Kestopur canal

Water lodging Problem: খালের নাব্যতা বাড়ালে তবেই মুক্তি জলযন্ত্রণার

প্রাকৃতিক নিয়ম মেনেই জলের গতি নীচের দিকে প্রবাহিত হয়। তার স্বাভাবিক পথ বন্ধ হলে সে অন্য পথ খুঁজে নেয়।

Advertisement

দীপঙ্কর সিংহ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২১ ০৬:৫৫
Share:

কেষ্টপুর খাল।

প্রাকৃতিক নিয়ম মেনেই জলের গতি নীচের দিকে প্রবাহিত হয়। তার স্বাভাবিক পথ বন্ধ হলে সে অন্য পথ খুঁজে নেয়। ঠিক যেমন, বন ধ্বংস হলে বন্যপ্রাণী লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। নগর পরিকল্পনার কাজ, পারিপার্শ্বিক পরিবেশের সঙ্গে জনপদের সামঞ্জস্য গড়ে তোলা। অথচ এ দেশে নগর পরিকল্পনার বিষয়টি সব সময়েই উপেক্ষিত থেকেছে। যার ফল ভুগতে হয় নাগরিকদের। কলকাতার জলযন্ত্রণার ক্ষেত্রেও এটা সত্যি।

Advertisement

বার্ষিক বৃষ্টিপাতের গড় প্রায় এক থাকলেও প্রতি বর্ষায় শহরবাসীকে ভুগতে হয়। কেন? শহরের নিকাশি পরিকল্পনা পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, কলকাতার বর্তমান নিকাশি ব্যবস্থার মূল পরিকল্পনা হয়েছিল ১৬০ বছর আগে। অথচ তখন ফাঁকা জমি, মাঠ, পুকুর ছিল। বৃষ্টির জলের অনেকটাই মাটি শুষে নিত। এখন পিচ, কংক্রিট আর টাইলসে বাঁধানো থাকায় বৃষ্টির জল মাটি শুষে নিচ্ছে না। ফলে সেই জল দ্রুত নিকাশি নালায় পৌঁছে সেগুলি দ্রুত পরিপূর্ণ

করে দিচ্ছে। এতে জলপ্রবাহ শ্লথ হয়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে শহরের আয়তন বৃদ্ধি ও নিকাশি ব্যবস্থার পুরনো হয়ে যাওয়ার সমস্যা তো রয়েছেই। উপযুক্ত পলি নিষ্কাশনের অভাবে গঙ্গার জলস্তরও বর্ষার ভরা কোটালে তীরবর্তী অঞ্চলের থেকে উঁচুতে বয়ে যায়। ফলে কোনও দিন ভারী বৃষ্টি হলে সেই জল নামতে বেশ কয়েক দিন লেগে যাচ্ছে।

Advertisement

এমনিতে শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত বিভিন্ন খালের মাধ্যমে নিকাশির জল পূর্বে বিদ্যাধরী, মাতলা বা সরাসরি হুগলি নদীতে গিয়ে পড়ে। ওই খালগুলি শহরের নিকাশির গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। অথচ শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে খালের প্রাকৃতিক ঢাল-পথে অপরিকল্পিত বসতির বৃদ্ধি খালের জলের স্বাভাবিক গতিকে বাধা দিচ্ছে। সেই সঙ্গে মাত্রাতিরিক্ত বর্জ্য খালের জলের ঘনত্ব বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতে পলি জমে নাব্যতা কমছে। এ ছাড়াও রয়েছে খালপাড় দখল হয়ে পরিসর সঙ্কীর্ণ হওয়ার সমস্যা।

গত কয়েক বছর ধরে শহরের নিকাশি ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ চলছে। কিন্তু সেই কাজের পরিকল্পনা করা হচ্ছে ভারী বর্ষার ধাক্কার রিটার্ন পিরিয়ড বা ফিরে আসার সম্ভাবনা শুধুমাত্র দুই মাস ধরে নিয়ে। আধুনিক শহরে দু’বছর বা তারও বেশি রিটার্ন পিরিয়ড ধরা হয়, যাতে শহরে যথেষ্ট বৃষ্টি হলেও সহজে বানভাসি না হয়। কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনস্থ ‘সেন্ট্রাল পাবলিক হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং অর্গানাইজেশন’-এর (সিপিএইচইইও) নির্দেশিকা অনুসারে, শহরের নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তোলা উচিত অন্তত পক্ষে এক বৎসরের অতি বর্ষণের সহনশক্তি সম্পন্ন করে। অপর দিকে, জল দ্রুত নেমে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট সংখ্যক গালিপিট বসানো প্রয়োজন। যাতে এক জায়গার জল অন্য নিচু এলাকায় গিয়ে সমস্যার সৃষ্টি করতে না পারে। এ ছাড়াও নদী, সংলগ্ন নিচু এলাকাগুলি থেকে গঙ্গায় সরাসরি বৃষ্টির জল ফেলার অতিরিক্ত ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। পাম্পিং স্টেশনের উন্নয়ন এবং গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে অতিবৃষ্টির জল ধরে রাখার জন্য মাটির গভীরে জলাধার নির্মাণেরও প্রয়োজন রয়েছে।

অতীত পরিকল্পনায় নির্মিত পুরনো নিকাশি নালার ঢাল ও প্রবাহের জন্য নাব্যতা আজকের প্রয়োজনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাই নিকাশি নালার ক্ষমতা বৃদ্ধি না করতে পারলে দ্রুত বৃষ্টির জল বার করা অসম্ভব। ফলে খালের নাব্যতা বাড়ালে তবেই মুক্তি জলযন্ত্রণার থেকে। সঙ্গে প্রয়োজন আরও অনেক কাজ। প্রবল বৃষ্টিতে জল সব শহরেই জমতে পারে, সেটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু সেটা এত ঘন ঘন হলে মানুষ বিপন্ন বোধ করবেনই। জল-যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে যথোপযুক্ত নিকাশির পরিকল্পনা করা জরুরি। বেহালার মতো এলাকাকে গঙ্গার জলস্তরের উপরে অতি-নির্ভরশীলতা থেকে মুক্ত করার পথ খুঁজতে হবে। মধ্য কলকাতার নিচু এলাকার জল বার করার জন্য সার্কুলার ক্যানাল, বেলেঘাটা ক্যানালকে নতুন ভাবে ব্যবহার করা যায় কি না, তা-ও বিবেচনা করতে হবে।

মাদুরদহের মতো শহরের আরও কিছু নিচু এলাকার জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা করা সম্ভব। শহরের উপকণ্ঠের ও ভিতরের খালগুলির বিকাশ ঘটিয়ে উন্নততর ব্যবস্থা করাই যেতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন