সিদ্ধান্তে দেরি, খেসারত সরকারি হাসপাতালের

পরিস্থিতি সামলাতে প্রায় সব হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর্স (সিএমএস) নির্ধারিত দামের থেকে অনেক বেশি টাকায় ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকান থেকে তা ‘লোকাল পারচেজ’ করতে বাধ্য হচ্ছে।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৯ ০৩:০৭
Share:

—ফাইল চিত্র।

বাজারে দাম বেড়েছে, তবে সেই বর্ধিত দাম দিতে রাজি হচ্ছিল না সরকার। অবশেষে বর্ধিত দামে দরপত্র ডাকা হলেও অভিযোগ, দেড় বছর ধরে সিদ্ধান্ত হয়নি। যার ফল হিসেবে গত ডিসেম্বর থেকে রাজ্যের সব সরকারি হাসপাতালে ‘হিউম্যান অ্যালবুমিন’-এর সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

পরিস্থিতি সামলাতে প্রায় সব হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর্স (সিএমএস) নির্ধারিত দামের থেকে অনেক বেশি টাকায় ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকান থেকে তা ‘লোকাল পারচেজ’ করতে বাধ্য হচ্ছে। হিউম্যান অ্যালবুমিনের ১০০ মিলিলিটার বোতল স্বাস্থ্য দফতর কেনে ২৭২৭ টাকায়। সরবরাহ না থাকায় সেটাই কিনতে হচ্ছে ৩২০০-৩৬০০ টাকায়।

যে কোনও ওষুধ রক্তের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশে পৌঁছে দিতে অ্যালবুমিন বাহকের কাজ করে। এই প্রোটিনটি তৈরি হয় যকৃতে। আগুনে পোড়া রোগীর চিকিৎসায়, যে কোনও বড় অস্ত্রোপচারে, যকৃৎ ও কিডনি প্রতিস্থাপনে, সিরোসিস অব লিভারে অ্যালবুমিন প্রয়োজন।

Advertisement

স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, স্বাস্থ্য পরিষেবায় সার্বিক ভাবে অর্থের টানাটানি সত্ত্বেও এই পরিস্থিতি হতে দেওয়া হল কেন?

রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি।’’ আর রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘হিউম্যান অ্যালবুমিনের বর্ধিত দামের দরপত্র দু’বার ডাকা হয়েছিল। দু’বারই মাত্র একটি সংস্থা অংশ নেয়। তাই নিয়ম অনুযায়ী, সেই সংস্থাকে সবুজ সঙ্কেত দেওয়ার বিষয়ে অর্থ দফতরের অনুমতি চেয়েছে স্বাস্থ্যভবনের বিভাগীয় টেন্ডার কমিটি। তাতে সময় লাগছে। নিয়মের কিছু বাধা থাকে। কিন্তু নিয়ম মানাটাও জরুরি।’’ তবে স্বাস্থ্য দফতরের আর এক কর্তার কথায়, ‘‘নিয়ম মানতে গিয়ে উল্টে সরকারের বেশি টাকা খরচ হচ্ছে, সে দিকে কারও হুঁশ নেই। সেই সঙ্গে রোগীদের ভুগতে হচ্ছে। কারণ, সরবরাহ না থাকায় যে পরিমাণ হিউম্যান অ্যালবুমিন কেনা হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম।’’

এসএসকেএমে প্রতি মাসে ১০০ মিলিলিটার হিউম্যান অ্যালবুমিনের প্রায় ১০০০টি বোতল লাগে। তারা এখন ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান থেকে এক-একটি বোতল ৩৪৫০টাকায় কিনছে। শেষবার ৯০০ বোতল কেনা হয়েছে দিন পনেরো আগে। মেডিক্যাল কলেজে প্রতি মাসে দরকার হয় গড়ে ৫০০-৬০০ বোতল। তারা এক-একটি বোতল ৩৫৯০ টাকায় কিনছে। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ প্রতি ১০০ মিলিলিটারের বোতল কিনছে ৩৫০০ টাকায়। শুধু এসএসকেএম হাসপাতালের আউটডোরেই প্রতিদিন ৮-১০ জন রোগী পাওয়া যায়, যাঁদের ‘হিউম্যান অ্যালবুমিন’ প্রয়োজন। বাইরের দোকান থেকে এঁদের অনেকেরই অ্যালবুমিন কেনার ক্ষমতা নেই। কারণ, সেখানে ১০০ মিলিলিটারের দাম ৩৮০০-৪২০০ টাকা পর্যন্ত হয়।

২০১৪-১৫ সালে দরপত্র ডেকে একটি সংস্থাকে ২৭২৭ টাকায় ১০০ মিলিলিটার করে অ্যালবুমিন স্বাস্থ্য দফতরে সরবরাহের জন্য বাছাই করা হয়। ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই দামেই চলে। এর মধ্যে বহুবার তারা সরকারকে টাকা বাড়ানোর অনুরোধ জানায়। শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি ও জুনে দু’বার দরপত্র ডাকা হয়। কিন্তু ওই সংস্থা ছাড়া কেউ অংশ নেয়নি। তখন ফাইল চালাচালি শুরু হয়। কিন্তু দাম বাড়ানো হয়নি। ফলে ওই সংস্থা সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। তখন শুরু হয় বেশি দামে ‘লোকাল পারচেজ’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন