সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় বাধা হকার

সেতুর তলাটা ভর্তি হকার আর দোকানে। তাতেই আটকে গিয়েছে ‘স্বাস্থ্য পরীক্ষার’ কাজ। শহরের বিভিন্ন সেতু হাল দেখতে গিয়ে এ ভাবেই শিয়ালদহ স্টেশন সংলগ্ন উড়ালপুলে ধাক্কা খেয়েছে বিশেষজ্ঞ সংস্থা রাইটস্‌।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শিয়ালদহ শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৩৬
Share:

অম্বেডকর সেতুর নীচে চলছে পরীক্ষা। — নিজস্ব চিত্র

সেতুর তলাটা ভর্তি হকার আর দোকানে। তাতেই আটকে গিয়েছে ‘স্বাস্থ্য পরীক্ষার’ কাজ। শহরের বিভিন্ন সেতু হাল দেখতে গিয়ে এ ভাবেই শিয়ালদহ স্টেশন সংলগ্ন উড়ালপুলে ধাক্কা খেয়েছে বিশেষজ্ঞ সংস্থা রাইটস্‌। আপাতত সেই সেতুর হাল-হকিকত জানা স্থগিত রাখতে হচ্ছে তাদের।

Advertisement

গত মার্চে উত্তর কলকাতায় নির্মীয়মাণ বিবেকানন্দ সেতু ভেঙে পড়ার পরে কলকাতার সব সেতুর হাল কেমন, তা দেখতে রাইটস্-কে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। প্রথম ধাপে শহরের পাঁচটি সেতুর কাঠামো কেমন আছে, তা দেখার কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে হাওড়া এবং শিয়ালদহ স্টেশন লাগোয়া বঙ্কিম ও বিদ্যাপতি সেতু। রয়েছে বাইপাসের উপরে বাঘা যতীন, সায়েন্স সিটির কাছে আম্বেডকর সেতু এবং চিংড়িঘাটা মোড়ের উপরে সেক্টর ফাইভগামী উড়ালপুলও।

বঙ্কিম সেতুতে সেই কাজ অনেকটা হলেও রাইটসের কর্তারা হোঁচট খেয়েছেন শিয়ালদহের উড়ালপুলে। রাইটসের সংশ্লিষ্ট বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার তরুণ সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘শিয়ালদহ উড়ালপুলের উপরের হাল দেখা হয়েছে। তবে নীচটা কত পোক্ত রয়েছে, তা রিবাউন্ড হ্যামার ( সেতুর ভিতরে থাকা কংক্রিট ও লোহার শক্তি পরীক্ষার আধুনিক যন্ত্র) দিয়ে দেখা দরকার। সেই স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র বসানোর মতো কোনও জায়গা ব্রিজের তলায় মিলছে না। সেতুর নীচে পুরো জায়গাটাই আটকা।’’ কাজ করতে গিয়ে এমন নানা অসুবিধের কথা সরকারের কাছে জানিয়েও দিয়েছে রাইটস্‌।

Advertisement

নবান্ন সূত্রের খবর, বিবেকানন্দ উড়ালপুলে বিপর্যয়ের পরে শহরের সেতুগুলির হাল জানা খুবই জরুরি হয়ে পড়ে। তার ভিত্তিতেই মাস চারেক আগে কেএমডিএ কতৃর্পক্ষ তাঁদের দায়িত্বে থাকা ওই পাঁচটি সেতুর কাঠামোর হাল জানার বরাত দেন রেল দফতরের নিজস্ব সংস্থা রাইটস্‌-কে। রাইটসের এক অফিসার জানান, শরীর থাকলেই খারাপ হতে পারে। সেতুগুলির ক্ষেত্রেও তাই। কোনওটা ৩০ বছর, কোনওটা বা তারও আগে তৈরি। যে সময়ে এই সব সেতু তৈরি করা হয়েছিল, তখনকার তুলনায় যানবানের সংখ্যাও এখন অনেক বেড়েছে। শুধু চার-ছ’চাকা নয়, ১৬ চাকা, ২৪ চাকার গাড়িও ওই সেতুর উপর দিয়ে যাতায়ত করছে। তাই সেতুগুলির স্ট্রাকচারাল ক্ষমতা কেমন আছে, তা জানা জরুরি। সেই কাজটাই তাঁরা করছেন বলেন জানান ওই অফিসার।

সমস্যা কোথায়? রাইটস্‌ সূত্রের খবর, এই কাজের ক্ষেত্রে সেতুগুলি নির্মাণের পরে যে নকশা (অ্যাজ বিল্ট ড্রয়িং) হয়েছিল, তা দেখা খুব জরুরি। সে সব চাওয়া হয়েছে, এখনও মেলেনি। বাঘা যতীন উড়ালপুলের হাল দেখতে যাওয়া রাইটসের এক অফিসার জানান, সেতুর হাল বোঝার জন্য দু’ধরনের আধুনিক যন্ত্র কাজ করছে। একটি হল রিবার্থ স্ক্যানার, তা দিয়ে কংক্রিটের ভিতরের লোহার রডের অবস্থা বোঝা যায়। তা কতটা ভার সহ্য করতে পারবে এবং কত দিন না পাল্টালেও কাজ চলবে, সে সব দেখা হয় ওই যন্ত্র দিয়ে। দ্বিতীয়টি হল, রিবাউন্ড হ্যামার। কংক্রিট কেমন আছে, তা ওই যন্ত্র চালালেই ধরা পড়বে। কোথাও তা দুর্বল হলে মেশিন সতর্ক করে দেবে। কলকাতার বাকি চারটি সেতুর উপর-নীচে ওই যন্ত্র নিয়ে পরীক্ষা চললেও শিয়ালদহে সেই কাজ ব্যাহত হয়ে পড়েছে।

ওই যন্ত্রে পরীক্ষা না করেই কি শিয়ালদহ উড়ালপুলের রিপোর্ট দেওয়া হবে? রাইটস্‌ তেমনটা করতে চায় না, বললেন সংস্থার এক কর্ণধার। এ দিকে সেতুর নীচটা যে ভাবে হকার এবং দোকানে ঘেরা, তাতে কলকাতা পুরসভার হস্তক্ষেপ দরকার বলে মনে করছে নবান্ন। আর নগরোন্নয়ন দফতর সূত্রের খবর, বর্তমানে ওই সেতুটির স্ট্রাকচারাল দিকটা দেখে কেএমডিএ। রক্ষণাবেক্ষণ করে পুরসভা। পুরসভার মেয়র পারিষদ (রাস্তা) রতন দে জানান, তিনি এ বিষয়ে খোঁজ নেবেন। যদিও পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সম্প্রতি জানিয়েছেন, ওই সেতু কলকাতা পুরসভাকে হস্তান্তর করা হচ্ছে।

এ দিকে রাইটস্‌ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, আগামী মার্চের মধ্যেই তাঁরা ওই পাঁচটি সেতুর রিপোর্ট সরকারকে দিতে চায়। সে ক্ষেত্রে শিয়ালদহ উড়ালপুলের কাজ কিছুটা অসমাপ্ত রেখেই তা করতে হতে পারে বলে মনে করছে রাইটস্‌। এর মধ্যে সরকারি তরফে সমাধানের কোনও পথ বার করা হলে তবেই পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দেওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছে রাইটস্‌।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন