অসহায় বৃদ্ধকে দৃষ্টি ফিরিয়ে দিল হাসপাতাল

উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রামের সাজিরহাটের বাসিন্দা ওই বৃদ্ধের নাম বিভূতিভূষণ চক্রবর্তী। স্থানীয় সূত্রের খবর, মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বাংলাদেশ থেকে এ পারে এসেছিলেন বিভূতিভূষণবাবু। মধ্যমগ্রামে পুজোআর্চা করে সংসার চালাতেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৭ ০১:৩১
Share:

দৃষ্টি-সুখ: হাসপাতালের শয্যায় বিভূতিভূষণ চক্রবর্তী। —নিজস্ব চিত্র।

তাঁকে দেখভালের কেউ ছিল না। নানা রোগে ভুগে ভুগে দৃষ্টিশক্তিও হারিয়ে ফেলেছিলেন সহায়-সম্বলহীন ওই বৃদ্ধ। হাসপাতালে তাঁকে ফেলে রেখে চলে গিয়েছিলেন কেউ। সেখানেই প্রথমে তাঁকে সুস্থ করে তোলা হয়। তার পরে রীতিমতো মেডিক্যাল বোর্ড বসিয়ে ওই বৃদ্ধের অস্ত্রোপচার করে তাঁর দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিলেন বারাসত জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। প্রায় আট বছর পরে শুক্রবার চোখে দেখতে পেয়ে অঝোরে কেঁদে ফেললেন বৃদ্ধ। তার পরে নিজেই সারলেন নিজের সব কাজকর্ম।

Advertisement

উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রামের সাজিরহাটের বাসিন্দা ওই বৃদ্ধের নাম বিভূতিভূষণ চক্রবর্তী। স্থানীয় সূত্রের খবর, মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বাংলাদেশ থেকে এ পারে এসেছিলেন বিভূতিভূষণবাবু। মধ্যমগ্রামে পুজোআর্চা করে সংসার চালাতেন। বছর দশেক আগে স্ত্রী মারা যান। ছেলেমেয়ে না থাকায় তাঁকে দেখভাল করার কেউ ছিল না। আস্তে আস্তে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, রক্তচাপ, শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকেন তিনি। পুজো করাও বন্ধ হয়ে যায়। বছর আটেক আগে বিনা চিকিৎসায় দু’চোখের দৃষ্টিশক্তি চলে যায়। ওই অবস্থায় কখনও ঘরে, কখনও বা রাস্তায় পড়ে থাকতেন তিনি। এক বছর আগে বারাসত হাসপাতালে এক অপরিচিত ব্যক্তি এসে তাঁকে ভর্তি করে দিয়ে চলে যান।

প্রথমে তাঁকে সুস্থ করে তোলেন চিকি‌ৎসকেরা। হাসপাতাল সূত্রে খবর, কোনও পরিজন না থাকায় সেখানেই থেকে যান বৃদ্ধ। হাসপাতালের নার্স ও কর্মীরা দৃষ্টিহীন বৃদ্ধকে ধরে ধরে স্নান করাতে নিয়ে যেতেন।

Advertisement

কর্মীদের কথায়, ‘‘নিজের দুর্ভাগ্যের কথা বলে কান্নাকাটি করতেন ওই বৃদ্ধ।’’ এ দিন হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা সিদ্ধান্ত নিই, অন্য শারীরিক সমস্যা ঠিক হয়ে যাওয়ার পরে দৃষ্টি ফেরানোর জন্য ওঁর চোখে অস্ত্রোপচার করা হবে।’’ সেই মতো মেডিক্যাল বোর্ডও তৈরি হয়।

বৃহস্পতিবার ওই হাসপাতালের চোখ বিশেষজ্ঞ সুকুমার মণ্ডল এবং মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অমিত অগ্রবালের নেতৃত্বে বিভূতিভূষণবাবুর বাঁ চোখে অস্ত্রোপচার হয়। শুক্রবার দুপুরে চোখের ব্যান্ডেজ খোলা হয়। সফল অস্ত্রপচারের ফলে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়ে আপ্লুত বিভূতিভূষণবাবু। দু’হাত দিয়ে চিকিৎসক ও হাসপাতাল-কর্মীদের আশীর্বাদ করতে থাকেন।

এ দিন ওই বৃদ্ধ বলেন, ‘‘সারা জীবন আমি পুজো-আরাধনা করে কাটিয়েছি। আমার সমস্ত অর্জিত পুণ্য আমি ওদের দিলাম।’’ দু’সপ্তাহ পরে বৃদ্ধের অন্য চোখে অস্ত্রোপচার করা হবে বলে জানিয়েছেন সুব্রতবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন