‘হ্যাপি বার্থডে ম্যাম! আগে তো কেক কাটুন, কেস পরে’

পুলিশে ছুঁলে কত ঘা? আঠেরো, না ছত্রিশ! ভাবতে ভাবতেই দুরু দুরু বুকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাস ধরেছিলেন রিয়া কারক। জ্বর গা। মাথা ঘুরছে। তবু পুলিশ বলে কথা! কাঁপা-কাঁপা গলায় স্বামী সুরজিৎ কারকের ফোনটা পেয়ে আর দেরি করার সাহস হয়নি বছর আঠাশের তরুণীর। তার পরে?

Advertisement

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৬ ০১:৪৭
Share:

পথে হল পার্টি। — নিজস্ব চিত্র

পুলিশে ছুঁলে কত ঘা? আঠেরো, না ছত্রিশ!

Advertisement

ভাবতে ভাবতেই দুরু দুরু বুকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাস ধরেছিলেন রিয়া কারক। জ্বর গা। মাথা ঘুরছে। তবু পুলিশ বলে কথা! কাঁপা-কাঁপা গলায় স্বামী সুরজিৎ কারকের ফোনটা পেয়ে আর দেরি করার সাহস হয়নি বছর আঠাশের তরুণীর। তার পরে?

রিয়া বা তাঁর স্বামী সুরজিতের কাছে ‘পুলিশ’ শব্দটার মানেই এখন পাল্টে গিয়েছে। সৌজন্যে কলকাতা পুলিশের শিয়ালদহ ট্রাফিক গার্ডের সার্জেন্ট পিঙ্কু দেবনাথ। ‘ওয়ান ওয়ে’র নিয়ম ভাঙার জন্য পিঙ্কুই পাকড়েছিলেন সুরজিৎকে। ওই যুবকের কাছে গাড়ির কাগজপত্র ছিল না কিছুই। অগত্যা সেই কাগজের খোঁজেই রিয়াকে ফোন করতে হয়।

Advertisement

সেটা শুক্রবার সন্ধেবেলা। কলেজ স্ট্রিট-মহাত্মা গাঁধী রোডের মোড়েই নাটকের সূচনা।

ঘটনাচক্রে সেটাই রিয়ার জন্মদিন। স্ত্রীর জন্মদিন উদ্‌যাপনের একটা ব্যবস্থা করেই বেরিয়েছিলেন সুরজিৎ। রিয়ার বাপের বাড়িতেই সে দিন ওঁরা ছিলেন। সকালে গুছিয়ে বাজার সেরে অফিসে বেরোন সুরজিৎ। অপেক্ষা করছিলেন রিয়া। সুরজিৎ ফিরলেই জমবে ঘরোয়া ‘বার্থ ডে পার্টি’! হঠাৎ ফোনটা এসেই ঘটল ছন্দপতন।

‘‘মনে মনে ভাবছিলাম, আমার জন্মদিনেই এমন ভোগান্তি!’’— শনিবার দুপুরে বলছিলেন রিয়া। সুরজিতের কথায়, ‘‘সাধারণত বাইকের কাগজ নিতে কখনও ভুল হয় না আমার। অফিসে মান্থলি ক্লোজিংয়ের চাপ! রিয়ার জন্মদিনে সকাল সকাল বাজার করার ব্যস্ততায় ভুলটা হয়ে যায়।’’ কাগজপত্র ছাড়াই মোটরবাইক নিয়ে অফিসে বেরিয়ে গিয়েছিলেন সুরজিৎ। তিনি জানিয়েছেন, প্রথমে কলেজ স্ট্রিটে ঢোকার চেষ্টা করে এগোতে পারেননি। অগত্যা মহাত্মা গাঁধী রোড ধরে ঢোকেন তিনি। ওই রাস্তায় যে তখন মোটরবাইকের জন্য ‘ওয়ান ওয়ে’, তা খেয়াল করেননি সুরজিৎ।

ওই তল্লাটে কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট পিঙ্কুর বক্তব্য, সাধারণত ওয়ান ওয়ে-র নিয়ম ভাঙলে জরিমানা করা হয়। আর কাগজপত্র দেখাতে না-পারলে মোটরবাইক বা গাড়ি বাজেয়াপ্ত করা ছাড়া উপায় থাকে না। কাগজপত্র সঙ্গে না-থাকায় সুরজিৎ তাই নিরুপায় হয়ে স্ত্রীকে ফোন করে সে-সব নিয়ে আসতে বলেন। এর পরেই ওই পুলিশ অফিসার জানতে পারেন, বিশেষ দিনের বিষয়টা।

পিঙ্কুর কথায়, ‘‘ভদ্রলোকের (সুরজিৎ) ব্যবহার খুব ভাল। উনি সহযোগিতা করছিলেন। বাড়িতে ফোন করার পরে একটু আফশোসের সুরে আমাদের বলেন, ওঁর স্ত্রী-র জন্মদিনের কথা। এমন দিনে মহিলাকে ছুটোছুটি করতে হচ্ছে।’’ তত ক্ষণে রিয়া বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছেন। পিঙ্কু ঠিক করে ফেলেন, কী করতে হবে। তরুণীকে জন্মদিনে ‘সারপ্রাইজ’ দিতে চুপি চুপি কাছেই একটি দোকান থেকে চকোলেট কেক নিয়ে আসেন ওই পুলিশ অফিসার।

রিয়া আসতেই শুরু হয় সেলিব্রেশন।ওঁকে চমকে দিয়ে সার্জেন্ট বলেন, ‘‘হ্যাপি বার্থডে ম্যাডাম! আসুন আগে এই কেকটা কেটে ফেলুন। কেস পরে হবে।’’ রিয়া-সুরজিৎ, সার্জেন্ট পিঙ্কু ছাড়া কনস্টেবল রফিকুল ও কয়েক জন স্থানীয় বাসিন্দা। কেক কাটা, গান, হাততালি..! এমন অপ্রত্যাশিত জন্মদিন পালনে অভিভূত রিয়া ও সুরজিৎ।

স্মিত হেসে পিঙ্কু বলছেন, ‘‘আমি নিজেও বৌ-বাচ্চা নিয়ে সংসার করি। জন্মদিনের দিন ওঁদের এ ভাবে দৌড়ঝাঁপ করতে হচ্ছে দেখে খুব খারাপ লাগছিল। তাই তখনই ‘সারপ্রাইজ পার্টি’টা ঠিক করে ফেলি।’’ রক্তে চিনির জন্য কেক খান না রিয়া। কিন্তু সে দিন সামান্য চেখেছেন। এখন সুরজিৎ আর রিয়া এই ‘পুলিশবন্ধু’দের শীঘ্র বাড়িতে ডেকে পাত পেড়ে খাওয়াতে চান। পুলিশের এই মানবিক মুখটাই মনে রাখতে চান তাঁরা। তবে নিয়ম মেনে সুরজিৎকে কেসও দিয়েছেন সার্জেন্ট পিঙ্কু।পুলিশকর্তারা মনে করেন, ট্রাফিক পুলিশই কলকাতা পুলিশের মুখ। এই রকম ঘটনা যত ঘটবে ততই পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন