জরিমানা নিয়ে বৈধ করা যাবে না বেআইনি নির্মাণ

জরিমানা (রিটেনশন চার্জ) নিয়ে বেআইনি নির্মাণ বৈধ বলে ঘোষণা করার কোনও এক্তিয়ার কলকাতা পুরসভার নেই বলে রায় দিল হাইকোর্ট। শহরের ১১টি বেআইনি বাড়ির বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় এই নির্দেশের পাশাপাশি আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে বাড়িগুলি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি সৌমিত্র পাল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৪ ০৩:১৯
Share:

জরিমানা (রিটেনশন চার্জ) নিয়ে বেআইনি নির্মাণ বৈধ বলে ঘোষণা করার কোনও এক্তিয়ার কলকাতা পুরসভার নেই বলে রায় দিল হাইকোর্ট। শহরের ১১টি বেআইনি বাড়ির বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় এই নির্দেশের পাশাপাশি আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে বাড়িগুলি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি সৌমিত্র পাল।

Advertisement

হাইকোর্ট বলেছে, জরিমানা নিয়ে বেআইনি নির্মাণকে বৈধ করার কোনও বিধান পুর আইনে নেই। পুরসভা সূত্রে সে কথা স্বীকার করে বলা হচ্ছে, এটা আইন নয় প্রথা। বস্তুত, মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ই মাস কয়েক আগে এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, “আইন না থাকলেও এটা কনভেনশন। দীর্ঘকাল ধরেই তা চলে আসছে।” এই খাতে পুরসভার আয়ও বিপুল। গত আর্থিক বছরে (২০১৩-’১৪) বেআইনি নির্মাণ বৈধ করে পুরসভা জরিমানা বাবদ পেয়েছে ৬৫ কোটি টাকা। এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন এক মেয়র পারিষদ।

কী ভাবে বৈধ হয় বেআইনি নির্মাণ? এক প্রাক্তন পুরকর্তা জানান, বেআইনি বাড়ি নির্মাণের খবর পেলে তা ভাঙার আগে সংশ্লিষ্ট প্রোমোটার বা মালিককে পুর আইনের ৪০০(১) ধারায় নোটিস জারি করে কলকাতা পুরসভা। কেন ওই বেআইনি নির্মাণ ভেঙে ফেলা হবে না, তার কারণ দর্শাতে বলা হয়। তার পর বিষয়টির শুনানি হয়। শুনানিতে জরিমানা ধার্য করে অধিকাংশ বেআইনি নির্মাণকেই ছাড়পত্র দেওয়া হয় বলে পুরসভা সূত্রের খবর। কিন্তু এই ধরনের বিধান পুর আইনে নেই। সেখানে নির্মাণে ছোটখাটো ত্রুটিবিচ্যুতির ক্ষেত্রে পুরসভা অফিসারদের বিবেচনা-সাপেক্ষে ছাড়পত্র দেওয়ার কথা বলা আছে। কিন্তু তাঁরাও জরিমানা নিতে পারেন না। অথচ, জরিমানা ধার্য করে বড় মাপের বেআইনি নির্মাণকে বৈধ বলে ঘোষণা করার প্রথা চলে আসছে সেই বাম আমল থেকেই।

Advertisement

পুরসভার এক পদস্থ অফিসারের কথায়, “এ ভাবে বছরে প্রায় হাজার তিনেক বেআইনি বিল্ডিং জরিমানা দিয়ে আইনি হয়ে যাচ্ছে।” আইনে জরিমানার কথা বলা না থাকলেও শুনানিতে জরিমানা ধার্য করা হচ্ছে কেন? পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের এক ডিজির জবাব “এ রকমই হয়ে আসছে বছরের পর বছর।” ফলে বেআইনি নির্মাণ যে বাড়ছে, তা অস্বীকার করেননি তিনি।

বেআইনি বাড়ি তৈরি নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই অভিযোগ জমা পড়ে কলকাতা পুরসভায়। অভিযোগকারীদের মধ্যে সাধারণ মানুষ যেমন আছেন, তেমনই আছেন কাউন্সিলর, এমনকী মেয়র পারিষদও। যদিও বেআইনি নির্মাণের পিছনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মদতের অভিযোগও রয়েছে। পুরসভার বিল্ডিং দফতরের এক অফিসার বলেন, “পুর আইনের ৪০১(এ), ৫৮৯ ও ৬১০(২) ধারায় বলা হয়েছে শহরের কোথাও বেআইনি নির্মাণ দেখলে পুলিশ সংশ্লিষ্ট প্রোমোটার বা মালিককে গ্রেফতার করতে পারে।” কিন্তু এক পদস্থ পুলিশ অফিসারের কথায়, “পুলিশ নিজে থেকে কিছু করতে গেলেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধির চাপ আসে। পুরসভাও তখন পুলিশের পাশে দাঁড়ায় না।”

বর্তমান পুরবোর্ডের মেয়র পারিষদ পার্থপ্রতিম হাজারি কিছু দিন আগে পুর কমিশনারকে চিঠিতে জানান, পুর আইনে জরিমানা দিয়ে বেআইনি নির্মাণকে বৈধ করার ধারা নেই। অবিলম্বে তা বন্ধ হোক। এমনটা চললে অনুমোদিত প্ল্যানের বাইরে বেআইনি নির্মাণ করে তা জরিমানা দিয়ে বৈধ করানোর প্রবণতা বাড়বে। যাঁরা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত তাঁদের কড়া শাস্তির দাবিও জানিয়েছিলেন পার্থবাবু।

কিন্তু বেআইনি নির্মাণ নিয়ে রীতিভঙ্গ হয়নি কলকাতা পুরসভায়। তা বন্ধ করতে রায় দিল হাইকোর্ট। পুরসভার আইনজীবী অলোক ঘোষ এবং শুভ্রাংশু পণ্ডা জানান, শহরের এক দল বাসিন্দা ১১টি বেআইনি বাড়ির বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন। মামলার রায়ে বিচারপতি বলেন, পুর আইনেরিটেনশন চার্জ নেওয়ার কথা বলা নেই। তাই পুর কর্তৃপক্ষ টাকা নিয়ে কোনও অবৈধ নির্মাণকে বৈধ করতে পারে না।

আদালতের রায় না দেখে এ দিন মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। একই কথা বলেছেন পুর কমিশনার খলিল আহমেদ। তবে রায়ের কথা শুনে পুরসভার এক মেয়র পারিষদ বলেন, “বেআইনি নির্মাণকে টাকার বিনিময়ে ছাড় দিয়ে পুরসভার বিপুল আয় হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে পুর কর্তৃপক্ষ ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন জানাবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন