স্কুল থেকে ফেরার পথে জমা জলে পড়ে হাবুডুবু খুদে পড়ুয়ার। মঙ্গলবার, সুকিয়া স্ট্রিটে। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত দফায় দফায় প্রবল বৃষ্টি। জমা জলে, যানবাহনের সঙ্কটে তুমুল দুর্ভোগ। শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ, শহরতলি সর্বত্র এটাই ছিল চেনা ছবি। রাতভর বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছিল শহরের রাস্তা থেকে ভারতীয় জাদুঘরের গ্যালারি। সোমবার মাঝরাত থেকে কোথাও ছিল হাঁটুজল, কোথাও গোড়ালি ডোবা। ফলে সকাল থেকেই বিভিন্ন রাস্তায় যানজটে নাকাল হন বহু অফিসযাত্রী ও পড়ুয়ারা। সন্ধ্যা থেকে ফের একটানা অঝোর বৃষ্টি। তাতেই আরও খারাপ হল পরিস্থিতি। জলমগ্ন শহরে আরও বাড়ল ভোগান্তির চেহারা।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, সোমবার থেকে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত শহরে মোট বৃষ্টিপাত ১৬৮.৪ মিলিমিটার। যা এখন পর্যন্ত এই মরসুমের সর্বাধিক। কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, মঙ্গলবার শহরে মোট ৪৭টি রাস্তায় জল জমেছিল। এর মধ্যে বেশ কিছু এলাকায় ছিল হাঁটুজল। এর জেরে পাতিপুকুর, দমদম, কাঁকুরগাছি আন্ডারপাসে যান চলাচল ব্যাহত হয়। কলুটোলা, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, পার্ক স্ট্রিট, ক্যামাক স্ট্রিট, জওহরলাল নেহরু রোড, আনন্দ পালিত রোড, আশুতোষ মুখার্জি রোড, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোডের বিভিন্ন অংশে সোমবার রাত থেকেই জল জমতে শুরু করে। পার্ক সার্কাস, চার নম্বর ব্রিজ, বালিগঞ্জ, গড়িয়াহাট, কর্নফিল্ড রোড এলাকায় মঙ্গলবার বেলা পর্যন্ত জল জমে থাকার খবর মেলে। জল জমা নিয়ে সকালে পার্ক স্ট্রিটের বিধায়ক আবাসনে বিক্ষোভ হয় বলে পুলিশ সূত্রে খবর। জল রয়েছে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরেও। কর্তৃপক্ষ জানান, অল্প বৃষ্টিতে জল দাঁড়িয়ে যায়। সমস্যার সমাধানের চেষ্টা হচ্ছে।
বেলুড় স্টেশন এলাকার আন্ডারপাস জলমগ্ন। দীপঙ্কর মজুমদারের তোলা ছবি।
বাগুইআটির বি বি ওয়ান খাল সংলগ্ন এলাকা, দমদম পার্ক, লেক টাউনের কিছু এলাকায় দিনভর জল ছিল। রাতে ফের অঝোর বৃষ্টিতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। এ দিন বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জল জমার খবর আসে সংযোজিত এলাকা বেহালা, ঠাকুরপুকুর, বাঁশদ্রোণী থেকে। বাইপাসেও জলের জেরে ব্যাপক যানজট হয়।
অন্য দিকে, উত্তর হাওড়ার বিস্তীর্ণ এলাকা-সহ বালি পুর এলাকার অধিকাংশ জায়গা জলমগ্ন। বেলুড় ও বালি সাবওয়েতে সাইকেল কাঁধে নিয়ে রেললাইন পেরোতে হচ্ছে। সমস্যার সমাধানে সেচ দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরা সাবওয়ে পরিদর্শন করেন।
টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন বিটি রোডের বহু এলাকাও। কামারহাটি, পানিহাটির রাস্তায় জলে বেশ কয়েকটি গাড়ি খারাপ হয়ে যানজটও হয়। সন্ধ্যার বৃষ্টিতে আমির আলি অ্যাভিনিউ, পার্ক সার্কাস কানেক্টর, সার্দান অ্যাভিনিউয়ের একাংশ-সহ দক্ষিণ কলকাতার কিছু রাস্তা, মধ্য কলকাতার চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ ও মহাত্মা গাঁধী রোডের মোড়, পূর্ব কলকাতার তপসিয়া, তিলজলা এবং উত্তরের বেশ কিছু গলিতে জল জমে যায়। হাঁটুজল দাঁড়ায় সুইনহো স্ট্রিট, গোখেল রোড, বিজন সেতুর কাছে। সব মিলিয়ে এক দিকে জমা জল, অন্য দিকে যানবাহনের অভাবে ফের দুর্ভোগে পড়েন মানুষ।
বিভিন্ন এলাকায় ক্ষোভ, ফি বর্ষাতেই জল জমার সমস্যা হয়। কোনও সুরাহা হয় না। মেয়র পারিষদ (নিকাশি) দেবাশিস কুমার বলেন, “রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হওয়ায় শহরের কয়েকটি এলাকায় সকালে জল জমে ছিল। কিন্তু শহরের সমস্ত পাম্প চালিয়ে দেওয়ায় কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সর্বত্র জল নেমে যায়।”
এ দিকে, সোমবার রাতভর বৃষ্টিতে ভারতীয় জাদুঘরের মাস্ক গ্যালারির বেশ কয়েকটি মুখোশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জাদুঘর সূত্রে খবর। এ দিন জাদুঘরে গিয়ে দেখা যায় ছাদ মেরামতি চলছে। অভিযোগ, রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলাকালীন ঠিকমতো আচ্ছাদন না দেওয়ায় বেশ কয়েকটি গ্যালারিতে জল ঢুকে যায়। কর্মীদেরই একাংশ সকাল থেকে বালতি করে সেই জল গ্যালারির বাইরে বার করার চেষ্টা করেন বলে সূত্রের খবর। জাদুঘর সূত্রের খবর, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মাস্ক গ্যালারি। জাদুঘর সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমান ডিরেক্টর বি বেণুগোপাল এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত আধিকারিক সুমন্ত রায় দিল্লিতে রয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিক বলেন, “সংস্কারের কাজ চলায় বৃষ্টিতে কিছু অসুবিধা হয়েছিল। পরে সব ঠিক করা হয়েছে।”