Indian Museum

Indian Museum: ঈশানদের জন্য ছুটির দিনেও খুলছে জাদুঘর

শুধু এক দিন নয়। এ বার থেকে প্রতি সোমবার বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য খোলা রাখা হবে জাদুঘর।

Advertisement

দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:২১
Share:

উদ্যোগ: ভারতীয় জাদুঘরের গ্যালারিতে বসে আঁকছে অটিস্টিক এক কিশোর। নিজস্ব চিত্র।

ভারতীয় জাদুঘরের বেঙ্গল আর্ট গ্যালারিতে নেই কোনও দর্শক। সেখানেই অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবির সামনে বসে একমনে ছবি এঁকে চলেছে অভিষেক। গ্যালারিতেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসে রং-পেনসিলের দুনিয়ায় মগ্ন সপ্তম শ্রেণির ঈশান আর বছর উনিশের শুভ্রনীল। নেই ভিড়ভাট্টা, নেই অকারণ শব্দ। বিরক্ত করারও কেউ নেই। কারণ, সোমবার সাধারণ দর্শকদের জন্য বন্ধ থাকে জাদুঘর। তবে দরজা খোলা শুধু ঈশান-অভিষেকদের মতো বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য।

Advertisement

শুধু এক দিন নয়। এ বার থেকে প্রতি সোমবার বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য খোলা রাখা হবে জাদুঘর। সদর স্ট্রিট বা কিড স্ট্রিট সংলগ্ন জাদুঘরের প্রবেশপথ দিয়ে ঢুকে তাঁরা ঘুরে দেখতে পারবেন চিত্রশিল্প, বয়নশিল্প-সহ তিনটি গ্যালারি। পাশাপাশি, গ্যালারিতে বসে একান্তে ছবিও আঁকতে পারবেন তাঁরা।

জাদুঘরের কলা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অর্ণব বসু জানান, সেখানে প্রতিদিনের ভিড়ে, অচেনা শব্দে, বিভিন্ন মানুষের নানাবিধ আচরণে সমস্যা হয় অটিজ়ম রয়েছে এমন মানুষদের। তাই তাঁদের পাশে দাঁড়াতেই এই উদ্যোগ।

Advertisement

আর্ট থেরাপিস্ট ও সমাজকর্মী শম্পা সেনগুপ্তের কথায়, ‘‘ইনক্লুশনের পথে খুব গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করেছেন জাদুঘর কর্তৃপক্ষ। এটা দেখে বাকি প্রতিষ্ঠানগুলিও অনুপ্রাণিত হবে।’’ তিনি জানান, বাড়ির চেনা পরিবেশও এক সময়ে শুভ্রনীলদের মতো মানুষদের কাছে বিরক্তিকর হয়ে ওঠে। তাই জাদুঘরের গ্যালারিতে একসঙ্গে এত ছবি-মূর্তি দেখে অনুপ্রেরণা পায় ওরা। ছবি দেখে আঁকার চেষ্টা করে। তাই ওদের এমন পরিবেশ দিতে পারাটা খুব দরকার।

শুভ্রনীলের মা, পেশায় চিকিৎসক জ্যোতিশুভ্রা দাস বলেন, ‘‘ছেলে প্রায়ই বাইরে, রাস্তায় বসে ছবি আঁকে। সেখানে আবর্জনা, ভিড়, শব্দে ওর অসুবিধাই হয়। এমন একটা সুন্দর জায়গায় বসে আঁকতে পারছে, এটাই বড় ব্যাপার। আমাদের ছেলেমেয়েরা যারা ছবি আঁকতে ভালবাসে, তাদের জন্য এটা একটা বড় সুযোগ।’’

অর্ণববাবু বলেন, ‘‘নানা সমস্যার জন্য বহু বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিল্পীই জাদুঘরে এসে ছবি দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকেন। তাই তাঁদের সমস্যা ও চাহিদা বুঝে শান্তিতে ছবি দেখা, ছবি বোঝা এবং আঁকার সুযোগ করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আরও কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা-ও বোঝার চেষ্টা করছি।’’ সম্প্রতি দৃষ্টিহীনদের জন্যেও আর্ট গ্যালারির কিছু ছবিকে সেরামিক এবং অন্য মাধ্যমে তৈরি করে তা ছুঁয়ে দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

জাদুঘরের ডিরেক্টর অরিজিৎ দত্ত চৌধুরী বলেন, ‘‘জাদুঘরকে আরও ইনক্লুসিভ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আপাতত আর্ট গ্যালারিতে এই ব্যবস্থা হয়েছে। আর কী কী ব্যবস্থা নিলে জাদুঘরকে বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের উপযুক্ত করা যায়, তা-ও বোঝার চেষ্টা করছি। এর পরে ওদের জন্য পুরাতত্ত্ব বিভাগের দরজাও খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।’’

আর জাদুঘর ঘুরে দেখে কী বলছে ঈশান-অভিষেকরা? ঈশানের কথায়, ‘‘খুব ভাল লেগেছে আজ। আমাকে তো আবার এখানে আসতে হবে। আজ দুর্গা মূর্তির অর্ধেকটা এঁকেছি। পরের দিন এসে বাকিটা শেষ করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন