেছেন তিনি। বর্তমানে কর্মসূত্রে দু’জনেই মুম্বইয়ে থাকেন। এক বৌমা থাকেন ওই পাড়াতেই। অন্য জন থাকেন খড়্গপুরে। বছর খানেক আগে তাঁদের পুরনো বাড়ি ভেঙে সেখানেই হয়েছে চারতলা আবাসন। দীপ্তিদেবী থাকতেন সেই আবাসনের নীচের তলায়। স্থানীয়েরা জানান, একাকিত্ব কাটাতে তাঁর দুই বোনের পরিবারকেও নিয়ে আসেন ওই আবাসনে। কিন্তু তাও একাকিত্ব কাটেনি।

Advertisement

মৃতার ছোট বোন কাজল দাস থাকেন ওই আবাসনের তিনতলায়। তিনি জানান, অন্য দিনের মতো এ দিন সকাল সওয়া ৬টা নাগাদ তিনি নীচে নামেন। লিফট থেকে নেমেই বাঁ দিকের ঘরে দীপ্তিদেবী থাকতেন। তাঁর দাবি, সেখানে যেতেই তিনি দেখেন, দীপ্তিদেবী গলায় গামছা জড়ানো অবস্থায় কোল্যাপসিব্‌ল গেটে ঝুলছেন। চিৎকার করে তড়িঘড়ি কোলে নিয়ে দিদির গলার ফাঁস ছাড়ান বোন। তিনি বলেন, ‘‘গামছাটা ভিজে ছিল। দিদির শরীরও তখন ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে। পা ঠেকে ছিল মাটিতে।’’ তাঁর চিৎকার শুনে পড়শিরা চলে আসেন। এর পরে এম আর বাঙুর হাসপাতালে তাঁকে নিয়ে গেলে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। খবর দেওয়া হয় পুলিশকে।

পরিবারের দাবি, অবসাদই কেড়ে নিল ওই বৃদ্ধার প্রাণ। স্থানীয় বাসিন্দা শিখা বিশ্বাস জানান, দীপ্তিদেবী প্রায়ই তাঁকে বলতেন কানে কিছু শুনতে পান না। মাথার ভিতরে যন্ত্রণা হয়। শিখাদেবী বলেন, ‘‘প্রায়ই আমাকে বলত, ‘আমি এ ভাবে বাঁচতে চাই না। কারও কথা শুনতে পাই না। টিভি দেখতেও ভাল লাগে না। কিছুই তো শুনি না।’ আমি অনেক বোঝাতাম। কিন্তু ভাবিনি, সত্যিই এমন ঘটবে।’’

কাজলদেবী জানান, দু’-এক বার ছেলেরা মাকে মুম্বইতে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুতেই সেখানে থাকতে চাইতেন না দীপ্তিদেবী। পরিবার সূত্রে খবর, এক বার পড়ে গিয়ে কানে চোট পেয়েছিলেন দীপ্তিদেবী। তার পর থেকেই ভাল ভাবে শুনতে পেতেন না। লিখে এবং ইশারায় তাঁর সঙ্গে কথা বলতে হত। কাজলদেবী বলেন, ‘‘ছেলেরা ভিডিয়ো কল করলেও দিদি বলত, ‘কেন ফোন করিস? কিছুই তো শুনতে পাই না’। এই শুনতে না পাওয়াটাই দিদিকে শেষ করে দিল। অনেক চিকিৎসা হয়েছে। কিন্তু ভাল হয়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন