শিক্ষকের পেনশন অবিলম্বে চালু করার নির্দেশ কোর্টের

আইনজীবী এক্রামুল বারি জানান, শিক্ষকতা করার সময়েই তাঁর মক্কেল রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৫ সালে সংস্কৃতে এমএ পাশ করেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা বেড়ে যাওয়ায় ওই বছর থেকে তিনি বর্ধিত হারে বেতনও পেতে থাকেন।

Advertisement

শমীক ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৯ ০২:১৮
Share:

শিক্ষকের পেনশন চালু করতে নির্দেশ হাইকোর্টের।

যে শিক্ষক ৩০ বছর ধরে সমাজের সেবা করেছেন, যিনি কয়েকশো পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ গড়তে সাহায্য করেছেন, সেই শিক্ষক পেনশন না পেয়ে কেন অনাহারে থাকবেন, সেই প্রশ্ন তুললেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। বৃহস্পতিবার রাজ্য সরকারকে বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছেন, এক মাসের মধ্যে ওই শিক্ষকের পেনশন চালু করতে হবে। সেই সঙ্গেই তাঁর নির্দেশ, পেনশনের বকেয়া টাকা সুদ-সহ মেটাতে হবে এবং শিক্ষা দফতরের যে আধিকারিকের ত্রুটিতে ওই শিক্ষক পেনশন পাননি, সুদের টাকা মেটাতে হবে সেই আধিকারিককে।

Advertisement

কলকাতার বাগমারির বাসিন্দা তারকনাথ চন্দ্র দমদমের শহিদ রামেশ্বর বিদ্যামন্দিরে সংস্কৃতের শিক্ষক ছিলেন। তাঁর আইনজীবী এক্রামুল বারি জানান, শিক্ষকতা করার সময়েই তাঁর মক্কেল রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৫ সালে সংস্কৃতে এমএ পাশ করেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা বেড়ে যাওয়ায় ওই বছর থেকে তিনি বর্ধিত হারে বেতনও পেতে থাকেন। তারকনাথবাবু ২০১২ সালে অবসর নেন। কিন্তু শিক্ষা দফতর তাঁর পেনশন চালু করেনি।

পেনশন না পেয়ে ২০১৫ সালে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ওই শিক্ষক। ওই বছরই হাইকোর্ট রাজ্যকে নির্দেশ দেয়, অবিলম্বে ‘প্রভিশনাল পেনশন’ দিতে হবে ওই শিক্ষককে। কিন্তু তার পরেও শিক্ষা দফতর তাঁকে প্রভিশনাল পেনশন দেয়নি। সপ্তাহখানেক আগে বিচারপতি মান্থার আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ওই শিক্ষকের পেনশনের মামলাটির দ্রুত শুনানির আর্জি জানান এক্রামুল। বিচারপতি গত ২০ নভেম্বরের শুনানিতে রাজ্যের কৌঁসুলির কাছে জানতে চান, তারকনাথবাবুর প্রভিশনাল পেনশন চালু হচ্ছে না কেন, তা ২২ নভেম্বর আদালতকে জানাতে হবে।

Advertisement

২২ নভেম্বর রাজ্যের কৌঁসুলি চৈতালি ভট্টাচার্য আদালতে জানান, ওই শিক্ষকের প্রভিশনাল পেনশন বাবদ ১২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি জানান, তারকনাথবাবুর এমএ পাশ সংক্রান্ত শংসাপত্র নিয়ে সংশয় দেখা দেওয়ায় অবসরের পরে তাঁর পেনশন চালু হয়নি বলে শিক্ষা দফতর জানিয়েছে। শিক্ষা দফতরের বক্তব্য, এক বছরের এমএ কোর্স হয় কি না, তা তাদের জানা নেই।

এক্রামুলের পাল্টা প্রশ্ন, ওই শিক্ষক যখন ২৭ বছর ধরে বর্ধিত হারে বেতন নিলেন, তখন তাঁর শংসাপত্র নিয়ে সংশয় দেখা দিল না। তা হলে অবসর নেওয়ার সাত বছর পরে সংশয় কেন? আইনজীবী জানান, তিনি ওই শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতার সব শংসাপত্র আদালতে পেশ করবেন।

এ দিন শিক্ষকের আইনজীবী আদালতে সব শংসাপত্র পেশ করে জানান, এমএ কোর্স নিয়ে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রারের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। ২০১৪ সালের ৫ মে রেজিস্ট্রার তারকনাথবাবুকে চিঠি দিয়ে জানান, এক বছরের ওই কোর্স বৈধ। সরকারি কৌঁসুলি আদালতে জানান, বুধবার শিক্ষা দফতরও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে ওই কোর্স সম্পর্কে জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছে।

বিচারপতি মান্থা শংসাপত্র ও রেজিস্ট্রারের পাঠানো চিঠি খুঁটিয়ে দেখে জানিয়ে দেন, তা নিয়ে সংশয় থাকার কারণ নেই। এর পরেই সরকারি কৌঁসুলির উদ্দেশ্যে ওই প্রশ্ন করেন তিনি এবং এক মাসের মধ্যে পেনশন চালু করতে নির্দেশ দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন