ঘুড়িটা আকাশে লাট খাচ্ছে আর লাল্টুর চোখ বার বার চলে যাচ্ছে সে দিকে। এই বুঝি চাঁদিয়াল ঘুড়িটা কেটে দিল পেটকাটিকে। আর বার বার আকাশের দিকে মন চলে যাওয়ায় অসতর্ক লাল্টুর মাথায় এসে পড়ে বিরাশি সিক্কার চাঁটি। সম্বিত ফিরে পায় সে। বাস্তবে ফিরে আসে ১২ বছরের লাল্টু।
ঘুড়ি ওড়ানোর ফুরসত কোথায় লাল্টুর? সেটা তো তার কাছে স্বপ্ন। লাল্টুর হাতে এখন রিকশার হ্যান্ডেল। পরিবারের মুখে ভাত তুলে দিতে কৈশোরকেও রিকশার মধ্যেই আটকে রেখেছে সে। কিন্তু আকাশে ঘুড়ির লড়াই দেখে বাস্তবটা ভুলতে বসেছিল ছেলেটি। সে দিকে তাকাতে গিয়ে রিকশায় ভারসাম্য থাকছিল না। মাথায় চাঁটি মেরে লাল্টুর অবস্থানটা তাই পরিষ্কার করে দিতে চেয়েছেন সওয়ারি।
উত্তর কলকাতার এক মণ্ডপে দুই ভাই, পার্থ ঘোষ এবং সিদ্ধার্থ ঘোষের ভাবনায় এ বার সেই স্বপ্ন সফল করার প্রয়াস। আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে আছে এমন অনেক লাল্টু। তাদের কৈশোর কী ভাবে ডানা মেলতে পারে, সেটাই দেখাবেন দুই ভাই। শিশু শ্রমিকদের কর্মস্থলগুলি যেন এক-একটা কারাগার। সেই কারাগার থেকে লাল্টুদের মুক্তির উপায় দেখাতে বদ্ধপরিকর উত্তরের ওই পুজো।
পার্থর কথায়, ‘‘লাল্টু একটা প্রতীক মাত্র। যে ছেলেটা সারা দিন মুখ বুজে চায়ের দোকানে কাজ করছে, যে ছেলে বা মেয়েটি মাথায় ইটের পাঁজা বয়ে পৌঁছে দিচ্ছে ইটভাটায়, তাদের কিন্তু আমরা ভুলিনি।’’ মণ্ডপসজ্জায় তাই ঠাঁই পাচ্ছে চায়ের কেটলি, কয়লার উনুন। সবাই যখন পুজোর আনন্দে মাতবে, তখন লাল্টুরা কেন আটকে থাকবে তাদের কাজের জায়গায়— এই প্রশ্নই তাঁদের থিমে তুলে আনতে চেয়েছেন পার্থ-সিদ্ধার্থ।
সিদ্ধার্থ বলছেন, ‘‘আমরা চাই সব শিশু শ্রমিক বই হাতে নিক। পড়াশোনা করুক। মাঠে গিয়ে খেলুক। নানা অলঙ্করণের মাধ্যমে এই বক্তব্যই আমরা ছড়িয়ে দিতে চাইছি গোটা মণ্ডপে।’’ পার্থ-সিদ্ধার্থর থিমের নাম তাই স্বপ্ন-উড়ান।