মনোযোগ: বেনিয়াপুকুরের একটি পাঠাগারে পাঠকের ভিড়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পর এ বার সরকারি ক্ষেত্রে টিকে থাকার লড়াইয়ে নাম লেখাতে চলেছে গ্রন্থাগারগুলিও।
বস্তুত, শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকারি পরিষেবার মান কমে যাওয়া এবং সেই সঙ্গেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির মাথাচাড়া দেওয়ার ঘটনা নিয়ে বেশ অনেক দিন ধরেই চিন্তিত শিক্ষা মহল। এ বার সেই চিন্তার তালিকায় ঢুকে পড়ল গ্রন্থাগারও। তথ্য বলছে, শহর ও শহরতলির বহু সরকারি গ্রন্থাগার ধুঁকছে পরিকাঠামো ও কর্মীর অভাবে। আর সেই সুযোগেই বেসরকারি গ্রন্থাগারগুলির জনপ্রিয়তা বাড়ছে। গ্রন্থাগার কর্তারা বলছেন, সমস্যার সমাধানে সরকারি গ্রন্থাগারগুলিতে দ্রুত কর্মী নিয়োগ প্রয়োজন। প্রয়োজন গ্রন্থাগারগুলিকে শুধু বই পড়ার ঘর বানিয়ে না রেখে, আধুনিক সুযোগ-সুবিধায় সজ্জিত করা।
বেশ কয়েক বছর ধরেই শহর থেকে জেলা সর্বত্রই জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে গ্রন্থাগার। প্রযুক্তির দাপটে এবং সহজলভ্যতায় হু হু করে কমছে বই-পাঠকের সংখ্যা। তাই হারানো গৌরব ফিরে পেতে এ বার উদ্যোগী রাজ্য সরকার। তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন জনসাধারণের গ্রন্থাগার ও কর্মী কল্যাণ সমিতির প্রধান উপদেষ্টা মনোজ চক্রবর্তী জানান, স্রোতের উল্টো দিকে লড়াই করেও বেশ এগিয়ে রয়েছে কলকাতার বেনিয়াপুকুর লাইব্রেরি অ্যান্ড রিডিং ক্লাব, দক্ষিণ ২৪ পরগনার উস্তির পাফা পল্লী উন্নয়ন পাঠাগার এবং কুলপির সবুজ সংঘ। এগুলিতে রোজ বাড়ছে নিত্য নতুন সুবিধা, বাড়ছে পাঠকের সংখ্যা। অথচ সরকারি পাঠাগারগুলির কর্মী যেমন কমছে, তেমনই আশঙ্কাজনক ভাবেই হারিয়ে যাচ্ছেন পাঠকেরা।
কিন্তু পাঠক-আকালের মধ্যেও কী কারণে তুলনামূলক ভাবে জনপ্রিয়তা বাড়ছে বেসরকারি গ্রন্থাগারগুলির?
কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, সরকারি গ্রন্থাগারে বই পড়াকেই প্রধান গুরুত্ব দেওয়া হয়। অন্যান্য আধুনিক সুবিধা প্রায় কিছুই থাকে না। যদিও সম্প্রতি গ্রন্থাগারের চরিত্র বদলের চেষ্টা চলছে মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর আমলে। সমস্ত চাকরির তথ্য কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে পাঠাগারগুলিকে।
বেসরকারি পাঠাগারগুলি কিন্তু অনেক দিন আগে থেকেই অন্য রকম ভাবে ভাবতে শুরু করেছে। যেমন বেনিয়াপুকুরের গ্রন্থাগারে বই পড়ার পাশাপাশি যোগ ব্যায়াম, কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া নাচ এবং আঁকা শেখানো হয়। ফলে ক্রমশই বাড়ছে পাঠকের সংখ্যা। গ্রন্থাগারের সদস্য না হলেও এক বছরের জন্য পাঠ্যবই দেওয়া হয় এলাকার পড়ুয়াদের। গরীব পড়ুয়াদের চাহিদা মতো বিনামূল্যে বই দেওয়া হয়। এত রকম সুবিধার কারণে খুব স্বাভাবিক ভাবেই ভিড় বাড়ছে এই গ্রন্থাগারগুলিতে।
তবে গ্রন্থাগার দফতর সূত্রের খবর, সরকারি পাঠাগারের পাশাপাশি বেসরকারি গ্রন্থাগারগুলিকে ভাল ভাবে গড়ে তোলার জন্যও সরকারি ভাবে অর্থ সাহায্য করা হয়। তাই প্রতিযোগিতা হলেও সেটা স্বাস্থ্যকর। দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘সরকারি গ্রন্থাগারগুলির চরিত্র দ্রুত বদলানো হচ্ছে। সেই ফল হাতে পাবেন সকলেই। তাই এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ নেই।’’