ঘরের ছেলের বেটনের তালে সুরের জোয়ার চেক শিল্পীদের

এ দেশের বিভিন্ন শহরে কনসার্টের পরে চেক ফিলহারমনিক অর্কেস্ট্রার ‘কন্ডাক্টর’ কলকাতার প্রেক্ষাগৃহকেই সেরার শংসাপত্র দিলেন। বললেন, ‘‘যা দেখলাম, কলামন্দিরের অ্যাকাউস্টিক সিস্টেমই (ধ্বনি আবহ) এগিয়ে!’’

Advertisement

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৫২
Share:

মূর্ছনা: চলছে চেক ফিলহারমনিক অর্কেস্ট্রা। শুক্রবার, কলা মন্দিরে। ছবি: সুমন বল্লভ।

দিল্লির সিরিফোর্ট অডিটোরিয়াম, মুম্বইয়ের এনসিপিএ-র টাটা থিয়েটার বা গোয়ার কলা অ্যাকাডেমির থেকে কলকাতার কলামন্দিরকেই এগিয়ে রাখলেন তিনি।

Advertisement

এ দেশের বিভিন্ন শহরে কনসার্টের পরে চেক ফিলহারমনিক অর্কেস্ট্রার ‘কন্ডাক্টর’ কলকাতার প্রেক্ষাগৃহকেই সেরার শংসাপত্র দিলেন। বললেন, ‘‘যা দেখলাম, কলামন্দিরের অ্যাকাউস্টিক সিস্টেমই (ধ্বনি আবহ) এগিয়ে!’’

তিনি দেবাশিস চৌধুরী। এ শহরেরই ভূমিপুত্র! আবার দু’দশক ধরে চেক প্রজাতন্ত্রের বাসিন্দা দেবাশিস, মার্টিনু চেক ফিলহারমনিক অর্কেস্ট্রা-র কাপ্তেনও বটে।

Advertisement

এই মুগ্ধতায় কিন্তু ঘরের ছেলের পক্ষপাত নেই। শুক্রবার বিকেলে মহড়া সেরেই দেবাশিস দেখালেন, মঞ্চের সামনে খানিক নিচু একটা স্তরে (পিট) অর্কেস্ট্রার পিয়ানো বসছে! তাঁর ব্যাখ্যা, এর ফলে একটা অনুরণন তৈরি হচ্ছে। মঞ্চে অর্কেস্ট্রার পিছনের সারিতে ফ্রেঞ্চ হর্ন, ট্রাম্পিট, ট্রম্বো, টিউবার শিল্পীরা সব সময়ে পিয়ানোর শব্দ শুনতে পান না। অগত্যা, কন্ডাক্টরের বেটনের নির্দেশটাই ভরসা। দেবাশিস বলছিলেন, ‘‘এ বার পিয়ানোর সঙ্গে বাকিদের সংলাপটা আরও জমছে।’’

সন্ধ্যায় দেখা গেল, চল্লিশোর্ধ্ব অনুচ্চ মেদুর অবয়বের বঙ্গযুবার হাতের ওঠা-নামায় অর্কেস্ট্রায় বাজছে, ‘জনগণ-মন-অধিনায়ক’ এবং চেক প্রজাতন্ত্রের জাতীয় সঙ্গীত। সেই মুহূর্তে একসঙ্গে অনেকগুলো হয়ে ওঠা ছড়িয়ে পড়ল প্রেক্ষাগৃহে। ভারত ও চেক প্রজাতন্ত্রের কূটনৈতিক মিতালির ৭০ বছর উদ্‌যাপনের সন্ধ্যা! রসিকজনের দরবারে বিশ্বমানের সাঙ্গীতিক ভোজ আয়োজনে অভ্যস্ত শতাব্দী-প্রাচীন ক্যালকাটা স্কুল অব মিউজিক-এর আর একটি সার্থকতার সন্ধ্যা! এবং একদা সেন্ট জেমস স্কুলের অর্কেস্ট্রা কিংবা ক্যালকাটা স্কুল অব মিউজিক-এর চেম্বার অর্কেস্ট্রার কন্ডাক্টর দেবাশিসের গৌরবময় ‘হয়ে ওঠা’র মেজাজও তখন ছড়িয়ে পড়ছে।

দু’বছর আগেই তিনি অবশ্য কলকাতার এই মিউজিক স্কুলের শতবর্ষের অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। দীর্ঘ ৬০ বছর বাদে সে বার চেক ফিলহারমনিক অর্কেস্ট্রার স্বাদ পেয়েছিল কলকাতা। শহরের খুদেদের জন্য বিশ্বমানের সঙ্গীত আয়োজনে দায়বদ্ধতার কথা বলছিলেন সংগঠক প্রতিষ্ঠানের সভাপতি জ্যোতিষ্ক দাশগুপ্ত। তাদের শতবর্ষ স্মারক গ্রন্থের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করলেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী।

দেবাশিসের তালে তালে আসর মাতালেন ৬০ জন চেক শিল্পী। ক্যালকাটা স্কুল অব মিউজিক-এর চার জন শিল্পীও যোগ দিয়েছিলেন। সদ্য বিশ্ব বঙ্গ শিল্প সম্মেলনের আবেশে এখন মজে আছেন চেক রাষ্ট্রদূত মিলান হোভরকা। ‘টেগোরের শহরে’ ভারত ও চেক শিল্পীদের মিশে যাওয়ায় তিনিও উচ্ছ্বসিত।

অর্কেস্ট্রার সোলোইস্ট ইয়ানা চৌধুরী আবার ‘কলকাতার বৌমা’! ভায়োলিন, চেলো, ফ্লুট, ওবো, টিউবা, টিম্পানি, বাস ড্রামদের পুরোভাগে লাল জমকালো শাড়িতে পিয়ানোয় বসেছিলেন দেবাশিসের স্ত্রী ইয়ানা। অর্কেস্ট্রার কন্ডাক্টর হাসলেন, ‘‘ইউরোপেও ও এখন শাড়িতেই মঞ্চে আসে! শাড়িই ওর ট্রেডমার্ক!’’

এত চেনা লোকের মধ্যে অনুষ্ঠান সচরাচর করা হয় না দেবাশিসের। শুরুর আগে দেশের ধানি লঙ্কা ও সন্দেশের জন্য একটু দুঃখও উথলে উঠল। অনুষ্ঠান শেষের টুকরো উপস্থাপনাটিতে চেক শিল্পীরা বাজালেন, ‘সকল দেশের রানি সে যে আমার জন্মভূমি!’ এক ঘরের ছেলের কুর্নিশও সেই সুরে মিশে গেল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন