বাতিস্তম্ভে অবৈধ কেব্‌ল, পুর আয় শূন্য

শুধু ওই পুর অফিসারই নন, কয়েক জন কাউন্সিলরও মনে করেন, মানুষের সুরক্ষার কথা ভেবে বাতিস্তম্ভে ঝুলে থাকা কেব্‌ল সংযোগের তার কেটে ফেলা দরকার।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৩৩
Share:

বাতিস্তম্ভে জড়ানো কেব্‌ল। বি বা দী বাগে। নিজস্ব চিত্র

শহর জুড়ে বাতিস্তম্ভগুলিতে যে সব কেব্‌ল সংযোগের তার জড়ানো হয়েছে, তা পুরোপুরি বেআইনি। বৃহস্পতিবার এ কথা জানিয়েছেন পুরসভারই এক আমলা। আর সব জেনেও পুর কর্তৃপক্ষের যে ‘ঠুঁটো জগন্নাথের’ দশা, তা জানাতেও কসুর করেননি ওই পদস্থ অফিসার। সম্প্রতি কেব্‌ল সংযোগের তারে জড়িয়ে মোটরবাইক আরোহী এক যুবকের মৃত্যু নিয়ে অস্বস্তিতে পুর প্রশাসন এবং পুলিশ। প্রশ্ন উঠছে, বেআইনি ভাবে শহর জুড়ে কেব্‌লের তার লাগানো হয়েছে এবং হচ্ছে জেনেও কেন পুর প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে না? কেনই বা নীরব পুলিশও? ওই আধিকারিকের জবাব, বছর চারেক আগে দক্ষিণ কলকাতার পার্ক সার্কাস এলাকায় রাস্তার উপরে যথেচ্ছ ভাবে ঝুলে থাকা তার সরাতে অভিযান চালিয়েছিল পুরসভার দল। সিদ্ধান্ত হয়েছিল, ওই সব তার কেটে ফেলা হবে। কিন্তু এলাকায় পৌঁছতেই রে রে করে তেড়ে আসেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। তার কাটা হলে টিভি দেখা যাবে না— এই দাবি তুলে রুখে দাঁড়ান তাঁরা। অভিযোগ, শাসানো হয় পুরকর্মীদের। এমনকী মারধরের হুমকিও দেওয়া হয়। কার্যত তার পর থেকেই শহর জুড়ে কেব্‌ল তারের কুণ্ডলী সরানোর কাজে সাহস দেখাননি কোনও পুরকর্মী। ফলে শহরের নানা বাতিস্তম্ভে বেড়েই চলেছে তারের জাল।

Advertisement

শুধু ওই পুর অফিসারই নন, কয়েক জন কাউন্সিলরও মনে করেন, মানুষের সুরক্ষার কথা ভেবে বাতিস্তম্ভে ঝুলে থাকা কেব্‌ল সংযোগের তার কেটে ফেলা দরকার। দক্ষিণ কলকাতার কাউন্সিলর তথা পুরসভার চেয়ারপার্সন মালা রায়ের দাবি, তিনি প্রায়ই নিজের এলাকায় বিপজ্জনক ভাবে ঝুলে থাকা কেব্‌লের তার পুরকর্মীদের দিয়ে কাটিয়ে দেন। তাঁর কথায়, ‘‘এক শ্রেণির কেব্‌ল অপারেটর তার ঝুলিয়ে ব্যবসা করছেন। এমনও দেখা গিয়েছে, ঝুলে থাকা কেব্‌লের তারের সঙ্গে টিভির সংযোগই নেই, সেগুলি বাতিল হয়ে পড়ে আছে। ওই তার সরানোর প্রয়োজন মনে করেন না সংশ্লিষ্ট কেব্‌ল অপারেটর।’’ এ ভাবেই শহর জুড়ে বাতিস্তম্ভে কেব্‌ল তারের জট বাড়ছে বলে মনে করেন মালাদেবী।

কলকাতা পুরসভার একাধিক মেয়র পারিষদও বলছেন, শহরকে সুন্দর রাখতে যত্রতত্র কেব্‌লের তার সরানো যে জরুরি, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে মেয়র পরিষদ বৈঠকেও। তাতে ফল হয়নি। মাসখানেক আগে কলকাতা পুর ভবনে এক বৈঠকে কেব্‌ল অপারেটরদের বলা হয়েছিল, মাটির উপর দিয়ে কেব্‌ল সংযোগের তার নিয়ে যাওয়া যাবে না। তা নিতে হবে ভূগর্ভ দিয়ে। কিন্তু ওই বলাই সার, কোনও কাজ হয়নি। বরং পুরসভার নাকের ডগায় চৌরঙ্গি প্লেসে, এস এন ব্যানার্জি রোডে যে ভাবে কেব্‌লের তার ছড়িয়ে রয়েছে, তা রীতিমতো বিপজ্জনক। শুধু সৌন্দর্যায়ন নয়, মানুষের সুরক্ষার কথা ভেবেও পুর প্রশাসনের এ ব্যাপারে কড়া হওয়া উচিত বলে মনে করছেন মেয়র পারিষদেরা। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না। এক পুর ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, ‘‘এক-একটি বাতিস্তম্ভে যে পরিমাণ তার ঝোলানো রয়েছে, তাতে তারের ভারে সেগুলির হেলে পড়ার দশা।’’

Advertisement

পুরসভা সূত্রের খবর, এক-একটি বাতিস্তম্ভ ব্যবসার কাজে ব্যবহার হলে মাসে এক হাজার টাকা করে দিতে হয়। একটি বেসরকারি টেলিকম সংস্থা শহর জুড়ে প্রায় ১০০ বাতিস্তম্ভ ব্যবহার করছে। এর জন্য ইতিমধ্যেই ৫০ লক্ষ টাকা তারা পুরসভার কোষাগারে জমা দিয়েছে। আর কেব্‌ল সংযোগের তার ঝুলছে কয়েক হাজার বাতিস্তম্ভে। সেই হিসেবে কয়েক কোটি টাকার পুর প্রশাসনের আয় হওয়ার কথা। অথচ এক পয়সাও জমা পড়ে না। অন্য দিকে, কেব্‌ল অপারেটরেরা গ্রাহকদের থেকে প্রতি মাসে ২০০-৩৫০ টাকা নেন। পুরসভার এক আমলা স্বীকার করেছেন, শুধু কেব্‌ল সংযোগের তারই নয়, বাতিস্তম্ভে যে কোনও কিছুই ঝোলানো বেআইনি। তা সত্ত্বেও শহরের বহু বাতিস্তম্ভে কেব্‌লের তার, বিজ্ঞাপনের ব্যানার-হোর্ডিং ঝুলছে। কোনও ভাড়া না দিয়েই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন