সাবধান: হেলমেট পরা নিয়ে বাইক আরোহীদের সচেতন করতে পথে নামল সেরিব্রাল পলসির শিকার কিশোর-কিশোরীরা। শনিবার, পার্ক সার্কাস সাত মাথার মোড়ে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
পার্ক সার্কাস মোড়ে শনিবার সকালে রাস্তার ধারে হুইল চেয়ারে বসে সেরিব্রাল পলসির শিকার এক দল কিশোর-কিশোরী। তাদের সামনে দিয়ে কমলা রঙের স্কুটি চালিয়ে সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউয়ের দিকে যাচ্ছিলেন স্থানীয় যুবক নইম আহমেদ। এক কিশোর তাঁর উদ্দেশে কিছুটা অস্পষ্ট ভাবেই চেঁচিয়ে বলল, ‘‘আঙ্কল হেলমেট কোথায়? টু হুইলার চালালে হেলমেট পরতেই হবে।’’ মিনিট খানেক পরে হেলমেট পরে মোটরসাইকেল চালিয়ে নিউ পার্ক স্ট্রিটের দিকে যাওয়া অন্য এক যুবকের উদ্দেশে হুইল চেয়ারে বসা অন্য এক কিশোরের মন্তব্য, ‘‘দাদা, হেলমেট পরলেই হবে না, হেলমেটের স্ট্র্যাপ বাঁধতে হবে ঠিক করে।’’
সৌজন্যে, ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সেরিব্রাল পলসি’ ও কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগ। শনিবার সকালে ঘণ্টা দুয়েক ধরে ওই সংগঠনের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা এই ভাবেই সচেতন করলেন পার্ক সার্কাস এলাকার মোটরসাইকেল আরোহীদের। বেপরোয়া মোটরবাইক চলাচলের জেরে ইতিমধ্যেই বহু দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়েছে শহরের রাজপথ থেকে অলিগলি।
তারাতলার ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে জিজা ঘোষ ও সায়মদেব মুখোপাধ্যায় জানান, ২০১৪-২০১৫ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম বা নিহতদের অনেকেরই মাথায় হেলমেট থাকে না। আরোহীরা যদিও বা হেলমেট পরেন, তার স্ট্র্যাপ বাঁধেন না। ফলে দুর্ঘটনার সময়ে মাথা থেকে সহজেই ছিটকে পড়ে যায় হেলমেট। গুরুতর চোট লাগে মাথায়। রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়।
এই ধরনের দুর্ঘটনা যাতে এড়ানো যায়, তার জন্য নাগরিকদের সচেতনতা বাড়াতে কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন সায়মদেবরা। দু’পক্ষ সিদ্ধান্ত নেয়, প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়াদের দিয়ে কয়েক দফায় সচেতন করার চেষ্টা হবে কলকাতার মোটরবাইক আরোহীদের। প্রথম দফায় এই কাজের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল পার্ক সার্কাস সাত মাথার মোড়।
ট্র্যাফিক পুলিশ জানায়, এর পরে আগামী ১৪ অক্টোবর খিদিরপুরে, ১১ নভেম্বর টালিগঞ্জে ও ৯ ডিসেম্বর রাজাবাজার বা শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে এ দিনের মতো প্রচার চালানো হবে। এ দিন হেলমেট না পরার জন্য কাউকে জরিমানা করা না হলেও পরবর্তী কালে তা-ও করা হবে বলে জানিয়েছেন ট্র্যাফিক বিভাগের এক কর্তা।
প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গিয়েছে, এমন সচেতনতা শিবির হাওড়াতেও খোলা হবে। যাতে দিকে দিকে মোটরবাইকচালক এবং আরোহীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া যায় এ নিয়ে সচেতনতা।