আমরণ অনশনে অনড় মেডিক্যালের ছাত্র-ছাত্রীরা। নিজস্ব চিত্র।
মেডিক্যাল কলেজে পড়ুয়াদের অনশন নিয়ে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়েছে। রবিবার বিকেলে স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার জারি করা এক প্রেস বিবৃতিতে জটিলতা বাড়ে। ওই বিবৃতিতে কোনও হস্টেল সমস্যার সমাধানের ইঙ্গিত না দিয়ে পড়ুয়াদের অনশন প্রত্যাহারের অনুরোধ করা হয়। সেই সঙ্গে একাধিকবার অনশনকে ‘প্রতীকী’বলে উল্লেখ করা হয়। ১৩ দিন অনশনের পরেও সরকারের তরফে সমাধান সূত্রের না দিয়ে অনশন প্রত্যাহার করতে বলার পিছনে অনেকে সরকারের কঠোর মনোভাবেরই ইঙ্গিত পাচ্ছেন।
হস্টেলের দাবিতে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন ২১ পড়ুয়া। এই ক’দিনে অনেক হিসেবনিকেশ হয়েছে। দু’বার বদল হয়েছে অধ্যক্ষ। এরই মধ্যে মেডিক্যাল কলেজের পুরনো চারটি হস্টেলে সরেজমিনে ছানবিন করেছে স্বাস্থ্য দফতর। তবে সমাধান সূত্র এখনও অধরা। পুরো বিষয়টি এখন নবান্নের সিদ্ধান্তের উপরেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য ভবন ঘুরে নবান্নে পৌঁছে গিয়েছে এই রিপোর্ট। নবান্ন সূত্রে খবর, এই বিষয়টি দেখবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই। হস্টেল বিতর্কের রফাসূত্র বের করতে, মেডিক্যালের অধ্যক্ষ অশোক ভদ্র রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁরা দু’জনেই জানিয়ে দিয়েছেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। রবিবারের প্রেস বিবৃতির পর অধ্যক্ষের গলাতেও শোনা গিয়েছে হতাশার সুর।
স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার প্রেস বিবৃতি
গত তিন বছর ধরে কলেজে কাউন্সেলিংই হয়নি। যার ফলে মোট দু’শো জন সিনিয়র ছাত্রছাত্রী হস্টেলে ঠাঁই পাননি। চারটি হস্টেল পরিদর্শন করে দেখা গিয়েছে, সেখানে আর মাত্র ৯৮ জনের থাকার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
আবর্জনার স্তুপ আবাসনের বিভিন্ন অংশে
ইতিমধ্যেই ওই হস্টেলগুলিতে একটি ঘরে কোথাও চারজন, কোথাও পাঁচ জন করে রয়েছেন। ‘মেডিক্যাল কাউন্সিলের অফ ইন্ডিয়া’-র নিয়ম অনুয়ায়ী কোনও মতেই একটি ঘরে তিন জনের বেশি রাখা যাবে না। কিন্তু হবু ডাক্তারদের কোনও উপায় নেই। জরাজীর্ণ অবস্থার কারণে সব ঘরে থাকতেও পারেন না তাঁরা।
ভেঙে পড়ছে সিনিয়র ছাত্রদের আবাসনের সিলিং
এখন সমস্যা হচ্ছে, বাকি ১০২ জন ছাত্রকে কোথায় রাখবেন কলেজ কর্তৃপক্ষ?
আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, “স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তাও সিদ্ধান্ত নিতে পারলেন না। এবার বাকি রইলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রীও। নতুন বয়েজ হস্টেলে সিনিয়র ছাত্রদের রাখা ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই।আর যদি তা-ও না হয়, তাহলে গণআন্দোলনের পথেই যেতে হবে। ইতিমধ্যেই তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে।”
জরাজীর্ণ হস্টেলের গেস্ট রুম
হাসপাতাল সূত্রে খবর, গত তিন বছর ধরে ঘর ভাড়া করে বিভিন্ন জায়গায় থাকতে বাধ্য হয়েছেন সিনিয়র ছাত্ররা। সেই সময় বলা হয়েছিল, নতুন ভবন তৈরি হলেই তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করা হবে। এ বছর ‘নিউ বয়েজ হস্টেল’ চালু হতেই প্রথম বর্ষের দেড়শো জন ছাত্রকে সেখানে থাকতে বলা হয়। কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি ছিল, ‘মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া’-র নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রথম বর্ষের ছাত্রদের সঙ্গে সিনিয়র পড়ুয়াদের এক সঙ্গে রাখা যাবে না।
প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের জন্য নবনির্মিত হস্টেল
এর তীব্র বিরোধিতা করেছেন চিকিৎসকেরাও। বিশিষ্ট চিকিৎসক রেজাউল করিমের কথায়, “এমসিআই-এর আইনে কোথাও বলা নেই একই বিল্ডিংয়ের মধ্যে প্রথম বর্ষের ছাত্রদের সঙ্গে সিনিয়রদের রাখা যাবে না। বলা হয়েছে, একই ব্লকে রাখা যাবে না। অর্থাৎ ওই এগারো তলা বিল্ডিংয়ের যে কোনও একটি ফ্লোরে আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের রাখাই যেতে পারে।”
আরও পড়ুন: গুরুতর অসুস্থ ছাত্রেরা, ‘নতিস্বীকারে নারাজ’ প্রশাসন
আন্দোলনকারীদের পাশে থেকে চিকিৎসকদের প্রশ্ন, “কর্তৃপক্ষ কি নিজেরাও নিয়ম মানছেন? ওই বহুতলে কী করে অতিথি নিবাসের জন্য আলাদা ঘর বরাদ্দ করা হল? ওই বহুতলেই তো পোস্ট গ্রাজুয়েটের পড়ুয়ারাও রয়েছে। তা হলে যাঁদের সত্যিই ঘর দরকার, তারা কেন হস্টেল পাবেন না?”