উদ্ধারকারী: অমিত কুমার (উপরে) ও রাজু মিশ্র। —নিজস্ব চিত্র।
রোজকার মতোই ভোরে হাওড়া স্টেশনে এসেছিলেন অমিত কুমার। ব্যান্ডেলের বাসিন্দা, বছর পঞ্চাশের অমিত পেশায় মালবাহক। কিছু জিনিসপত্র পৌঁছে, হাওড়া ব্রিজ হয়ে স্টেশনে ফিরছিলেন তিনি। তখন প্রায় সওয়া এগারোটা। অফিসটাইমের ভিড়ে থিকথিক করছে হাওড়া ব্রিজ। হঠাৎ বিকট শব্দ! উল্টো দিকে তাকিয়ে অমিত দেখেন, সম্পূর্ণ উল্টে গিয়েছে একটি মিনিবাস। ভিতর থেকে শোনা যাচ্ছে তীব্র আর্তনাদ।
‘‘সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে ও পারে গিয়ে দেখি, বাসের দরজার দিকটা মাটির সঙ্গে পিষে গিয়েছে। জানলা দিয়ে হাত বার করে বেরোনোর জন্য ছটফট করছেন যাত্রীরা। বুঝতে পারছিলাম না কী করব!’’— বলতে গিয়ে গলা কাঁপছিল অমিতের। চিৎকার করে আরও কয়েক জন মোটবাহক এবং হকারকে জড়ো করেন অমিত। তত ক্ষণে এসে গিয়েছেন কয়েক জন পুলিশকর্মীও।
অমিতেরা কয়েক জন কাত হয়ে যাওয়া বাসটির উপরে উঠে পড়েন। চালকের দরজা ছিল উপর দিকে। অমিত কোনও রকমে বাইরে থেকে হাত ঢুকিয়ে ওই দরজার ছিটকিনি খুলে ফেলেন। প্রথমেই বেরিয়ে আসেন চালক। তার পর একে একে যাত্রীরা। ‘‘ভয়ে, যন্ত্রণায় সবাই চিৎকার করছিলেন। তত ক্ষণে কয়েকটা অ্যাম্বুল্যান্সও এসে গিয়েছে। আমরা এক এক করে যাত্রীদের বার করে অ্যাম্বুল্যান্সে তুলছিলাম। অনেকেই রক্তে মাখামাখি। এত রক্ত আগে কখনও দেখিনি।’’— শিউরে ওঠেন অমিত।
অমিতের সঙ্গেই উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছিলেন স্থানীয় ফল বিক্রেতা রাজু মিশ্র। তিনিও হঠাৎ শব্দ পেয়ে ছুটে যান উল্টে যাওয়া বাসের দিকে। রাজু বলেন, ‘‘এত বড় দুর্ঘটনা আগে কখনও দেখিনি। প্রথমে বুঝতেই পারছিলাম না কী ভাবে মানুষগুলিকে বাঁচানো যাবে। ভাগ্যিস চালকের পাশের দরজাটা খোলা গেল!’’
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, বাসে অতিরিক্ত যাত্রী উঠেছিলেন। দরজায় অনেকে ঝুলছিলেন। সে জন্যই ও ভাবে বাসটি উল্টেছে। দরজার দিকে যাঁরা ছিলেন, তাঁরাই নীচে চাপা পড়ে যান। তাঁদের মধ্যে দু’জন মারা গিয়েছেন। বাকিদের মধ্যে ১৪ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।