ক্ষুব্ধ বিচারপতির তোপে এ বার পুলিশ কমিশনার

সোমবারের পরে ফের মঙ্গলবার। পুলিশি তদন্ত নিয়ে এজলাসে ক্ষোভ উগরে দিলেন বিচারপতি নাদিরা পাথেরিয়া। সোমবার একটি কিশোরী নিখোঁজের মামলায় পুলিশি তদন্তে অসন্তুষ্ট হয়ে উঁচু থেকে নিচু তলার পুলিশকর্মীকে জেলে পোরা হবে মন্তব্য করেছিলেন বিচারপতি। মঙ্গলবার পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ সংক্রান্ত অন্য একটি মামলায় ফের অসন্তোষ প্রকাশ করলেন তিনি। সরকারি আইনজীবীর কাছে জানতে চাইলেন কেন এই মামলায় কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে ডেকে পাঠানো হবে না!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৪ ০৩:১৩
Share:

সোমবারের পরে ফের মঙ্গলবার। পুলিশি তদন্ত নিয়ে এজলাসে ক্ষোভ উগরে দিলেন বিচারপতি নাদিরা পাথেরিয়া।

Advertisement

সোমবার একটি কিশোরী নিখোঁজের মামলায় পুলিশি তদন্তে অসন্তুষ্ট হয়ে উঁচু থেকে নিচু তলার পুলিশকর্মীকে জেলে পোরা হবে মন্তব্য করেছিলেন বিচারপতি। মঙ্গলবার পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ সংক্রান্ত অন্য একটি মামলায় ফের অসন্তোষ প্রকাশ করলেন তিনি। সরকারি আইনজীবীর কাছে জানতে চাইলেন কেন এই মামলায় কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে ডেকে পাঠানো হবে না!

আবেদনকারীর মূল অভিযোগ ছিল রিজেন্ট পার্ক থানার বিরুদ্ধে। খোদ পুলিশ কমিশনারের দফতরে চিঠি পাঠনোর পরেও রিজেন্ট পার্ক থানা তাঁর এফআইআর নেয়নি। এর পরে পাঁচ মাস কেটে গিয়েছে। আবেদনকারীর অভিযোগ, তিনি ও তাঁর পরিবার আতঙ্কে রয়েছেন।

Advertisement

অভিযোগ শুনে সরকারি আইনজীবীর উদ্দেশে বিচারপতি পাথেরিয়ার মন্তব্য, “পাঁচ মাস আগে অভিযোগ করা হয়েছে খোদ পুলিশ কমিশনারের কাছে। পুলিশ কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা জানতে কেন কমিশনারকে আদালতে ডেকে পাঠানো হবে না?”

পূর্ব পুঁটিয়ারির শ্রীপল্লির বাসিন্দা রাকেশ রায়ের অভিযোগ একই বাড়ির বাসিন্দা তাঁর কয়েক জন আত্মীয় ও আত্মীয়দের কয়েক জন বন্ধুর বিরুদ্ধে। তাঁর দাবি, যে বাড়িতে তিনি থাকেন, সেই বাড়িরই একটি ঘরে আত্মীয়রা বন্ধুদের সঙ্গে নেশা করে অভব্য আচরণ করেন। অভিযোগ, ৮ মার্চ রাকেশবাবু এর প্রতিবাদ করায় তাঁকে প্রাণে মারা এবং তাঁর মেয়েকে ধর্ষণ করার হুমকি দেওয়া হয়।

রাকেশবাবুর আইনজীবী আদালতকে বলেন, আবেদনকারী রিজেন্ট পার্ক থানায় গেলে পুলিশ অভিযোগ না জানানোর জন্য চাপ দেয়। এর পরে রাকেশবাবু কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে ১০ মার্চ লিখিত ভাবে ঘটনাটি জানান। কমিশনারের দফতর থেকে ২২ মার্চ সেই অভিযোগ রিজেন্ট পার্ক থানায় যায়। পুলিশ তাঁকে পরদিন থানায় ডাকলেও এফআইআর নেয়নি বলে অভিযোগ।

রাকেশবাবু তাঁর আবেদনে জানিয়েছেন, এর পর রিজেন্ট পার্ক থানার এক সাব ইনস্পেক্টর ১৭ মে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ তাঁর বাড়িতে যান। রাকেশবাবুর অভিযোগ, ওই পুলিশ অফিসার অভিযুক্তদের ঘরে গিয়ে তাদের সঙ্গে একান্তে কথা বলেন। পরদিন তাঁর আত্মীয়েরা ওই পুলিশ অফিসারের সামনেই তাঁকে মারধর করে। ওই পুলিশ অফিসারও তাঁকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। এই ঘটনার কথাও রাকেশবাবু পুলিশ কমিশনারের কাছে ২০ মে লিখিত ভাবে জানান। কিন্তু তার পরেও এফআইআর হয়নি।

এর আগে মামলাটি শুনছিলেন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত। তিনি পুলিশের কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছিলেন। বেঞ্চ বদল হয়ে মামলাটি এখন বিচারপতি পাথেরিয়ার কাছে এসেছে। পুলিশ তাঁকেই রিপোর্ট জমা দিয়েছে। এ দিন শুনানির শুরুতেই বিচারপতি পাথেরিয়া সরকারি আইনজীবী অনিত রক্ষিতের কাছে জানতে চান, রিজেন্ট পার্ক থানার ওসি রিপোর্টে জানিয়েছেন, মামলাটি ‘দেওয়ানি’ প্রকৃতির। বিনা তদন্তে কী ভাবে পুলিশ এই ধরনের রিপোর্ট জমা দেয়?

সরকারি আইনজীবী জানান, অভিযুক্ত পুলিশ অফিসার ঘটনার দিন রিজেন্ট পার্ক এলাকাতেই ছিলেন না বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে। বিচারপতি দত্ত পুলিশের যে ডিউটি-তালিকা চেয়ে পাঠিয়েছিলেন, তাতেও দেখা গিয়েছে, ওই অফিসার ঘটনার সময় এলাকায় ছিলেন না। বিচারপতি পাথেরিয়ার প্রশ্ন, “পুলিশ কমিশনারের কাছে প্রথম অভিযোগ করা হয়েছিল মার্চ মাসে। তার পরে পুলিশ কী তদন্ত করেছে?” সরকারি আইনজীবী কিছু বলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। তার আগেই বিচারপতি বলেন, “এটা জানার জন্য পুলিশ কমিশনারকে কালকেই আদালতে তলব করা হবে না কেন?” এর পরে সময় চেয়ে নেন সরকারি আইনজীবী। বিচারপতি জানান, ৮ অগস্ট পরবর্তী শুনানি হবে। রিজেন্ট পার্ক থানা এবং লালবাজার এ দিন হাইকোর্টের মন্তব্য নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি। পুলিশের বক্তব্য, বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন। পুলিশ কমিশনার নিজেও কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন