নিত্য দিনের বিভ্রাটের কারণ খুঁজতে একটি বিশেষ মেট্রো রেক (ইনস্পেকশন ক্যারেজ) নিয়ে বেরিয়েছিলেন খোদ জেনারেল ম্যানেজার রাধে শ্যাম। কিন্তু মেট্রোর অবস্থা এতই শোচনীয় যে, সেই রেকটিও খারাপ হয়ে মাঝপথে আটকে গেল। আর দুর্ভোগে পড়লেন যাত্রীরা।
রবিবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে রবীন্দ্র সরোবর স্টেশনে। রেকটিতে অবশ্য তখন জেনারেল ম্যানেজার ছিলেন না। ছিলেন চিফ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার-সহ অনেক আধিকারিকই। বিভিন্ন স্টেশন পরিদর্শন করে জেনারেল ম্যানেজার নেমে যাওয়ার পরে রেকটিকে যখন নোয়াপাড়া কারশেডে পাঠানো হচ্ছিল, তখনই ঘটে এই বিপত্তি। মেট্রো সূত্রের খবর, মাঝপথে লাইন জুড়ে রেকটি আটকে থাকায় পিছনের সমস্ত ট্রেন বিভিন্ন স্টেশনে আটকে পড়ে। ফলে সব মিলিয়ে দীর্ঘক্ষণ মেট্রো চলাচল বিপর্যস্ত হয়। পরে ট্রেনটি যাত্রা শুরু করলেও ফের আটকে যায় বেলগাছিয়া স্টেশনে।
মেট্রো সূত্রের খবর, এ দিন সকালে জেনারেল ম্যানেজার রাধে শ্যাম মেট্রোর কাজকর্ম এবং ট্রেন চলাচল ব্যবস্থা পরিদর্শন করতে একটি বিশেষ রেক নিয়ে বেরোন। ঘোরাঘুরি করে তিনি ফিরে যান দুপুরে। তার পরে ওই রেকটিকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় কবি সুভাষ স্টেশনে। বিকেলে ট্রেনটিকে যখন নোয়াপাড়া কারশেডে ফেরত পাঠানো হচ্ছিল, তখনই সেটি খারাপ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে রবীন্দ্র সরোবরে। পরে ঠিক করে ফের পাঠানোর সময়ে বেলগাছিয়া স্টেশনে আটকে যায় সেটি।
মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, “এই ঘটনার জেরে এ দিন বিকেল ৪-৩২ থেকে ৫-৫ মিনিট পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত হয়েছে। তখন দমদম থেকে ময়দান এবং কবি সুভাষ থেকে মহানায়ক উত্তমকুমার পর্যন্ত শাট্ল সার্ভিস চালানো হয়েছে।”
কী কারণে মেট্রো বন্ধ হয়েছে, এই খবর রটে যাওয়ার পরেই যাত্রীরা প্রশ্ন তুলেছেন, কেন তড়িঘড়ি ওই খালি রেকটিকে বাণিজ্যিক সময়ে কারশেডে পাঠানোর চেষ্টা করা হল? তাঁদের বক্তব্য, রেকটিকে অনায়াসে রাতের শেষ ট্রেনের পরে নোয়াপাড়া কারশেডে পাঠানো যেত। তা হলে এই দুর্ভোগ হত না। মেট্রোর তরফে অবশ্য এই প্রশ্নের কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।
কলকাতা মেট্রোর রেকগুলি যে মৃত্যুশয্যায়, এ দিনের ঘটনায় তা আরও একবার স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। কারণ, সাধারণত জেনারেল ম্যানেজার যে ট্রেনে (ইনস্পেকশন ক্যারেজ) যান, সেই ট্রেনটি ঠিক রাখা হয়। যাতে কোনও দরকার হলেই ট্রেনটি ছুটতে পারে। কিন্তু এ দিন দেখা গেল, সেই ট্রেনটিও রুগ্ণ হয়ে পড়েছে। আর রক্ষণাবেক্ষণের হালও এতই খারাপ যে মাঝপথে আটকে গেল জেনারেল ম্যানেজারের রেকটিও। এই ঘটনার পরে যাত্রীরা বলতে শুরু করেছেন, খোদ জেনারেল ম্যানেজারের ট্রেনই যদি মাঝপথে আটকে পড়ে, তা হলে সাধারণ যাত্রীদের ট্রেনের হাল যে কী, তা জলের মতো পরিষ্কার।
কিন্তু এই অবস্থার মধ্যেই যাত্রীদের চাপে আগামী রবিবার ৫ এপ্রিল থেকে সারা দিন ১৫ মিনিট অন্তর মেট্রো চলবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক। তিনি বলেন, “রবিবার তো বটেই, এখন থেকে শনিবারও অনেক বেশি ট্রেন চালানো হবে।”