হাজরা রোডের ৭৭/২এ বাড়ির গায়ে লাগানো হয়েছে ৭৭/২বি এবং ৭৭/২সি লেখা বোর্ড। প্রতীকী ছবি।
শরিকি বিবাদ এমন চরমে উঠেছে যে, এক শরিককে জব্দ করতে অন্য শরিক বাড়ির ঠিকানাই পাল্টে দিয়েছেন বলে অভিযোগ!
হাজরা রোডের ৭৭/২এ বাড়ির গায়ে লাগানো হয়েছে ৭৭/২বি এবং ৭৭/২সি লেখা বোর্ড। এই ঘটনায় ওই বাড়ির এক শরিক রবীন্দ্র সরোবর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ পুরসভার দ্বারস্থ হয়। অভিযোগকারীর করা আরটিআই-এর উত্তরে পুরসভা জানিয়েছে, ৭৭/২বি বাড়িটি থাকলেও তার সঙ্গে ৭৭/২এ বাড়ির কোনও যোগ নেই। তেমনই ৭৭/২সি বাড়ির অস্তিত্বই নেই তাদের খাতায়!
পুলিশ সূত্রের খবর, হাজরা রোডের ৭৭/২এ বাড়িটি নিয়ে শরিকদের বিবাদ চলছে দীর্ঘদিন। মামলা চলার পাশাপাশি প্রায়ই এ নিয়ে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ দায়ের হচ্ছে থানায়। তারই নবতম সংযোজন এই ঠিকানা বদলের অভিযোগ। পুলিশ সূত্রের দাবি, সুব্রত দাস নামে এক শরিক অভিযোগ দায়ের করেছেন সুবীর বিশ্বাস নামে আরেক শরিকের বিরুদ্ধে। তিনিই পুরসভায় তথ্য জানার অধিকার আইনেও আবেদন করেছেন। সেই আবেদনের উত্তরেই পুরসভা জানিয়েছে, ‘হাজরা রোডে ৭৭/২এ নম্বরের বাড়ি রয়েছে। তার পাশে ৭৭/২এ/১ নম্বর আরও একটি বাড়ি ছিল বহু আগে। সেই বাড়ি এখন অন্য বাড়ির সঙ্গে জুড়ে ৭৭/২বি হয়ে গিয়েছে। তবে তা ৭৭/২এ বাড়ির অংশ নয়। তেমনই ৭৭/২সি নম্বরের বাড়িরও কোনও হদিস নেই পুর খাতায়।’
তা হলে ভুয়ো ঠিকানার বোর্ড টাঙানো কেন?
পুলিশ সূত্রের খবর, ১৯৪৯ সালে হাজরা রোডে জমি কিনেছিলেন যতীন্দ্রমোহন দাস নামে এক ব্যক্তি। পরে ৭৭/২এ এবং ৭৭/২এ/১ ঠিকানায় দু’টি বাড়ি করেন তিনি। ১৯৮৮ সালে ৭৭/২এ/১ বাড়িটি বিক্রি করে দেন যতীন্দ্রমোহনবাবু। পাশেই ৭৭/২বি নম্বর বাড়ির এক বাসিন্দা সেটি কিনে ৭৭/২বি করে নেন। ৭৭/২এ বাড়িটি দুই ছেলে এবং দুই মেয়ের মধ্যে ভাগ করে দেন যতীন্দ্রমোহনবাবু। সেই সূত্রে বাড়িটি পেয়েছেন সুব্রতবাবু এবং সুবীরবাবুরা।
সুব্রতবাবুর অভিযোগ, ‘‘আমাদের হেনস্থা করতেই সুবীর ভুয়ো নম্বরের বোর্ড লাগিয়েছেন বাড়ির দরজায়। থানায় অভিযোগ করেছি।’’ তাঁর আরও দাবি, বাড়িটি এত দিন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ভাড়া দেওয়া ছিল। ব্যাঙ্ক ছেড়ে দেওয়ার পরে বাড়িতে এখন থাকতে চান তাঁরা। বাধা দিচ্ছেন সুবীরবাবুরা। জলের সংযোগ বন্ধ করে রেখেছেন তিনি। ছাদে যাওয়ার রাস্তাও আটকে সুবীরবাবু ঝামেলা করছেন বলে সুব্রতবাবুর অভিযোগ। পুলিশের দাবি, এ নিয়ে সম্প্রতি হাতাহাতিও হয় অভিযোগ প্রসঙ্গে সুবীরবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘একটি ট্রাস্টের অধীনে রয়েছে বাড়িটি। কোনও শরিকের থাকায় সমস্যা নেই। কিন্তু বাড়িতে আমার আনা জল বাকিদের ব্যবহার করতে দেব না।’’ কিন্তু ভুয়ো নম্বর টাঙালেন কেন?
সুবীরবাবু বললেন, ‘‘যে ঠিকানা টাঙিয়েছি তা এখনও রয়েছে। পুরসভা জানে না। পুরসভার পুরনো রেকর্ডে সব আছে।’’ তাহলে পুরসভার আরটিআইএ-এর উত্তরকে কেন চ্যালেঞ্জ করছেন না? সুবীরবাবুর জবাব, ‘‘বিষয়টা দেখতে হবে।’’