মাস খানেক আগে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকের এক ছাত্রের যক্ষ্মা ধরা পড়ে। নীলরতন সরকার হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষায় রোগ নির্ণয় হয় ঠিকই, কিন্তু চিকিৎসা কোথায় হবে? এই টানাপড়েনে পেরিয়ে যায় কিছুটা সময়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা ছাত্রটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে কলকাতায় থাকতেন। হাসপাতাল জানায়, যেখানে তাঁর বাড়ি চিকিৎসা হবে সেখানেই। অথচ ওই জেলার মহকুমা হাসপাতাল জানায়, কলকাতার হাসপাতালে রোগ ধরা পড়েছে। অতএব চিকিৎসা সেখানেই হবে। অবশেষে বিডিও-র হস্তক্ষেপে বর্তমানে তাঁর জেলার হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন ওই পড়ুয়া এখন কিছুটা সুস্থ। চিকিৎসক বন্ধ না করা পর্যন্ত নিয়মিত ওষুধ নিয়ে যেতে হবে।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, যক্ষ্মার চিকিৎসায় সমস্যা এখানেই। সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা হওয়া সত্ত্বেও আক্রান্তদের বড় অংশ চিকিৎসা শেষ করেন না। ফলে এ দেশে অসংখ্য মানুষ আজও যক্ষ্মায় মারা যান। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এক ধরনের যক্ষ্মা দ্রুত সারে। অন্যটি একটু জটিল। সেটির চিকিৎসা প্রক্রিয়া দীর্ঘ ও খরচ সাপেক্ষ। চিকিৎসা বিজ্ঞানে যাকে বলা হয় মাল্টিড্রাগ রেসিস্ট্যান্ট টিউবারকুলোসিস।
গ্রামের পাশাপাশি শহরেও এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক। কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকাতে অসংখ্য মানুষ যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত। সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় কলকাতাকে ‘হাই রিস্ক অব টিবি’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৬-র রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতি মিনিটে ভারতে এক জন যক্ষ্মা রোগী মারা যান। সবাই এগিয়ে আসলে পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে পারে।
শনিবার যক্ষ্মা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয় শহরে। সেখানে চিকিৎসক সুস্মিতা রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘সাধারণ যক্ষ্মা রোগীর চিকিৎসা যে কোনও সরকারি হাসপাতালে হতে পারে। কিন্তু মাল্টিড্রাগ রেসিস্ট্যান্ট টিউবারকুলোসিস রোগীর চিকিৎসা নির্দিষ্ট হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে হওয়া জরুরি। কারণ নির্দিষ্ট চিকিৎসকের পক্ষেই এই ধরনের রোগীর হিসাব রাখা সুবিধাজনক। ফলে রোগের শেষ স্তর পর্যন্ত চিকিৎসা করানোয় নজরদারি করা সম্ভব।’’
চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, মুখ থেকে রক্ত বেরনো, কাশি ও ওজন কমা যক্ষ্মার উপসর্গ। সেগুলি বন্ধ হলেই রোগ সেরে গিয়েছে মনে করে চিকিৎসা বন্ধ করে দেন রোগী। কিন্তু অসম্পূর্ণ চিকিৎসায় রোগের জীবাণু ভয়াবহ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাঁরা জানান, যে কোনও প্রকার যক্ষ্মা সারিয়ে ফের স্বাভাবিক জীবনে ফেরা যায়। বিশেষজ্ঞদের একাংশ প্রশ্ন তুলছেন, জন্মের পরে শিশুদের যেসব রোগের প্রতিষেধক হিসাবে টিকাকরণ করা হয় তার মধ্যে যক্ষ্মা রোগও রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বহু শিশু কী ভাবে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হচ্ছে। তাই স্বাস্থ্যমন্ত্রকেও টিকাকরণের মান নিয়ে নতুন ভাবে ভাবার দরকার।
যক্ষ্মা রোগীদের নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধারদের কয়েক জন জানান, বেসরকারি হাসপাতাল এই রোগের চিকিৎসায় বিশেষ আগ্রহ দেখায় না। এর জন্য সরকারি হাসপাতালগুলিকে রোগীর বিপুল চাপ সামলাতে হয়। সে ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতালগুলিরও এগিয়ে আসা জরুরি। একই সঙ্গে রোগী মাঝপথে চিকিৎসা বন্ধ করছেন কি না তার নজরদারি করতে রোগীর সঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের নিয়মিত যোগাযোগ রাখা উচিত।