দিন-দিন বেড়ে চলা বায়ু-দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে বিবিধ ব্যবস্থার কথা ভাবা হচ্ছে। সেই দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে এ বার ব্যাটারি-চালিত বাস পথে নামানোর পরিকল্পনা করছে হিডকো।
বিদেশে এই ব্যাটারি-চালিত বাসের চল আছে। এ দেশে তা প্রথম চালু হয় বেঙ্গালুরুতে। গত বছর সেখানকার রাজ্য পরিবহণ দফতরের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট রুটে নামানো হয় এই বাসগুলি। ব্যাটারি চার্জ করে যে শক্তি তৈরি হবে, তা কাজে লাগিয়ে চলতে পারবে এগুলি। সে ক্ষেত্রে পেট্রল বা ডিজেলের প্রয়োজন পড়বে না। ফলে, বায়ু-দূষণের আশঙ্কাও অনেকটাই কমে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
হিডকোর চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন জানান, বিষয়টি এখনও চিন্তা-ভাবনার স্তরে রয়েছে। প্রাথমিক ভাবে এই সংক্রান্ত একটি সমীক্ষাও হয়েছে। তবে, ভবিষ্যতে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে গেলে বেশ কিছু সমস্যার সমাধান করতে হবে। কী সেই সমস্যা? দেবাশিসবাবুর কথায়, ‘‘যত দূর খোঁজ নিতে পেরেছি, বিশেষ করে বিদেশি সংস্থাগুলি এই ধরনের বাস বানায়। ফলে তাদের থেকে বাস আনাতে হবে। তাতে সমস্যা হল, নামানোর পরে কোনও বাসে সমস্যা দেখা দিলে তা সহজে মেরামতির ব্যবস্থা করা যাবে না। আবার খরচেরও একটা ব্যাপার রয়েছে।’’
এক লিটার ডিজেল বা পেট্রল পুড়লে তা থেকে প্রায় ২.৪ কিলোগ্রাম কার্বন-ডাই-অক্সাইড বায়ুতে মেশে। সেখানে দিনের পর দিন গ্যালন গ্যালন জ্বালানি পুড়ে বায়ুর কী পরিমাণ ক্ষতি করছে, তা সহজেই অনুমেয়। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘‘যে শহরে গাড়ির সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে, সেখানে জ্বালানি থেকে বায়ু-দূষণ ঠেকানো এক রকম অসম্ভব। সেই দিক থেকে যদি বিকল্প কিছু চিন্তা-ভাবনা করা যায়, তাতে পরিবেশেরই ভাল হবে।’’
ব্যাটারি-চালিত বাস নিয়ে হিডকোর এই পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছেন পরিবেশবিদেরাও। পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত এ বিষয়ে বলেন, ‘‘ব্যাটারি চার্জ দিতে যে বিদ্যুৎ লাগে, তা উৎপাদন করতে গেলেও কার্বন তৈরি হয়। তবে, জ্বালানি পুড়ে তৈরি কার্বনের থেকে তা পরিমাণে কম। তাই স্থানীয় ভাবে বায়ু-দূষণ কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। কিন্তু সার্বিক ভাবে তার প্রভাব কতটা কার্যকরী হবে, তা কেবল সময়ই বলতে পারবে।’’
ভবিষ্যতে হিডকো করে দেখাতে পারলেও এ রাজ্যের পক্ষে এমন কোনও পদক্ষেপ আপাতত সম্ভব নয় বলে জানালেন পরিবহণ দফতরের সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘বাসগুলি পরিবেশবান্ধব, তা নিয়ে সংশয় নেই। তবে, এ কথাও ঠিক যে সেগুলির ভীষণ চড়া দাম। তাই হিডকোর এই উদ্যোগকে বাহবা দিলেও পরিবহণ দফতরের পক্ষে এই ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা এক রকম অসম্ভব।’’