কলকাতার থিম পুজো এখন হুজুগের আকার নিয়েছে। কিন্তু এ সবের মধ্যেও বাড়ির পুজোর বনেদিয়ানা কিন্তু মিলিয়ে যায়নি। সেই তালিকায় শুধু শোভাবাজার রাজবাড়ি, দাঁ বা়ড়ি বা মল্লিক পরিবারের পুজোই নেই, রয়েছে আরও বহু পারিবারিক পুজো। দেশভাগের পরে ভিটেমাটি ছাড়তে হলেও পুজো ছা়ড়েননি তাঁরা।
প্রায় আড়াইশো বছর আগে বাংলাদেশের ফরিদপুরের বিছারি গ্রামে ঘটক পরিবারের পুজো শুরু হয়। দেশভাগের পরে যাদবপুর এলাকার রামগড়ে চলে আসে ওই পরিবার। সেখানেই চলতে থাকে ওই পারিবারিক পুজো। শাক্ত মতের সেই পুজোয় তিন দিনই পশুবলি হয়। ভোগে আমিষ পদও অপরিহার্য। প্রতিমার বাঁ দিকে থাকেন গণেশ এবং ডান দিকে কার্তিক। পরিবারের সদস্য প্রসেনজিৎ ঘটক জানান, দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা আত্মীয়স্বজনদের প্রায় সকলেই পুজোর সময়ে জড়ো হন রামগড়ের বাড়িতে।
বাংলাদেশের বিক্রমপুর থেকে এ পারের শরৎ বসু রোডে পুজো স্থানান্তরিত হয়েছে চক্রবর্তী পরিবারের। তাদের তরফে ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তী জানান, ২০০ বছর পেরিয়ে গিয়েছে তাঁদের পুজো। একচালায় হলুদ রঙের সাবেক প্রতিমা। দুর্গার পাশাপাশি অন্নপূর্ণা ও মনসাও পূজিত হন। চালকুমড়ো বলির রেওয়াজ রয়েছে।
দক্ষিণ কলকাতার শিবমন্দিরের মণ্ডপের পিছনেই দালাল বাড়ির পুজোর এ বার ৭৬তম বর্ষ। গৃহকর্তা দেবেশ দালাল জানান, পূর্ববঙ্গের নোয়াখালিতে পুজোর শুরু। দেশভাগের পরে কলকাতার বা়ড়িতে পুজো স্থানান্তরিত হয়। সাত্ত্বিক মতে পুজোর পাশাপাশি সন্ধ্যায় ঢাকের তালে খুদেদের হুল্লোড়ই এ বাড়ির অন্যতম আকর্ষণ। ফরিদপুর থেকে এ পার বাংলার বাগুইআটিতে এসে পুজো শুরু করেছিলেন ক্ষিতীশচন্দ্র দাশগুপ্ত। বংশপরম্পরায় এখনও সেই পুজো চলছে।
এ সবের থেকে অনেক নবীন মহেশতলার বাটানগরের বসুরায়চৌধুরী বাড়ির পুজো। কিন্তু এঁরা টিঁকিয়ে রেখেছেন পুজোর দিনে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের রেওয়াজ। ভোগের জন্য স্থানীয় এলাকায় পরিচিতি রয়েছে এই বাড়ির।