পুলিশের পরামর্শই সার, এখনও স্কুলগুলিতে বাড়েনি নিরাপত্তা

স্কুলের নিরাপত্তা জোরদার করতে বেশ কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল কলকাতা পুলিশের ওয়েবসাইটে। কিন্তু তাতে কাজের কাজ বিশেষ হয়নি। দিনের পর দিন ওই পরামর্শ রয়ে গিয়েছে ওয়েবসাইটেই। শহরের মোট স্কুলের মাত্র ১৫ শতাংশে ওই পরামর্শ মেনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে লালবাজার সূত্রে খবর। বাকিগুলি রয়ে গিয়েছে সেই তিমিরেই।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী ও সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৬ ০২:০২
Share:

স্কুলের নিরাপত্তা জোরদার করতে বেশ কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল কলকাতা পুলিশের ওয়েবসাইটে। কিন্তু তাতে কাজের কাজ বিশেষ হয়নি। দিনের পর দিন ওই পরামর্শ রয়ে গিয়েছে ওয়েবসাইটেই। শহরের মোট স্কুলের মাত্র ১৫ শতাংশে ওই পরামর্শ মেনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে লালবাজার সূত্রে খবর। বাকিগুলি রয়ে গিয়েছে সেই তিমিরেই।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে খবর, ওয়েবসাইটে পুলিশের তরফে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল স্কুল চত্বরে সিসিটিভি ক্যামেরা বসাতে হবে এবং নিয়মিত তার নজরদারি করতে হবে। পাশাপাশি, নিরাপত্তরক্ষীর সংখ্যা বৃদ্ধি করে গোটা স্কুলকে সুরক্ষিত করতেও বলেছিল পুলিশ। সুনিশ্চিত করতে বলা হয়েছিল অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও। সে জন্য যথেষ্ট মই ও দড়িও রাখার কথা বলা হয়, যাতে আগুন লাগলে পড়ুয়াদের দ্রুত নীচে নামিয়ে আনা যায়। এ ছাড়া, পুলিশ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল বাইরের দোকান থেকে কোনও খাবার কেনার উপরেও।

কিন্তু এত সব সত্ত্বেও কলকাতার বহু স্কুলেই যে এখনও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার হয়নি, সে কথা স্বীকার করেছেন স্কুল-কর্তৃপক্ষই। বহু সরকারি এবং সরকারি পোষিত স্কুলগুলির কোথাও একটিও সিসিটিভি নেই। দেখা মেলে না নিরাপত্তারক্ষীরও। তাই প্রশ্ন উঠেছে, পুরোটাই যেহেতু পরামর্শ হিসেবে জারি করেছিল পুলি‌শ, তাই কী সেগুলি মান্য করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেনি স্কুলগুলি?

Advertisement

তেমনটা অবশ্য মানছেন না বেলেঘাটার শুরাকন্যা বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা দেবযানী দত্তরায়। তিনি বলেন, ‘‘এটি আক্ষেপের বিষয় যে, যে স্কুলে দু’হাজারের বেশি মেয়ে পড়াশুনা করে সেখানে একটিও সিসিটিভি নেই। তবে তা বসানোর চেষ্টা করলেও অনেকের বিরোধিতায় হয়ে ওঠেনি। নেই কোনও নিরাপত্তারক্ষীও।’’ তিনি জানান, গত বছর থেকেই এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু তা আর ফলপ্রসূ হয়নি।

হিন্দু স্কুলের প্রধান শিক্ষক তুষার সামন্ত আবার বলেন, ‘‘পুলিশের তরফে এ রকম কোনও পরামর্শ পাইনি। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে স্কুলে সিসিটিভি-র কথা ভাবা যেতে পারে।’’ পুলিশের তরফে তাদের কাছে কোনও নির্দেশিকা আসেনি বলে জানান হেয়ার স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুনীল দাসও। তিনি বলেন, ‘‘স্কুলে সিসিটিভি-র ব্যবস্থা নেই। তবে বিষয়টি অবশ্যই ভেবে দেখব।’’

যোধপুর পার্ক বয়েজ স্কুলে আবার সিসিটিভি থাকলেও নেই কোনও নিরাপত্তারক্ষী। রক্ষী নেই শুরাকন্যা বালিকা বিদ্যালয়েও। সিটিটিভি বা নিরাপত্তারক্ষী— কোনওটিই নেই গার্ডেনরিচ মুদিয়ালি বালিকা বিদ্যালয়ে। এ ছাড়া, বেশির ভাগ স্কুলে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও যথেষ্ট খারাপ। বেহালা, বড়িশা, উত্তর
থেকে দক্ষিণের বিভিন্ন স্কুলেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার নয় বলে জানা গিয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে মোটেও খুশি নন এ বছর রাজ্যে উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম স্থানাধিকারী পঞ্চসায়র শিক্ষা নিকেতনের ছাত্র স্বাগতম হালদারও। তিনি বলেন, ‘‘আমার স্কুলেও নিরাপত্তার কোনও ব্যবস্থা নেই। স্কুলগুলিতে শুধু পঠনপাঠনের মান উন্নয়ন করলেই হবে না, নিরাপত্তাও থাকা দরকার।’’

পুলিশের একাংশ অবশ্য এর দায় চাপিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষের উপরেই। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম নগরপাল (প্রশাসন) মেহবুব রহমান বলেন, ‘‘স্কুলের নিরাপত্তা জোরদার করতে আমরা কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু আমরা তো তাঁদের চাপ দিতে পারি না। কাজেই পরামর্শ না মানলে আইনত কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতাও আমাদের হাতে নেই।’’ কিন্তু পুলিশের অন্য একটি অংশ অবশ্য জানাচ্ছে, পেশোয়ারের ঘটনার পরে স্কুলে নিরাপত্তা নিয়ে জোর দেওয়া হলেও ঘটনার রেশ কাটতেই পুলিশও সে সব নিয়ে আর ভাবেনি। যে কারণে ওয়েবসাইটের পরামর্শ রয়ে গিয়েছে ওয়েবসাইটেই। তা আর বাস্তবে হয়ে ওঠেনি।

তবে অবশ্যই ব্যতিক্রমী রয়েছে পাঠভবন বা যাদবপুর বিদ্যাপীঠের মতে কয়েকটি স্কুল। ওই সমস্ত স্কুলে সিসিটিভির নজরদারির পাশাপাশি রয়েছে নিরাপত্তারক্ষীও। পাঠভবনের প্রধান শিক্ষিকা সান্ত্বনা রায় বলেন, ‘‘পুলিশের পরামর্শের আগে থেকেই আমাদের স্কুলে এ সবের ব্যবস্থা রয়েছে।’’ বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক (কলকাতা) স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘নিরাপত্তা অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু এ বিষয়ে সরকারের এগিয়ে আসা উচিত। স্কুলের তহবিলের টাকার পরিমাণ খুবই কম।’’ পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির প্রাক্তন সভাপতি দীপক দাস বলেন, ‘‘নিরাপত্তার বিষয়ে কোনও ভাবেই আপোস করা উচিত নয়। দ্রুত স্কুলগুলির এ বিষয়ে সদর্থক পদক্ষেপ করা উচিত।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement