‘পুলিশ এলে জানতে পারি, বৌদি আত্মহত্যা করেছেন!’’

মৃতার পরিবার জানিয়েছে, ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে মৃগাঙ্কের সঙ্গে সম্বন্ধ করে বিয়ে হয় পায়েলের। সেই সময়ে মৃগাঙ্ক সল্টলেকের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়াতেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৮ ০২:৫০
Share:

পায়েল ও মৃগাঙ্ক রায়। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

সন্ধ্যায় জামাইষষ্ঠীর কেনাকাটা নিয়ে কথা হয়েছিল মা-মেয়ের। আর তার দু’ঘণ্টার মধ্যেই মা খবর পেলেন, মেয়ে মারা গিয়েছেন! জানতে পারলেন, মেয়ের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে শ্বশুরবাড়ির ঘর থেকে। পাওয়া গিয়েছে একটি সুইসাইড নোটও।

Advertisement

বৃহস্পতিবার রাতে এ ভাবেই মৃত্যু হয়েছে এক গৃহবধূর। তাঁর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে বধূ নির্যাতন (৪৯৮) এবং আত্মহত্যায় প্ররোচনার (৩০৬) ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে মৃতার স্বামী ও ভাসুরকে।

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম পায়েল রায় (৩২)। নেতাজিনগর থানা এলাকার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু রোডের বাসিন্দা পায়েলকে বৃহস্পতিবার রাতে বিজয়গড় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। পরে পায়েলের মা এবং পরিজনেরা এসে অভিযোগ জানালে পুলিশ রাতেই মৃতার স্বামী মৃগাঙ্ক রায়কে আটক করে। পরে শুক্রবার সকালে তাঁকে ও তাঁর দাদা মৃদুল রায়কে গ্রেফতার করে আদালতে তোলা হয়। বিচারক তাঁদের ৮ জুন পর্যন্ত পুলিশি হেফাজত দিয়েছেন।

Advertisement

মৃতার পরিবার জানিয়েছে, ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে মৃগাঙ্কের সঙ্গে সম্বন্ধ করে বিয়ে হয় পায়েলের। সেই সময়ে মৃগাঙ্ক সল্টলেকের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়াতেন। মৃগাঙ্কের পরিবার বলতে এক দাদা মৃদুল এবং মা রিনা রায়।

পায়েলের পরিবারের অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার শুরু হয়। মানসিক অত্যাচারের পাশাপাশি শারীরিক অত্যাচারও চালানো হত পায়েলের উপরে। বছরখানেকের মধ্যে সম্পর্ক এমন জায়গায় পৌঁছয় যে, সে সময়ে বেশ কয়েক বার থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন পায়েল। শুধু তা-ই নয়, পায়েলের পরিবার তাদের অভিযোগে জানিয়েছে, পায়েলের অবিবাহিত ভাসুর তাঁর সঙ্গে অশালীন আচরণের চেষ্টা করেছিলেন। নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে পায়েল ভাসুরকে মারধর করেন।

ওই আবাসনের কেয়ারটেকার জানিয়েছেন, দু’বছর হল রায় পরিবার দোতলার একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া এসেছে। কিন্তু মৃগাঙ্কের বিয়ের পর থেকেই ওই ফ্ল্যাটের ভিতরে চিৎকার-চেঁচামেচি হত। ঝগড়া, মারামারি এমন পর্যায়ে গিয়েছিল যে, আবাসনের অন্যদের অসুবিধা হত। পরে ফ্ল্যাটের মালিক সব জেনে রায় পরিবারকে বাড়ি ছাড়তেও বলেছিলেন।

তবে বৃহস্পতিবার রাতে কী হয়েছিল, তা তাঁরা জানতে পারেননি। রাতে পায়েলকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়ে তাঁরা ঘটনাটি জানতে পারেন। কেয়ারটেকার বলেন, ‘‘ওই বৌদির বর জানালেন, বৌদি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরে পুলিশ এলে জানতে পারি, বৌদি আত্মহত্যা করেছেন!’’

পায়েলের শাশুড়ি রিনা রায়ের দাবি, ঘটনার সময়ে তিনি ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। তিনিই পায়েলের ঘরে ঢুকে তাঁকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখে নামিয়ে আনেন এবং ছোট ছেলেকে খবর দেন। অথচ ওই মহিলা নিজেই দাবি করেছেন, তিনি অসুস্থ। তা-ই যদি হবে, তা হলে বৌমাকে নামাতে পড়শিদের সাহায্য নিলেন না কেন? উত্তর দেননি রিনাদেবী। তবে খুনের অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার দেহের ময়না-তদন্তের পরেই মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন