মা-শিশুর মৃত্যু কমাতে স্বাস্থ্যকর্মীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ

বাড়তি একটি টাকারও প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন নেই বাড়তি লোকবলও। যা দরকার তা হল, কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করা। আর তাতেই নাকি আসতে পারে ম্যাজিকের মতো সাফল্য! রাজ্যে মা ও নবজাতকের মৃত্যু-হার কমাতে এই নতুন ‘ম্যাজিক ওষুধেই’ ভরসা রাখতে চায় স্বাস্থ্য দফতর।

Advertisement

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:০০
Share:

প্রতীকী ছবি।

বাড়তি একটি টাকারও প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন নেই বাড়তি লোকবলও। যা দরকার তা হল, কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করা। আর তাতেই নাকি আসতে পারে ম্যাজিকের মতো সাফল্য! রাজ্যে মা ও নবজাতকের মৃত্যু-হার কমাতে এই নতুন ‘ম্যাজিক ওষুধেই’ ভরসা রাখতে চায় স্বাস্থ্য দফতর। তাই বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ ও জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স এবং লেবার রুমের কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করতে এ বার কলকাতায় বিশেষ ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কী ভাবে দৈনন্দিন কাজের প্রক্রিয়ায় ছোটখাটো বদল এনে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বড়সড় উন্নতি ঘটানো যেতে পারে, সে ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেবেন কলকাতা ও দিল্লির বিশেষজ্ঞেরা।

Advertisement

এসএসকেএম হাসপাতালের নবজাতক বিভাগে দু’দিন ধরে চলবে ওই প্রশিক্ষণ। দিল্লির ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস’ (এইমস) এবং হায়দরাবাদের একটি হাসপাতাল থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা আসবেন। প্রশিক্ষণ নিতে মোট ১০টি হাসপাতালের স্ত্রী রোগ চিকিৎসক, নার্স এবং লেবার রুম কর্মীদের ডাকা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ছ’টি মেডিক্যাল কলেজ এবং চারটি জেলা হাসপাতাল। এগুলি হল বাঁকুড়া, বর্ধমান, মেদিনীপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ। পুরুলিয়া, রায়গঞ্জ, জঙ্গিপুর এবং রামপুরহাট হাসপাতাল।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রসূতি এবং তাঁর নবজাতকের মৃত্যুর একটা বড় কারণ লেবার রুমের সংক্রমণ। খাটের পরিচ্ছন্নতা, দুটি খাটের মধ্যে ন্যূনতম ব্যবধান, প্রসবের সময়ে ব্যবহৃত সরঞ্জাম যথাযথ ভাবে জীবাণুমুক্ত করা যেমন জরুরি, তেমনই জরুরি শিশুর শ্বাসকষ্ট কমানোর জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা হাতের কাছে মজুত রাখা। সময়ের আগে, কম ওজন নিয়ে জন্মানো অধিকাংশ শিশুই জন্মের পর পরই শ্বাসকষ্টের শিকার হয়। বহু সময়ে লেবার রুমের কর্মীরা নিজেদের দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন না করায় সব কিছু মজুত থাকা সত্ত্বে নানা অঘটন ঘটে যায়। উদাহরণ হিসেবে প্রশিক্ষক দলের অন্যতম সদস্য, কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সিক নিউ বর্ন কেয়ার ইউনিটের ইন চার্জ অসীম মল্লিক জানান, বহু শিশু জন্মের পরে উষ্ণতার অভাবে ভোগে। চিকিৎসা পরিভাষায় একে বলে হাইপোথার্মিয়া। নবজাতকের মৃত্যুর একটা বড় কারণও এটা। জন্মের পরে মায়ের বুকে শিশুকে এক ঘণ্টা উপু়ড় করে রেখে দিলে উষ্ণতা ফিরে পাওয়া সম্ভব। তিনি বলেন, ‘‘এই ‘স্কিন টু স্কিন’ সংযোগটাই নবজাতকের সুস্থতার অন্যতম ধাপ। এটা জানেন অনেকেই। কিন্তু কাজে করে দেখান না। কেউ শিশুকে মায়ের কাছে দেনই না, আবার কেউ এক ঘণ্টার বদলে পাঁচ মিনিট রেখে তুলে দেন। আমরা তাঁদের উদ্বুদ্ধ করতে চাই। তাঁদের সামান্য একটা প্রয়াস কত জীবন বাঁচাতে পারে, সেটাই আমরা তুলে ধরব।’’

Advertisement

এইমস-এর চিকিৎসক অশোক দেওয়ারিও বলেন, ‘‘চিকিৎসক-নার্সদের কাজ যে আর পাঁচটা বাঁধাধরা চাকরির চেয়ে খানিকটা আলাদা, তাঁদের উপরে বহু মানুষের বাঁচা-মারা নির্ভর করে, এটা তাঁরা জানেন ঠিকই, কিন্তু সব পরিস্থিতিতে হয়তো খেয়াল রাখতে পারেন না। আমরা নানা ঘটনার মধ্যে দিয়ে সেটাই হাতেকলমে তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করব।’’

ইতিমধ্যেই কলকাতার কয়েকটি মেডিক্যাল কলেজ এই পদ্ধতি অনুসরণ করে হাতনাতে ফল পেয়েছে। সেখানে লেবার রুমের পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেক উন্নত। স্বাস্থ্যকর্তারা মানছেন, দফতরে এই মুহূর্তে টাকার অভাব নেই। রয়েছে ঝাঁ চকচকে হাসপাতাল, আধুনিক সরঞ্জাম। কিন্তু কিছু একটা ‘অভাব’ কাজ করছে, যে কারণে পরিষেবা প্রত্যাশিত মানে পৌঁছচ্ছে না। দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘ওই অভাবটা কোথায়, তা নানা সমীক্ষার মাধ্যমে আমরা জানার এবং বোঝার চেষ্টা করেছি। সব কিছুর মধ্যে দিয়েই যা বেরিয়ে এসেছে, তা হল ‘মোটিভেশন’। ওই একটি দিকে ঘাটতি থাকার জন্যই অনেক কিছু আটকে থাকছে।’’

প্রশ্ন হল, দু’দিন প্রশিক্ষণ দিয়েই কি কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করা সম্ভব? ওই কর্তা বলেন, ‘‘তা একেবারেই নয়। এটা একটা নিরন্তর প্রক্রিয়া। কিন্তু কোথাও একটা এর সূচনা দরকার। আমরা সেটাই করতে চাইছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন