মেঘেদের আনাগোনা। রবিবারের ময়দানে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
ছুটির সকালে বৃষ্টির শব্দে ঘুম ভেঙেছিল রূপকের। চোখ ডলতে ডলতেই মনে আশা জেগেছিল, রবিবার দিনভর হয়তো বর্ষার আমেজেই কাটবে।
সকালের মেঘলা আকাশ দেখে রিয়ার আশা ছিল, বিকেলে বন্ধুর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে গলদঘর্ম হতে হবে না। মেক-আপটাও জমিয়ে করা যাবে।
কিন্তু কোথায় কী!
বেলা বাড়তেই দেখা গেল, ওই সব আশা-পরিকল্পনাই সার! বর্ষার আমেজ, স্বস্তির আবহাওয়া তো দূর অস্ত্। ভ্যাপসা গরমে অস্বস্তির কাঁটাতেই বিদ্ধ হতে হল দিনভর।
স্বস্তির বার্তা দিতে পারছে না আলিপুর আবহাওয়া দফতরও। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে তারা বলছে, বাতাসে জলীয় বাষ্পের বাড়বাড়ন্ত রয়েছে। তার উপরে আজ, সোমবার থেকে বাড়তে পারে তাপমাত্রা। ফলে আগামী দিন কয়েক গরমের দাপট এবং অস্বস্তির কাঁটা, দু’য়ের জ্বালাই সইতে হবে মহানগরবাসীকে।
৮ জুন কেরল দিয়ে মূল ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে পড়েছে বর্ষা। তার পর থেকে চার দিন কেটে গেলেও বর্ষা অন্ধ্রপ্রদেশের একাংশে এসেই থমকে রয়েছে। পশ্চিম উপকূলে অবশ্য বর্ষার সক্রিয়তা অনেক বেশি। আবহবিজ্ঞানীরা বলছেন, বর্ষা না আসাতেই পরিস্থিতি এমন ঘোরালো হয়ে রয়েছে। তার উপরে অসমের একটি ঘূর্ণাবর্ত হাওয়া টানতে থাকায় মধ্য ভারতের গরম হাওয়াও ঢুকে পড়ছে। তার ফলেই কলকাতায় শনিবার ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়ে ফেলেছিল। সঙ্গে মাত্রাছাড়া আর্দ্রতার দাপটে চরম অস্বস্তি পোহাতে হয়েছিল নগরবাসীকে।
আলিপুর হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, এ রাজ্য লাগোয়া বাংলাদেশে একটি ঘূর্ণাবর্ত রয়েছে। তার ফলেই এ দিন বাংলাদেশ লাগোয়া জেলাগুলিতে মেঘ জমেছিল। জলীয় বাষ্পের বাড়বাড়ন্তের ফলে উত্তর শহরতলির দিকে বর্জ্রগর্ভ মেঘও তৈরি হয়েছিল। তা থেকেই কোথাও কোথাও বৃষ্টিও হয়েছে। কিন্তু সেই ক্ষণিকের বৃষ্টি স্বস্তির চেয়ে অস্বস্তি বয়ে এনেছে বেশি। আবহবিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, মেঘলা আকাশের জেরে এ দিন তাপমাত্রা সে ভাবে বাড়তে পারেনি। কিন্তু আর্দ্রতা বেড়ে গিয়েছিল। ফলে দিনভর ভ্যাপসা গরম পোহাতে হয়েছে মানুষজনকে। তার ফলে ছুটির দিনে তুলনামূলক ফাঁকা ট্রেন-বাস-মেট্রোতেও ঘেমেনেয়ে অস্থির হয়েছেন লোকজন।
এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় আবহবিজ্ঞান দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) গোকুলচন্দ্র দেবনাথ জানান, আজ, সোমবার থেকে ঘূর্ণাবর্ত দুর্বল হতে শুরু করবে। ফলে আকাশে মেঘের আনাগোনাও কমবে। আকাশ সাফ হওয়ায় বাড়বে রোদের তেজ এবং তাপমাত্রা। ‘‘সোমবার কলকাতায় হয়তো তাপপ্রবাহ হবে না। তবে অস্বস্তি বাড়বে। পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে তাপপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে,’’ বলেন গোকুলবাবু।
হাওয়া অফিসের খবর, ঘূর্ণাবর্ত দুর্বল হলেও বাতাসে বাড়তি জলীয় বাষ্পের কারণে দক্ষিণবঙ্গের কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত ভাবে বৃষ্টি হতে পারে। তা থেকে সাময়িক স্বস্তিও মিলতে পারে। কিন্তু সেই স্বস্তি আবার বয়ে আনতে পারে ভ্যাপসা গরমের অস্বস্তিও।
তা হলে এই গরম থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় কী?
গরমের দাওয়াই বলতে গিয়ে সেই বর্ষার কথাই বলছেন আলিপুর আবহাওয়া দফতরের বিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলছেন, বর্ষা এসে গেলে গরমের দাপট তুলনায় কমবে। জোরালো বৃষ্টি হলে বাড়তি আর্দ্রতাও থাকবে না। কিন্তু এ বার এ রাজ্যে সেই বর্ষার আসার পথে কাঁটা বিছিয়ে গিয়েছে, তা-ও মেনে নিচ্ছেন আবহবিদেরা। তাঁরা বলছেন, বর্ষা অন্ধ্রপ্রদেশ ছেড়ে উত্তর দিকে অর্থাৎ ওড়িশা-বাংলার দিকে নড়ছে না। ‘‘পরিস্থিতি যা রয়েছে, তাতে কলকাতায় বর্ষা আসতে আসতে চলতি সপ্তাহ গড়িয়ে যেতে পারে,’’ মন্তব্য আলিপুর হাওয়া অফিসের এক পদস্থ কর্তার।