বিয়ের গয়না ভর্তি ব্যাগ ফেরালেন ট্যাক্সিচালক

উদ্‌ভ্রান্তের মতো সব জায়গায় নিজের গয়নার ব্যাগটি খুঁজছিলেন বিয়ের কনে। কোত্থাও মিলছিল না। যে ট্যাক্সিতে চেপে তিনি এসেছিলেন, মনে ছিল না সেটির নম্বরও। শু‌ধু মনে পড়ে গিয়েছিল যে, চালক পরে ছিলেন নীল রঙের পাগড়ি।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৬ ০১:১৯
Share:

যশবীর সিংহ। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

উদ্‌ভ্রান্তের মতো সব জায়গায় নিজের গয়নার ব্যাগটি খুঁজছিলেন বিয়ের কনে। কোত্থাও মিলছিল না। যে ট্যাক্সিতে চেপে তিনি এসেছিলেন, মনে ছিল না সেটির নম্বরও। শু‌ধু মনে পড়ে গিয়েছিল যে, চালক পরে ছিলেন নীল রঙের পাগড়ি। সেই সূত্রকে সম্বল করেই স্থানীয় ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে এসে খোঁজ শুরু করেন তিনি। তাতেই মিলেছিল একটি ঠিকানা।

Advertisement

আর সেখানে গিয়ে খোঁজ করতেই একটি বাড়ির দোতলার উপর থেকে ভারী গলায় কেউ বললেন, ‘‘বেটি এ দিকে এসো। তোমার ব্যাগ আমার কাছে।’’ উপরে তাকিয়ে কনে দেখলেন নীল পাগড়ির সেই ট্যাক্সিচালক। কাছে যেতেই যিনি তরুণীর হাতে ধরিয়ে দিলেন একটি ব্যাগ। গয়না ভরা সাদা রঙের ওই ব্যাগ হাতে পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বিয়ের কনে বললেন, ‘‘অনেক উপকার করলেন।’’ আর বছর বাহান্নর ট্যাক্সিচালক দু’হাত তুলে বললেন, ‘‘আমার মেয়ের গয়না হলে কি হতো!’’

সোমবার ডানলপে এ ভাবেই ট্যাক্সিচালক যশবীর সিংহের কাছ থেকে গয়না ভর্তি ব্যাগ ফেরত পেলেন ওই এলাকার নরেন্দ্রনগরের বাসিন্দা সোমা পাল দাস। মঙ্গলবার বেহালায় শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার পরে বললেন, ‘‘প্রায় দু’লক্ষ টাকার গয়না ভরা ব্যাগটা উনি তো ফেরত না-ও দিতে পারতেন। গয়না না পেলে বিয়েটাই হয়তো হতো না।’’

Advertisement

সারা রাত ট্যাক্সি চালানোর পরে সোমবার ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ ডানলপ স্ট্যান্ডে এসে দাঁড়িয়েছিলেন যশবীর। ওই সময়ে বাড়ি থেকে ১০ মিনিটের দূরত্বে এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়ার জন্য যশবীরের ট্যাক্সি ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন সোমারই অন্য এক আত্মীয়। মঙ্গলবার সোমা জানালেন, গন্তব্যে পৌঁছনোর পরে ভাড়া দিয়ে নেমে গেলেও সঙ্গে থাকা গয়নার ব্যাগের কথা ভুলেই গিয়েছিলেন তিনি। সোমবারই ছিল তাঁর বিয়ে। সকাল ১০টা নাগাদ বিয়ের জন্য ভাড়া নেওয়া অনুষ্ঠানবাড়িতে গিয়ে মনে পড়ে গয়নার কথা। সোমা বলেন, ‘‘কোথাও পাচ্ছিলাম না ব্যাগটা। সব জায়গায় খুঁজে শেষমেশ না পেয়ে মনে হল ট্যাক্সিতেই ফেলেছি। কিন্তু গাড়ির নম্বর জানতাম না।’’

শেষে বাড়ির কয়েক জনকে নিয়ে সোমা হাজির হন পিডব্লিউডি রোডের উপরে ডানলপ ব্রিজের নীচে তিন নম্বর ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে। সেখানে কাউকে না পেয়ে কান্নায় ভেঙে প়ড়েন তিনি। সব দেখে এগিয়ে এসে বিষয়টি জানতে চান আর এক ট্যাক্সিচালক উত্তম সিংহ। মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘‘সব শুনে বুঝতে পারি বড় বিপদ হয়ে গিয়েছে। দিদি আমাদের শুধু নীল পাগড়ির কথাটাই বলতে পেরেছিলেন।’’

উত্তমের থেকে শুনেই বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ শুরু করেন আরও দুই চালক গোপী সরকার ও তপন পাল। শেষে পাওয়া যায় একটি ঠিকানা। বিটি রোডের ধারে সেই সরকারি আবাসনের ঠিকানা নিয়ে সেখানে হাজির হন সোমারা। তখনই তাঁকে দেখতে পেয়ে ডেকে নেন ওই চালক।

মঙ্গলবার যশবীর বলেন, ‘‘বাড়ি ফিরে গাড়ি বন্ধ করতে যাওয়ার সময়ে সিটের নীচে ব্যাগটি পরে থাকতে দেখি। কিন্তু এ দিন দু’জন বিয়ের কনে ট্যাক্সিতে উঠেছিলেন। তাঁদের কথাবার্তা শুনেই বুঝতে পেরেছিলাম। কিন্তু কার ব্যাগ বুঝতে পারছিলাম না।’’ ওই চালকের স্ত্রী হরজিন্দর কৌর বলেন, ‘‘ব্যাগ নিয়ে ঘরে এসে খুব চিন্তা করতে থাকেন। পুলিশের কাছে যেতে বলি। উনি বারবার ভগবানকে ডাকছিলেন, যাতে যাঁর জিনিস তিনি পেয়ে যান। তখনই ওই মেয়েটি আসে।’’

তিন নম্বর ট্যাক্সি স্ট্যান্ড সংগঠনের সভাপতি তথা স্থানীয় কাউন্সিলর সাগরিকা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘খবরটা শুনে স্ট্যান্ডে এসে ওই চালককে মিষ্টি খাইয়েছি। ওঁর কাজ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল।’’

ব্যাগ ফেরত পেয়ে যশবীরকে বিয়েতে নিমন্ত্রণ করে গিয়েছিলেন সোমা। কব্জি ডুবিয়ে খাওয়াদাওয়াও করে এসেছেন যশবীর। এ দিন বললেন, ‘‘বেটি বৌভাতেও যেতে বলেছে। এটাই তো বড় পুরস্কার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন