বিদ্যুৎকুমার নাথ (এএসআই জোড়াবাগান ট্রাফিক গার্ড)
বেলা তখন ১২টা ২০। মোটর সাইকেল নিয়ে গণেশ টকিজ মোড়ে দাঁড়িয়েছিলাম। উত্তর দিকের সিগন্যালটা সবে সবুজ হল। সারি সারি গা়ড়ি সে দিকে চলেছে। হঠাৎ মাথার ওপর উড়ালপুলটায় কেমন মচ মচ আওয়াজ। অল্পবিস্তর নয়, সে ভীষণ আওয়াজ! ঘুরে দেখি উড়ালপুলের ডান দিকটা কেমন হেলে পড়ছে। আর গোটা সেতুটা যেন হুড়মুড় করে নেমে আসছে মাটির দিকে!
মোটর সাইকেলটা ফেলে রেখেই দিলাম এক লাফ। রাস্তা পেরিয়ে চলে এলাম উল্টো দিকে। তার পরে যা ঘটল তা যেন দুঃস্বপ্ন। চার দিক ধুলোর ঝড়ে ঢেকে যাচ্ছে। সে কী শব্দ! সঙ্গে মানুষের চিৎকার। আতঙ্কে যে যে-দিকে পারছে দৌড়চ্ছে। চোখের সামনে তখন মাটিতে মিশে যাচ্ছে নির্মীয়মান উড়ালপুলটা।
এখনও মনে আছে— লাফ দিয়ে সরে আসার সময়েও সেতুর নীচেয় গোটা দু’য়েক ট্যাক্সি, তিন-চারটে অটো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি। সেগুলো সবই ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে গিয়েছে! আমার বহু দিনের সঙ্গী মোটর সাইকেলটারও একই দশা হয়েছে ভেবে খারাপ লাগছে। কিন্তু আবার যখন ভাবছি, সেটার কথা না-ভেবে লাফ মেরে সরে যাওয়াতেই এখনও প্রাণে বেঁচে রয়েছি, তখন একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস বেরিয়ে আসছে।
আরও পড়ুন:
‘রাজ্যটা ছারখার হবে’ হাহাকার হাসপাতালে
আমার সহকর্মী সার্জেন্ট সন্দীপ হালদারও দাঁড়িয়েছিলেন ব্রিজের নীচে। উনিও বরাত জোরে বেঁচে গিয়েছেন। তবে মাথায় বেশ কয়েকটা সেলাই পড়েছে। একবালপুরের একটি হাসপাতালের আইসিসিইউ-য়ে ভর্তি তিনি। সন্দীপ ঘটনার আকস্মিকতায় এতটাই স্তম্ভিত যে, কথা বলতে পারছেন না। আর এক সহকর্মী কনস্টেবল হবিবুর রহমানও জোর বেঁচে গিয়েছেন। সামনে দাঁড়িয়ে ছিল একটা নীল সাদা ট্যাক্সি। তার চালককে দেখলাম ছিটকে হাত দশেক দূরে গিয়ে পড়লেন।
শুনেছিলাম উড়ালপুলে কাজ চলছে। পোস্তা থানার কিয়স্কের দিকটায় একটা হালকা দড়ি দিয়ে ব্যারিকেড করা ছিল। সাধারণের হাঁটাচলার ক্ষেত্রে কিছুটা বিধিনিষেধ ছিল ঠিকই, কিন্তু সেটা কী কারণে, বিপদের মাত্রা কতটা— তা কারওরই জানা ছিল না।
আমার চোট লেগেছে সামান্যই। আচমকা ছিটকে পড়লে যেমন লাগে। চার পাশে তত ক্ষণে হাহাকার শুরু হয়ে গিয়েছে। ছুটে গিয়ে উদ্ধার কাজে হাত লাগাই। সাইরেনের শব্দ শুনে বুঝলাম দমকলের গাড়ি আসছে, অ্যাম্বুল্যান্সও। চোখে পড়ল লম্বা একটা ক্রেনের মাথাও। স্থানীয় মানুষও আহতদের টেনে বার করতে হাত লাগিয়েছেন।