গলায় ফাঁসের আগে মাথায় মারণ আঘাত

এ ছাড়াও তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, শিপ্রাদেবীর আলমারিতে থরে থরে ১০ টাকার বান্ডিল ও কিছু ২০০০ টাকার নোটে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা পাওয়া গিয়েছে।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৭ ০৯:১০
Share:

অভিযুক্ত কাবেরী ভট্টাচার্য। নিজস্ব চিত্র

মাকে খুন করার পরে ঠান্ডা মাথায় আত্মহত্যার দৃশ্য সাজিয়েছিলেন মেয়ে ও জামাই। পর্ণশ্রীতে শিপ্রা ভট্টাচার্যের খুনের তদন্তে নেমে এমনটাই জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। শনিবার সকালে ফকিরপাড়ার বাড়ি থেকে শিপ্রাদেবীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। মৃত্যুর কারণ হিসেবে গত দু’দিন প্রাথমিক ভাবে গলায় ফাঁেসর কথা বলা হলেও সোমবার পুলিশ জানায়, ময়না-তদন্তে শিপ্রাদেবীর বাঁ কানের পাশে ভারী বস্তু দিয়ে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, শুধু শ্বাসরোধ নয়, মস্তিকের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণই বৃদ্ধার মৃত্যুর কারণ হিসেবে ধরা পড়েছে ময়না-তদন্তে। কানের ওই আঘাতের ক্ষেত্রে বাইরে রক্তক্ষরণ কম হলেও ভিতরে প্রচুর রক্তক্ষণ হয় বলেও জানান তদন্তকারীরা। এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, শিপ্রাদেবীর দেহটি উপুড় হয়ে পড়ে ছিল। গলায় নরম সুতির দড়ি পেঁচানো থাকলেও তার কোনও জোরালো দাগ ছিল না। ঘরের সিলিং ফ্যানেও কোনও দাগ মেলেনি। লুঠপাটের চিহ্ন ছিল না। তবে জানলার পাশে মিলেছে ইতস্তত রক্তের ছাপ। রবিবারই এই ঘটনায় বৃদ্ধার মেয়ে কাবেরী ও জামাই অনুপম ভট্টাচার্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এ ছাড়াও তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, শিপ্রাদেবীর আলমারিতে থরে থরে ১০ টাকার বান্ডিল ও কিছু ২০০০ টাকার নোটে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা পাওয়া গিয়েছে। ঘরের আরও নানা জায়গা থেকে লুকিয়ে রাখা খুচরো টাকা মিলেছে। মিলেছে চার-পাঁচটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের পাশবই। সব মিলিয়ে অ্যাকাউন্টে রয়েছে প্রায় পাঁচ-ছ’লক্ষ টাকা।

Advertisement

তদন্তকারীরা জানান, মৃতার ঘরে স্কুলের খাতা থেকে ছেঁড়া পাতায় লেখা একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়। তাতে লেখা, ‘‘আমি ব্যক্তিগত কারণে আত্মহত্যা করেছি। আমার মেয়ে ও জামাইকে বিরক্ত করবেন না।’’ একই কথা নীল কালিতে দু’বার লেখা হয়েছিল। কিন্তু ওই রকম কোনও খাতা শিপ্রাদেবীর ঘরে পাওয়া যায়নি। সে দিন স্থানীয় এক রিকশাওয়ালাকে ডেকে এনে শাবল দিয়ে ঘরের দরজা ভাঙতে বলেন কাবেরী। কাবেরীর প্রাথমিক বয়ান ছিল, ‘‘জানলা দিয়ে দেখেছিলাম মা উপুড় হয়ে পড়ে। তাই রিকশাওয়ালাকে ডাকি। কিন্তু তদন্তকারীদের দাবি, যে জানলার কথা কাবেরী বলেছিলেন সেটি দিয়ে ঘরের ভিতরে শিপ্রাদেবীর দেহ যেখানে পড়েছিলেন, ওই জায়গা দেখা যায় না। জানলার পাশেই একটি আলমারি, তার পিছনে শিপ্রাদেবীর দেহটি পড়েছিল।

পুলিশের দাবি, ওই রিকশাওয়ালা জানান, ‘আমাকে দিদি শুধু দরজা ভাঙতে বলেছিলেন।’ তদন্তকারীরা জানান, একতলার দু’টি ঘরে তিনটি দরজা রয়েছে। সামনের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে পিছনের দরজা দিয়ে অনায়াসে বেরিয়ে যাওয়া যায়। এমনকী শিপ্রাদেবীর ঘরে সুগারের ওষুধ, ঘুমের ওষুধ, আধখাওয়া চায়ের কাপ সবই স্বাভাবিক অবস্থায় মেলে। ধস্তাধস্তির চিহ্নও ছিল না। এর পরেই পুলিশ নিশ্চিত হয়, শিপ্রাদেবীর মৃত্যুর ঘটনায় বাইরের কারও হাত নেই।

পুলিশ জেনেছে, বাড়ি নিজেদের নামে লিখে দেওয়া এবং শিপ্রাদেবীর পেনশনের টাকা নেওয়া নিয়ে মাঝে মধ্যেই বৃদ্ধাকে তাঁর মেয়ে জামাই মারধর করতেন। পুলিশের দাবি, টানা জেরার মুখে ওই দম্পতি স্বীকার করে নেন শনিবার শিপ্রাদেবীকে মারধর করার সময়ে বেকায়দায় মাথায় চোট লেগে মৃত্যু হয় তাঁর। এর পরেই বিষয়টিকে আত্মহত্যা বলে চালানোর জন্য একের পর এক তথ্য পরপর সাজান কাবেরী ও অনুপম। কিন্তু ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সন্দেহ হয় তদন্তকারীদের। কাবেরী ও অনুপমকে ক্রমাগত চাপ দেওয়া হতে থাকে। চাপের মুখে মাকে খুন করার পরে ছেলের স্কুলের খাতার পাতা ছিঁড়ে নিজেরাই সুইসাইড নোট লিখেছিলেন বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন